২০২১-২২ মৌসুম শেষে আর্লিং হল্যান্ডের বুরুশিয়া ডর্টমুন্ড ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিতই ছিল। তাকে দলে নেওয়ার দৌড়ে ছিল ম্যানচেস্টার সিটি, রিয়াল মাদ্রিদ এবং বায়ার্ন মিউনিখ। আরও অনেক দলের নাম শোনা গেলেও-এ তিন দলই ছিল মূল লড়াইয়ে। শেষ পর্যন্ত হয়তো তাকে দলে নেওয়ার মিশনে সফল হতে যাচ্ছে সিটিজেনরাই। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২২-২৩ মৌসুম থেকে তাকে দেখা যাবে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের মঞ্চে।
২০১৮-১৯ মৌসুমে ইউরোপিয়ান ফুটবলের মধ্যবর্তী দল-বদলের অস্ট্রিয়ান ক্লাব আরবি সলসবুর্গ থেকে জার্মান ক্লাব বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডে আসেন আর্লিং হল্যান্ড। সেই সময় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবং জুভেন্টাস তাকে দলের পাওয়ার লড়াইয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত জার্মান ক্লাবটিকেই বেছে নেন হল্যান্ড। মুলত ওই সময় ম্যানইউ এবং জুভেন্টাস তাকে রিলিজ ক্লজ দিতে চায়নি। এই কারণেই বুরুশিয়াতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন হল্যান্ড। আর এতে তার নামে পাশে যুক্ত হয় ৭০ মিলিয়ন ইউরো রিলিজ ক্লজ।
এর আগে অস্ট্রিয়ান ক্লাব আরবি সলসবুর্গের হয়ে নজরকাড়া ছন্দে আর্লিং হল্যান্ড। দলটির হয়ে মাত্র ১৬ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। সেই সময়ই তিনি জানান দেন, হতে যাচ্ছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা ‘নাম্বার নাইন’। অস্ট্রিয়ায় মুগ্ধতা ছড়িয়ে আসেন জার্মানিতে।
অবশ্য জার্মান ক্লাবটি হল্যান্ডকে খুব বেশিদিন নিজেদের কাছে রাখার উদ্দেশ্যেও নিয়ে আসেনি। তারা হল্যান্ডকে তৈরি করে অন্য কোনো দলের কাছে বেঁচে দেওয়ার জন্যই নিয়েছিল। তাই তো এই টিনেজারের নামের পাশে লাগিয়ে দিয়েছিল ৭০ মিলিয়ন ইউরোর প্রাইস ট্যাগ। আর ঠিক এই দামেই বুরুশিয়া থেকে ম্যানচেস্টার সিটি হয়েছে হল্যান্ডের গন্তব্য।
আরবি সলসবুর্গে খেলার সময় উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে পারফর্ম করে পুরো আলো নিজের দিকে টেনে নিয়েছিলেন। সলসবুর্গের হয়ে নিজের অভিষেক ম্যাচেই করেন হ্যাটট্রিক। পরের দুই ম্যাচে তার পা থেকে আসে আরও তিন গোল। প্রথম তিন ম্যাচে গোল করে দুইটি রেকর্ডও করেন হল্যান্ড।
প্রথম ফুটবলার হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপপর্বে ছয় গোলের রেকর্ড করেন। এছাড়াও করিম বেনজেমার পর দ্বিতীয় ফুটবলার হিসেবে নিজের প্রথম তিন ম্যাচেই গোল করার রেকর্ডও করেন তিনি।
সলসবুর্গের হয়ে এই ফর্মই তার দিকে পুরো বিশ্বের নজর বাধ্য যেতে হয়েছিল। সেই সময় দল-বদলের বাজারে তাকে নিয়ে কেউ সেই রকম ভাবে আগ্রহ প্রকাশ না করায় সহজেই দলে নিতে পেরেছিল বুরুশিয়া।
সলসবুর্গের সেই ফর্ম ধরে রেখেছিলেন বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডের হলুদ জার্সিতে। জার্মান ক্লাবটির হয়ে একমাত্র ডিএফবি পোকাল কাপ ছাড়া অন্য কোনো শিরোপা জিততে পারেননি। তবুও থেমে থাকেনি তার গোল ক্ষুধা। প্রায় প্রতি ম্যাচেই তার পা থেকে এসেছিল গোল।
কিন্তু কিছু ভুল সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন হল্যান্ড। বয়স কম হওয়ায় অতিরিক্ত ম্যাচ খেলার চাপ তাকে ইনজুরিতে পড়তে হয়েছিল। আড়াই বছরের বুরুশিয়া ক্যারিয়ারে বেশ কয়েকবারই ইনজুরির কারণে হল্যান্ডকে থাকতে হয়েছে মাঠের বাইরে। তবুও ডর্টমুন্ডের জার্সিতে ৮৮ ম্যাচে তার পা থেকে এসেছে ৮৫ গোল। এই সময়ে সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন ২৩ গোলও।
নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে রেকর্ড বইয়েও নিজের একটি আলাদা জায়গা তৈরি করে নিয়েছেন হল্যান্ড। সবচেয়ে কম বয়সী ফুটবলার হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগে ২০ গোলের রেকর্ড তার দখলে। এছাড়াও টুর্নামেন্টে কনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে টানা পাঁচ ম্যাচে গোলের রেকর্ডও করেছেন তিনি। বুন্দেসলিগার রেকর্ডেও আছে তার নাম। সবচেয়ে দ্রুততম এবং কমবয়সী হিসেবে করেছেন ৫০ গোল।
বুরুশিয়ায় মুগ্ধতা ছড়ানোর পর হল্যান্ডের সামনে চ্যালেঞ্জ ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার। এছাড়াও তার সম্ভাব্য দল ম্যানসিটির হয়ে কেমন খেলবেন সেই দিকেও নজর রাখবে পুরো বিশ্ব। হয়তো বরাবরের মতো এখানেও ছন্দের ধারাবাহিকতাই দেখাবেন হল্যান্ড।
ম্যানসিটিতে স্ট্রাইকার হিসেবে আছেন গ্যাব্রিয়েল জেসুস এবং জ্যাক গ্রিলিশ। জেসুসের অধারাবাহিকতা আর গ্রিলিশের মানিয়ে নিতে না পারায় সিটিজেনদের নজর হল্যান্ডের দিকে। এখন এই প্রতিষ্ঠিত এই দুই স্ট্রাইকারকে সরিয়ে নিজেকে কতটুকু মানিয়ে নিতে পারবেন হল্যান্ড, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে পাঁচ বছরের চুক্তিতে ম্যানচেস্টার সিটিতে নাম লেখাবেন আর্লিং হল্যান্ড। ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত ক্লাবটির সাথে চুক্তি করতে যাচ্ছেন ২১ বছর বয়সী হল্যান্ড। এই সময়ে তার বেতন হবে প্রতি সপ্তাহে ৩ লাখ ৭৫ হাজার ইউরো। এছাড়াও সাথে থাকবে পারফর্মেন্স আর ট্রফি জয়ের বোনাস।
স্পোর্টসমেইল২৪/পিপিআর