স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের বিদায়ের পরেই ব্যর্থতার চোরাবালিতে আটকে পড়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। হাজারো চেষ্টার পর সেই ব্যর্থতার চোরাবালি থেকে বের হতে পারেননি। মাঝে দুই-একবার আশার আলো দেখালেও ওই ব্যর্থতার গন্ডিতেই আটকে আছে। উল্টো ফার্গুসনের বিদায়ের পর সবচেয়ে বাজে মৌসুম কাটালো রেড ডেভিলরা। ২০২১-২২ মৌসুমে শীর্ষ চারে থাকার লক্ষ্য নিয়ে শুরু করা ইউনাইটেড শেষ পর্যন্ত টেবিলের সেরা সাতে থাকতে পারবে কি-না তা নিয়েই জেগেছে শঙ্কা!
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ২০২১-২২ মৌসুমে ৩৭ ম্যাচ খেলে ৫৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ৬ষ্ঠ স্থানে আছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। পুরো মৌসুম জুড়ে বিচ্ছিন্নভাবে পয়েন্ট হারানো ইউনাইটেডকে শেষ পাঁচ ম্যাচে খুঁজে পাওয়াটাই ছিল কঠিনতম কাজ।
প্রিমিয়ার লিগে নিজেদের শেষ পাঁচ ম্যাচের তিনটিতেই হেরেছে রেড ডেভিলরা। এর মধ্যে দুই ম্যাচে আবার ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছে। হার এড়ানো বাকি দুই ম্যাচের একটিতে চেলসির সাথে ১-১ গোলে ড্র আর বাকি ম্যাচে নরউইচ সিটিকে ৩-২ গোলে হারিয়েছিল।
মৌসুমে ৩৭ ম্যাচ খেলা ইউনাইটেডের জয় কেবলমাত্র ১৬ ম্যাচে। বিপরীতে ১০ ড্র আর ১১ হার। সাম্প্রতিক কালে ইউনাইটেড সবচেয়ে বাজে সময় কাটাচ্ছে এই পরিসংখ্যান দেখার পর বুঝতে বাকি থাকার কথা নয়! তাই বলে এতোটা খারাপ সময় যাবে, সেটা নিশ্চয় কোনো রেড ডেভিল সমর্থকেরই চাওয়া ছিল না।
২০২০-২১ মৌসুমে কোচ ওলে গানার সোলশারের অধীনে প্রিমিয়ার লিগে দ্বিতীয় স্থানে থেকে মৌসুম শেষ করেছিল। পুরো মৌসুমে দারুণ ছন্দে ছিলেন পর্তুগিজ মিডফিল্ডার ব্রুনো ফার্নান্দেজ। দলের আক্রমণভাগের সমস্যা সমাধানে দলে নিয়ে ভেড়ানো হয় আরেক পর্তুগিজ তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে!
রোনালদো-ব্রুনো ফার্নান্দেজ জুটি দারুণ কিছু করে দেখাবে, এটাই ছিল ইউনাইটেড সমর্থকদের স্বপ্ন। তবে রোনালদো তার ঝলক দেখাতে মরিয়া হয়ে থাকলেও, মাঠে ব্রুনোকে খুঁজে পাওয়াটাই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। রোনালদো-ব্রুনো জুটি ইউনাইটেড সমর্থকদের জন্য স্বপ্ন থেকে পরিণত হয়েছেন দুঃস্বপ্নে। তাতেই পরবর্তী মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ দূরে থাক, ইউরোপা লিগে জায়গা করে নিতে পারবে কি-না তা নিয়েই তৈরি হয়েছে শঙ্কা।
মৌসুমের শেষ ম্যাচে ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে মাঠে নামবে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। এই ম্যাচে স্বাগতিকদের বিপক্ষে জয়ই পারে ইউনাইটেডের ইউরোপা লিগে খেলা নিশ্চিত করা। কিন্তু কোনো কারণে পা হড়কালে চোখ রাখতে হবে ওয়েস্টহ্যাম ইউনাইটেড এবং উলভসের দিকে।
এই দু’দল লিগে বাকি থাকা নিজেদের শেষ তিন ম্যাচে জিতলে ধূলিসাৎ হতে পারে ইউনাইটেডের ইউরোপা লিগ খেলার স্বপ্ন। তখন হয়তো ইউনাইটেডকে খেলতে হতে পারে উয়েফার তৃতীয় শ্রেণির টুর্নামেন্ট কনফারেন্স লিগ!
২০১২-১৩ মৌসুমে ম্যানইউকে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জিতিয়ে অবসরে যান কোচ স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন। সেই সময় ফার্গির স্থলাভিষিক্ত হন তারই স্বদেশি ডেভিড ময়েস। কিন্তু দলকে সাফল্য এনে দিতে পারেননি। ফার্গুসন পরবর্তী প্রথম মৌসুমেই সপ্তম স্থানে থেকে লিগ শেষ করে রেড ডেভিলরা।
ডেভিড ময়েসের হাত ধরে ইউনাইটেডের এই নিচের নামার শুরু। পরের আট মৌসুমে মাত্র চারবার প্রিমিয়ার লিগের সেরা চারে থেকে লিগ শেষ করতে পেরেছিল দলটি। এমনকি প্রত্যেক মৌসুমেই ইউনাইটেডের চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলা নিয়ে তৈরি হয়েছিল শঙ্কা। এবার তো ইউরোপা লিগে না খেলতে পারার শঙ্কায় দিন গুনছে ক্লাবটি।
ফার্গুসন দায়িত্ব ছাড়ার পরের মৌসুমে অর্থাৎ ২০১৩-১৪ মৌসুমে সবচেয়ে কম পয়েন্ট পেয়েছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। সেবার তারা পেয়েছিল ৬৪ পয়েন্ট। তবে ২০২১-২২ মৌসুমে সর্বনিম্ন পয়েন্টের সেই লজ্জা পার করতে না পারা ব্যর্থতা চোখ রাঙাচ্ছে রেড ডেভিলদের। লিগে বাকি থাকা ম্যাচটি জিতলে তাদের পয়েন্ট ৬১-তে গিয়ে ঠেকবে। তাই তো সর্বনিম্ন পয়েন্টের রেকর্ডটা যে ইউনাইটেড নতুন করে লিখবে তা নিশ্চিত!
পয়েন্ট টেবিলে অবস্থান কিংবা খেলার ধরন, সব মিলিয়ে এটাই হতে যাচ্ছে ফার্গুসন পরবর্তী ইউনাইটেডের সবচেয়ে বাজে মৌসুম। এইভাবে চলতে থাকলে হয়তো নামের ভারে টিকে থাকা ইউনাইটেডকে একসময় নিয়মিত রেলিগেশন এড়াতে লড়াই করতে দেখা যেতে পারে!
ফার্গুসন পরবর্তী সময়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের দায়িত্ব সামলিয়েছেন সাত কোচ। অষ্টম কোচ হিসেবে ২০২২-২৩ মৌসুম থেকে রেড ডেভিলদের দায়িত্ব নিবেন এরিক টেন হ্যাগ। এই সময়ে ইউনাইটেড জিতেছিল মোটে তিন শিরোপা। ট্রফি কেসে যুক্ত হয়নি কোনো প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা! দলের কোচিং প্যানেলে একের পর এক পরিবর্তনেও আসেনি নতুন কোনো সাফল্য। বরং, বারবার ওই ব্যর্থতাকে সঙ্গী করেই চলেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।
স্পোর্টসমেইল২৪/পিপিআর