প্রতি মুহূর্তে রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচে শেষ হাসি থাকলো রিয়াল মাদ্রিদের মুখেই। বদলি হিসেবে নেমে পিছিয়ে পড়া রিয়ালের ত্রানকর্তা হিসেবে হাজির হন ব্রাজিলিয়ান রদ্রিগো। ব্রাজিলিয়ান তরুণ ফুটবলার রদ্রিগোর জোড়া গোলে অবিশ্বাস্যভাবে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে দুই লেগ মিলিয়ে ৬-৫ গোলের ব্যবধানে জিতে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে উঠেছে রিয়াল মাদ্রিদ।
৮৯ মিনিটেও রিয়াল যখন ১ গোলে পিছিয়ে (দুই লেগ মিলিয়ে ২ গোল) তখনও হয়ত কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি এই ম্যাচের পরবর্তী দুই মিনিটে তাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে। স্বয়ং রিয়ালের কট্টর সমর্থকও হয়ত হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন। ঠিক তখনই যেন ত্রাণকর্তা রুপে হাজির হন রদ্রিগো। ২১ বছর বয়সী এই ব্রাজিলিয়ান মাত্র দুই মিনিটের ব্যবধানে রিয়ালকে ফাইনালে যাওয়ার পথ তৈরি করে দেন। পরবর্তীতে অতিরিক্ত সময়ে পেনাল্টি থেকে অধিনায়ক বেনজেমার গোলে অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন লিখে ফেলে স্প্যানিশ ক্লাবটি।
ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ঘরের মাঠে শুরুতে যেন কিছুটা ছন্দহারা মনে হয়েছে রিয়াল মাদ্রদিকে। যদিও সেটা দ্রুতই সামলে নিয়ে ধীরে ধীরে লড়াইয়ে নিজেদের সামিল করেছে আনচেলত্তির শিষ্যরা। গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া যদি গ্লাভস হাতে সিটির অবিশ্বাস্য কিছু আক্রমণ সামাল না দিতে পারতো তাহলে হয়ত প্রথমার্ধেই রিয়ালকে গোটা কয়েক গোল হজম করতে হতো।
বুধবার (৪ মে) এক গোলে পিছিয়ে থেকে নিজেদের মাঠে সিটির বিপক্ষে খেলতে নামে রিয়াল মাদ্রিদ। প্রথমার্ধে বল দখলের লড়াইয়ে দুই দল প্রায় সমানে লড়লেও সিটির গোলমুখে কোন শটই নিতে পারেনি আনচেলত্তির দল।
অন্যদিকে শুরু থেকেই রিয়ালের রক্ষণভাগকে ব্যস্ত রাখা সিটি চারবার মাদ্রিদের গোলপোস্টে শট নিলেও রিয়াল গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়ার অসামান্য দক্ষতায় গোল বঞ্চিত হতে হয় সিটিজেনদের।
সিটির গোলপোস্টে শট নেওয়ার সুযোগ পেলেও গোটা কয়েকবারই বল আকাশের দিকে উড়িয়ে মারেন রিয়াল অধিনায়ক করিম বেনজেমা। এছাড়া রিয়ালের ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার ভিনিসিয়াস জুনিয়রও প্রথমার্ধে ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে।
প্রথমার্ধে দারুণ খেলা ম্যানচেস্টার সিটি দ্বিতীয়ার্ধে শুরুতে যেন খেই হারিয়ে ফেলে। একের পর এক ভুল পাস, রিয়াল স্ট্রাইকারদের আক্রমণের জায়গা করে দেওয়া সব মিলিয়ে অগোছালো ফুটবল খেলতে থাকে গার্দিওয়ালার শিষ্যরা।
সিটিজেনদের এই ছন্দ হারানো শুরুর মধ্যে রিয়াল মাদ্রিদও বেশ কয়েকটি সুযোগ পেয়ে গেছিল সিটির রক্ষণভাগে চিড় ধরানোর। কিন্তু ভিনিসিয়াস, বেনজেমারা সুযোগ কাজে লাগাতে না পারায় গোল পায়নি রিয়াল মাদ্রিদ।
ম্যাচের বয়স যখন ৭৩ মিনিট তখনই নিজেদের কাঙ্ক্ষিত গোল পায় ম্যানচেস্টার সিটি। সিটির পর্তুগিজ ফুটবলার বার্নান্দো সিলভার দারুণ এক অ্যাসিস্ট থেকে বাঁ পায়ের গোলার মত শটে লক্ষ্যভেদ করেন রিয়াদ মাহারেজ। দুই লেগ মিলিয়ে তখন ৫-৩ গোলে এগিয়ে যায় সিটিজেনরা।
৮৬তম মিনিটে বদলি হিসেবে নামা জ্যাক গ্রিলিশ ফুটবল পায়ে অসাধারণ দক্ষতা দেখালেও আবারও কোর্তোয়ার সৌজন্যে রক্ষা পায় রিয়াল। এরপর ৯০তম মিনিটে সহজ সুযোগ মিস করার পরেই গোলের দেখা পায় রিয়াল মাদ্রিদ। চ্যাম্পিয়নস লিগের চলতি আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা করিম বেনজেমার এসিস্ট থেকে গোল করে ম্যাচে ফেরান বদলি হিসেবে নামা রদ্রিগো। এর মাত্র ১ মিনিট পরেই আবার গোলের দেখা পায় রিয়াল। দানি কারভাহালের ক্রস থেকে দারুণ এক হেডে দুই লেগ মিলিয়ে গোল ব্যবধানে রিয়ালকে সমতায় ফেরান রদ্রিগো।
ম্যাচের শেষদিকে রিয়াল মাদ্রিদ যেন নিজেকে খুঁজে পায়। একের পর এক আক্রমণে সিটি রক্ষণভাগকে ব্যস্ত করে তোলে তারা। রিয়ালের হটাৎ এমন মুহুমুর্হু আক্রমণে যেন আবারও খেই হারিয়ে ফেলে সিটি। বিপরীত দিকে প্রতি আক্রমণে সিটিও দারুণ এক সুযোগ পেলেও রিয়াল ডিফেন্ডারের গোল লাইন সেভে রক্ষা পায় আনচেলত্তির দল।
অতিরিক্ত সময়ে দুই দল একে অপরকে আক্রমণের পর আক্রমণে ব্যস্ত করে তুললেও নির্ধারিত সময়ে আর গোল না হওয়ায় ২-১ গোলে এগিয়ে থাকে রিয়াল। কিন্তু দুই লেগ মিলিয়ে দুই দলের গোল ব্যবধান সমান হওয়ায় তখনও নির্ধারণ করা যায়নি কোন দল চলতি মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল খেলবে।
নির্ধারিত সময় শেষে অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের প্রথমার্ধের শুরুতেই দারুণ সুযোগ পায় রিয়াল মাদ্রিদ। ভিনিসিয়াসের অ্যাসিস্ট থেকে বেনজেমার শট সিটি গোলরক্ষক সরাসরি এডারসনের হাতে গেলে গোল বঞ্চিত থাকতে হয়ে রিয়ালকে।
এর ঠিক পরের মিনিটেই বেনজেমাকে সিটির ডি-বক্সে ফাউল করেন সিটি ডিফেন্ডার রুবেন দিয়াজ। রেফারি চোখ এড়াতে পারেননি ডিয়াজ, তৎক্ষণাৎ রিয়ালের পক্ষে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। পেনাল্টি থেকে ৯৫ মিনিটে রিয়ালকে মহাকাঙ্ক্ষিত গোল এনে দেন রিয়াল অধিনায়ক করিম বেনজেমা।
এই গোলেই চ্যাম্পিয়নস লিগের এক মৌসুমে নকআউট পর্বে সর্বোচ্চ গোল করার রেকর্ডে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে ছুঁয়েছেন রিয়াল অধিনায়ক। ২০১৬-১৭ চ্যাম্পিয়নস লিগ মৌসুমে ১০ গোল করেছিলেন রোনালদো। এবার ২০২১১-২২ চ্যাম্পিয়নস লিগ মৌসুমে তার পাশে নিজের নাম লেখালেন করিম বেনজেমা। এরপর সিটি আক্রমণের ধার বাড়ালেও গোল না পাওয়ায় দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৬ গোলের ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে প্রথমার্ধ শেষ করে সিটি।
অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধেও সিটি আক্রমণ বাড়ালেও রিয়ালের মনোযোগ ছিল রক্ষণভাগে। সিটির একের পর এক আক্রমণ প্রতিহত করেন রিয়ালের রক্ষণভাগের খেলোয়াড়রা। শেষ পর্যন্ত আর কোন গোল না হলে দুই লেগ মিলিয়ে ৬-৫ গোল ব্যবধানে সিটিকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে ১৩বারের চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ী রিয়াল মাদ্রিদ।
স্পোর্টসমেইল২৪/পিপিআর