কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়ে ইউরোপের দেশগুলোর আপত্তি বেশ পুরোনো। কাতারে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়, এমন দাবি করে বিশ্বকাপ সরিয়ে নেওয়ারও অনুরোধ করেছিল অনেকেই। তবে সেই অভিযোগ কানে তোলেনি ফিফা। কাতারেই বসবে এশিয়ার দ্বিতীয় বিশ্বকাপ।
চলতি বছরের নভেম্বরে মাঠে গড়াবের এবারের ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ। এর আগে বিশ্বকাপ আয়োজনে শ্রমিকদের সাথে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে বিভিন্ন কাতারি প্রতিষ্ঠান। এমনটাই অভিযোগ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশন্যালের।
তাদের অভিযোগ, ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল দেখেছে, কাতারে কাজ করা নিরাপত্তাকর্মী, যাঁদের মধ্যে ২০২২ বিশ্বকাপের প্রকল্পের লোকও আছেন, তাঁরা যে পরিবেশে কাজ করেছেন, তা জোরপূর্বক শ্রমের পর্যায়ে পড়ে।’
তারা আরও জানিয়েছে, ‘নিরাপত্তাকর্মীরা, তারা সবাই অভিবাসী, জানিয়েছেন দিনে ১২ ঘণ্টা, সপ্তাহের সাত দিনই কাজ কাজ করতে হতো তাঁদের। প্রায়ই মাস এমনকি পুরো বছরও কোনো ছুটি ছাড়াই কাটিয়ে দিয়েছেন তারা।’
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশন্যালের আর্থিক ও সামাজিক বিচার বিভাগের প্রধান স্টেফান ককবার্ন জানিয়েছেন, কাতারে নিয়োগদাতা এবং শ্রমিকদের ক্ষমতার বিশাল পার্থক্যের কারণে শ্রমিক আইন মেনে চলা সম্ভব হচ্ছে না। আর শ্রমিকরা বাধ্য হয়ে প্রতিদিনই কর্মক্ষেত্রে হাজির হচ্ছেন। না হলে, তাদের দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার মতো হুমকি দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘গত কয়েক বছরে কাতার অনেক উন্নতি করেছে, কিন্তু আমাদের গবেষণায় আমরা অনেক অত্যাচারের নমুনা পেয়েছি। বিশ্বকাপের জন্য বেসরকারি খাতের চাহিদা অনেক বেড়েছে, আরও বাড়বে। চাকরিদাতারা এখনো প্রকাশ্যে শ্রমিকদের শোষণ করছে। কর্তৃপক্ষকে শ্রমিকদের রক্ষা করতে এগিয়ে আসতে হবে এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে হবে। বিশ্বকাপ আর মাত্র কয়েক মাস দূরে, ফিফাকেও এমন অত্যাচার ঠেকাতে নজরদারি বাড়াতে হবে। না হলে এমন ঘটনা এ টুর্নামেন্টের গায়ে কালি লেপে দেবে।’
ফিফা এখনই কাতারের মানবাধিকারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নিলে পরবর্তীতে তা প্রকট রুপ ধারণ কবে বলে জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশন্যাল।
এ বিষয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশন্যালের বক্তব্য, ‘আর ফিফার উচিত তাদের শক্তি কাজে লাগিয়ে কাতারকে চাপ দেওয়া। যেন কাতার নিজেদের আইন আরও ভালোভাবে প্রয়োগ করে। সময় খুব দ্রুত চলে যাচ্ছে। এখনো যদি সঠিক চর্চা না করা হয়, ভক্তরা (বিশ্বকাপ দেখে) ঘরে ফেরার পরও অত্যাচার চলতে থাকবে।’
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশন্যালের এই প্রতিবেদনের পর বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা জানিয়েছে তারা এ বিষয়ে আলোচনা করবে। এছাড়াও যাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে ফিফা।
ফিফা জানিয়েছে, ‘ফিফা বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে জড়িত কোনো প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের অত্যাচার মেনে নেবে না। ক্লাব বিশ্বকাপ ও আরব কাপের সময় যেসব ঠিকাদার সঠিক মান বজায় রেখে কাজ করতে পারেনি, তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে এবং সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
স্পোর্টসমেইল২৪/পিপিআর