বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ফুটবল মাঠে গড়ানোর সূচি চূড়ান্ত। তবে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ চলায় ভেন্যু নিয়ে জটিলতায় পড়েছে বাংলাদেশ ফুটবলে ফেডারেশন (বাফুফে)। সর্বশেষ বসুন্ধরা কিংসের মাঠ বাতিল করার পর টঙ্গির শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামও নিয়ে আরচ্যারি ফেডারেশনের সাথে বিবাদে জড়ালো বাফুফে।
ঢাকার কাছে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামের ব্যবহার নিয়ে বাফুফে স্বেচ্ছাচারিতা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ আরচ্যারি ফেডারেশনের সভাপতি লে. জেনারেল (অব.) মো. মাইনুল ইসলাম। বিষয়টি নিয়ে জরুরি এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন। তার অভিযোগ, কোন রকম নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই বাফুফে আরচ্যারি ফেডারেশনের অনুকূলে বরাদ্ধকৃত স্টেডিয়ামটি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম বাদে দেশের ৭টি ভেন্যুতে লিগ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাফুফে। পরে করোনার কারণে বাফুফের প্রফেশনাল লিগ কমিটি সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। জানা যায়, বসুন্ধরা কিংসের হোম ভেন্যু-সহ মোট তিন ভেন্যুতে লিগের খেলা অনুষ্ঠিত হবে। তবে কিংসের সাথে শর্তে না মিলায় সেটিও বাদ দেওয়া হয়। ফলে বাফুফের সামনে ভেন্যু হিসেবে থাকে মাত্র দুটি মাঠ।
দুই ভেন্যু হলো- টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়াম এবং মুন্সিগঞ্জের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়াম। এর মধ্যে বাংলাদেশ আরচ্যারি ফেডারেশনের নিয়ন্ত্রণে থাকা টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়াম নিয়ে বাফুফের বিরুদ্ধে তোলা হলো স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ।
ফেডারেশনের সভাপতি মাইনুল বলেন, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের আন্তরিক সহযোগিতায় টঙ্গীর স্টেডিয়ামটি আরচারি ফেডারেশনের প্রশিক্ষণ ও প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য তাদের অনুকূলে বরাদ্ধ দিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। বরাদ্ধ পাওয়ার পর থেকে স্টেডিয়ামটির রক্ষণাবেক্ষণ থেকে শুরু করে নিরাপত্তায় নিয়োজিত সব কর্মকর্তাকর্মচারী আরচ্যারি ফেডারশনের বেতভোগী হিসেবে কর্মরত রয়েছে। সেখানে এনএসসির কোন ভেন্যু ম্যানেজার বা কোন কর্মচারী নেই। আরচ্যারির কর্মীরাই স্টেডিয়ামের রক্ষণাবেক্ষণ, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ এবং পানি সরবরাহ থেকে সব কিছু করে আসছে। এ জন্য ফেডারেশন বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছে।
তিনি বলেন, ‘গত বছরও আরচ্যারির কার্যক্রমের ফাঁকে সেখানে গুটি কয়েক ফুটবল ম্যাচ আয়োজনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এ বিষয়ে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নির্দেশনা মেনে মাঠটি ফুটবলকে ১৩ সপ্তাহের জন্য বরাদ্ধ দেওয়া হলেও ওই সময়ের মধ্যে তারা মাত্র ৫টি ম্যাচের আয়োজন করেছিল।
জানা গেছে, এবারও দুই ফেডারেশনের সমন্বয়ের ভিত্তিতে আলোচনা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে টঙ্গীর স্টেডিয়াম ব্যবহারের নির্দেশনা পায় আরচারি ফেডারেশন। নির্দেশনার ভিত্তিতে এ বিষয়ে আরচ্যারি ফেডারেশন তাদের এক সহ-সভাপতিকে আলোচনা করার দায়িত্ব দেয়।
এদিকে, বুধবার আরচারির কাছে পৌঁছানো ৩১ জুনয়ারি স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ফেডারেশনের মেইলে পেয়েছি, যেখানে টঙ্গির স্টেডিয়ামে বেশ কিছু ম্যাচ আয়োজনের সিদ্ধান্ত জানিয়ে একটি চিঠি প্রেরণ করে বাফুফে। চিঠিতে আরচারির কোন নাম উল্লেখ ছিল না এবং ক্লাবের কোন আপত্তি থাকলে ১ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১টার মধ্যে জানানোর অনুরোধ করা হয়।
মাইনুল বলেন, প্রথমত আমরা কোন ক্লাব নই, আমরা ফেডারেশন, আর ফেডারেশনকে উল্লেখ করে এটি প্রেরণ করা হয়নি, যেমনটি গতবার হয়েছিল। যা হোক তারা (বাফুফে) ফেব্রুয়ারিতে ১৫টি এবং মার্চে ১২টি ম্যাচ ওই ভেন্যুতে আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে মার্চে ১৯ দিন এবং ফেব্রুয়ারির ২৭ দিন সেখানে আরচ্যারির যে প্রশিক্ষণ সূচি রয়েছে তা বিঘ্নিত হবে। অথচ গত বছর তাদেরকে সপ্তায় একটি করে ম্যাচের সময় বরাদ্ধ দেয়া হয়েছিল। তারা যদি এভাবে আমাদের মাঠ নিয়ে নেয় তাহলে জুন পর্যন্ত আমাদের সূচির ১৫টি টুর্নামেন্ট আয়োজনে ব্যর্থ হবো। আরচারির নিয়ম অনুযায়ী তিন মাস অনুশীলন না করলে টুর্নামেন্টে খেলোয়াড় অন্তুর্ভুক্ত করা হয় না।
আরচ্যারি সভাপতি আরও বলেন, আজ (বুধবার) আবার মেইলে আরেকটি সূচি এসেছে, যেখানে ফেব্রুয়ারি-মার্চে ৩৫টি ম্যাচ রাখা হয়েছে। কেয়ারটেকার জানিয়েছে, মাঠ থেকে তাদের বের করে দিয়েছে। মাঠ সমান করার জন্য রোলার আসছে। সেখানে গিয়ে দেখি বাফুফের একজন কর্মী বসে আছে, তাকে মাঠ ঠিক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগকে কল করতে বললে তিনি কয়েক বারের চেষ্টায় পেলেও সোহাগ বলে দেন, ‘আমার সঙ্গে তার কথা বলার কিছু নেই, সময় নেই’।
তিনি আরও বলেন, আমি আসার পর সেখানে আসা স্থানীয় এক রাজনীতিবিদ ও বাফুফের নির্বাহী কমিটির সদস্য গিয়ে বলেন, সরকার এটি আমাদের (বাফুফে) বরাদ্ধ দিয়েছে তাই এখানে আমরাই খেলব। এক পর্যায়ে তিনি আমাকে টেলিফোনে বলেন, আমরা এই মাঠেই খেলব, আপনার যা খুশি করেন। তিনি আমাদের সাধারণ সম্পাদক এবং আমার সাথে কিছু ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথা বলেছেন। যেটি ভদ্র সমাজে কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। ক্রীড়াঙ্গনের মানুষ কখনো এমনটি করতে পারে না।
এদিকে, ভেন্যু নিয়ে বাংলাদেশ আরচ্যারি ফেডারেশনের পক্ষ থেকে বিস্তার অভিযোগ উঠলেও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
স্পোর্টসমেইল২৪/আরএস
[আমরা এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও। খেলাধুলার সর্বশেষ সংবাদ পড়তে ইনস্ট্রল করুন আমাদের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অ্যাপস ]