নতুন চুক্তির ব্যাপারে সম্মত থাকার পরও শেষ পর্যন্ত বিচ্ছিন্নই হতে হলো বার্সেলোনা এবং লিওনেল মেসিকে। আর্জেন্টিনার ছোট্ট শহর রোজারিও থেকে আসা এ বিস্ময় বালকই হয়ে উঠেছিলেন বার্সেলোনার প্রাণভোমরা। বার্সেলোনার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অংশ জুড়েই থাকবেন লিওনেল আন্দ্রেস মেসি। ট্রফি কেসের ট্রফি কিংবা ব্যক্তিগত অর্জন সব দিক থেকেই বার্সেলোনার ইতিহাসের অন্যতম অংশ তিনি। ক্যারিয়ার জুড়ে বার্সেলোনাকে অসংখ্য সাফল্য এনে দেওয়া মেসি নিজেও কাতালান ক্লাবটির হয়ে ছিলেন বেশ উজ্জ্বল।
২০০০ সালে আর্জেন্টিনার ছোট্ট শহর রোজারিওতে বার্সেলোনার স্কাউটদের চোখে পড়েছিলেন লিওনেল মেসি। স্কাউটরা বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে তৎক্ষণাৎই টিস্যু পেপারে মেসির সাথে চুক্তি করেন। এরপর থেকেই নিজের প্রতিভার ঝলক দেখিয়ে বার্সেলোনাতে কাটিয়ে দিয়েছেন ২১ বছর। দুই দশক পর বার্সেলোনার হোম গ্রাউন্ড ন্যু ক্যাম্প শুধু মেসিময়। এক বিস্ময়বালক থেকে পরিণত হয়েছিলেন বার্সেলোনার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় তারকা।
২০০৪-০৫ মৌসুমে ব্রাজিলিয়ান তারকা রোনালদিনহোর পাশে মেসির অভিষেক। তার পাস থেকেই বল পেয়ে বার্সেলোনার মূল দলের হয়ে করেছেন প্রথম গোল। এরপর বার্সেলোনার জার্সি গায়ে ৭৭৮ বার মাঠে নেমেছিলেন তিনি। ৭৭৮ ম্যাচে ৬৭২ বার জালে বল জড়িয়েছেন তিনি। হয়েছেন বার্সেলোনার ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা। দ্বিতীয় স্থানে থাকা আরেক বার্সেলোনা কিংবদন্তি সিজার রদ্রিগেজের গোলসংখ্যা মোটে ২৩২ টি।
বার্সেলোনার পাশাপাশি স্প্যানিশ লা লিগার ইতিহাসে সবার্ধিক গোলও লিওনেল মেসির দখলে। লা লিগায় মেসির গোলসংখ্যা ৪৭৪। লা লিগার ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বাধিক গোলের মালিক ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। তার গোলসংখ্যা ৩১১ টি।
বার্সেলোনার হয়ে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগেও সর্বাধিক গোলের মালিক লিওনেল মেসি। চ্যাম্পিয়নস লিগে বার্সেলোনার জার্সিতে মেসির গোলসংখ্যা ১২০ টি। চ্যাম্পিয়নস লিগে মেসি হয়তো আরও গোল করবেন। তবে তা আর বার্সেলোনার জার্সিতে করতে পারবেন না।
লিওনেল মেসি বার্সেলোনার হয়ে কোপা দেল রে, স্প্যানিশ সুপার কাপ, ক্লাব বিশ্বকাপ এবং উয়েফা সুপার কাপেও মাঠে নেমেছিলেন। এসব টুর্নামেন্টে মেসির গোলসংখ্যা যথাক্রমে ৫৬,১৪,৫ এবং ৩ টি।
এতো গেল গোলের হিসাব। হ্যাটট্রিক কিংবা ট্রফির দিক থেকেও সময়ের অন্য ফুটবলারদের থেকেও যোজন যোজন এগিয়ে আছেন লিওনেল মেসি।
টানা পাঁচ মৌসুম সহ রেকর্ড আটবার লা লিগার সর্বাধিক গোলদাতার পুরষ্কার পিচিচি ট্রফি নিজের করে নিয়েছিলেন লিওনেল মেসি। এছাড়াও পাঁচ মৌসুমে সবধরনের টুর্নামেন্ট মিলিয়ে ৫০ এর অধিক গোল করেছেন। এগুলোর সবই করেছেন বার্সেলোনার জার্সিতে। এছাড়াও ২০০৮-০৯ মৌসুম থেকে প্রতিবারই ৩০ এর অধিক গোল করেছেন তিনি।
বার্সেলোনার হয়ে রেকর্ড ৩৪ টি মেজর শিরোপা ছুয়েছেন লিওনেল মেসি। বার্সেলোনা মূল দলের হয়ে ১৭ মৌসুম খেলেছেন তিনি। মৌসুমের হিসেবে বার্সেলোনার হয়ে প্রতি মৌসুমে দুইটি করে শিরোপা জিতেছেন।
বার্সেলোনার হয়ে ১৭ মৌসুমে ১০ বার লা লিগা শিরোপা জিতেছিলেন লিওনেল মেসি। এ সময়ের মধ্যে সাত বার কোপা দেলরে শিরোপা জিতেছেন তিনি। এর মধ্যে চার মৌসুমে একই সাথে লা লিগা এবং কোপা দেল রে শিরোপা জিতেছিলেন। স্প্যানিশ সুপার কাপ শিরোপার দৌড়েও কোনো ভাবে পিছিয়ে ছিলেন না মেসি। বার্সেলোনার জার্সিতে ৮ বার স্প্যানিশ সুপার কাপ শিরোপা পেয়েছেন মেসি।
উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ কিংবা উয়েফা সুপার কাপ শিরোপা জয়েও স্বমহিমায় উদ্ভাসিত ছিলেন লিওনেল মেসি। মেসি বার্সেলোনায় থাকাকালীন ন্যু ক্যাম্পে এসেছিলো চারটি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা। তিনবার করে জিতিয়েছেন ক্লাব বিশ্বকাপ এবং উয়েফা সুপার কাপ শিরোপা।
এসব তো গেল বার্সেলোনার হয়ে লিওনেল মেসির দলীয় সব অর্জন। তবে ব্যক্তিগত ট্রফিতেও সময়ের সেরা ফুটবলারদের থেকে এগিয়ে ছিলেন লিও। বার্সেলোনার হয়ে খেলাকালীন ছয়বার বিশ্বসেরা ফুটবলারের তকমা নিজের করে নিয়েছিলেন। এর মধ্যে ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত টানা চার বছর জিতেছিলেন বিশ্বসেরা ফুটবলারের ট্রফি ব্যালন ডি অর।
বার্সেলোনার জার্সি গায়ে হ্যাটট্রিকের রেকর্ডও নিজের করে রেখেছেন লিওনেল আন্দ্রেস মেসি। বার্সেলোনার জার্সি গায়ে ৪৮ টি হ্যাটট্রিকের দেখা পেয়েছিলেন মেসি। এরমধ্যে লা লিগায় ৩৬ টি হ্যাটট্রিক করেছেন। বাকি ১২ টি হ্যাটট্রিক করেছেন অন্যান্য টুর্নামেন্টে।
হ্যাটট্রিকের পাশাপাশি ছয়বার প্রতিপক্ষের জালে চারটি করে গোল জালে জড়িয়েছেন তিনি। হয়তো এ রেকর্ড আবারও করবেন তিনি। তবে সেটা হয়তো আর বার্সেলোনার জার্সিতে করতে পারবেন না। ম্যাচে পাঁচ গোলেরও রেকর্ড আছে লিওনেল মেসির। ২০১২ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগে বায়ার লেভারকুসেনের জালে পাঁচ বার বল জড়িয়েছিলেন তিনি।
বার্সেলোনার জার্সি গায়ে ১৩৭ বার দুইবার করে গোল করার রেকর্ডের মালিক লিওনেল মেসি। লা লিগায় মেসির সবচেয়ে প্রিয় প্রতিপক্ষ ছিলো সম্ভবত ভ্যালেন্সিয়া। ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে ৪ বার হ্যাটট্রিক করেছেন তিনি। এছাড়াও ৩ টি করে হ্যাটট্রিক করেছেন অ্যাথলেটিকো মাদ্রিস, সেভিয়া, ওসাসুনা এবং দোর্পোদিভো লা করুণার বিপক্ষে।
বার্সেলোনার বিপক্ষে এত রেকর্ড কেউ কখনও ভাঙতে পারবে কিনা সেটা হয়তো সময়ই বলে দিবে। তবে মেসির বার্সেলোনার ত্যাগের খবরে এ রেকর্ডগুলো যে কখনই ছোট হবে না সেটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
স্পোর্টসমেইল২৪/পিপিআর
[sportsmail24.com এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও। খেলাধুলার ভিডিও-ছবি এবং সর্বশেষ সংবাদ পড়তে ব্রাউজ করুন যেকোন ঠিকানায়। এছাড়া অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলে ইনস্ট্রল করে নিতে আমাদের অ্যাপস ]