বার্সেলোনার হয়ে ফাইনালে একের পর এক সাফল্য, তবে জাতীয় দলের হয়ে সাফল্যের ভার শূন্য। অনেকেই বলতেন মেসি শুধু বার্সেলোনার, জাতীয় দলের নয়। দেশের হয়ে চারবার ফাইনালে উঠে শিরোপা ঘরে তুলতে না পারার আক্ষেপ ছিল। তবে এবার কোপা আমেরিকায় যেন পণ করেছিলেন লিওনেল মেসি। হয়তো সে কারণেই এবার ধরা দিয়েছে কোপা আমেরিকার ট্রফি।
রোববার (১১ জুলাই) সকালে রিও ডি জেনেরিওর মারাকানা স্টেডিয়ামে কোপা আমেরিকার ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল স্বাগতিক ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ২২তম মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাক থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে নেন আর্জেন্টাইন ফরওয়ার্ড অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া।
ম্যাচের আর কোনো গোল না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ওই গোলেই নির্ধারিত হয় ম্যাচের ফলাফল। শুধু ম্যাচের ফলাফল নয়, আর্জেন্টিনার ২৮ বছরের আক্ষেপ ঘোচানোর নায়ক হয়েছেন ডি মারিয়া।
ফাইনালের নায়ক ডি মারিয়া হলেও পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে গোল করানো কিংবা গোল করা দুই দিক থেকেই সবচেয়ে উজ্জ্বল ছিলেন লিওনেল মেসি। দলকে একাই ফাইনালে টেনে তুলেছিলেন। তবে ফাইনালে বল জালে জড়াতে পারেননি তিনি। পুরো টুর্নামেন্টে ৭ ম্যাচে ৪ গোল এবং ৫ অ্যাসিস্ট নিয়ে সোনার জুতা এবং বলের দখলদারও লিও।
১৯৯৩ সালে সর্বশেষ কোনো আন্তর্জাতিক ট্রফি ঘরে তুলেছিল আলবিসেলেস্তারা, সেবার ডিয়েগো ম্যারাডোনার গোলে মেক্সিকোকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল। এরপর থেকেই শুরু হয়েছে তাদের একের পর এক ফাইনাল ব্যর্থতার গল্প। টানা পাঁচ ফাইনালে আর্জেন্টিনার স্বপ্নভঙ্গ। এর মধ্যে চার ফাইনালেই ছিলেন লিওনেল মেসি। অবশেষে আর্জেন্টিনার ভাগ্যের শিকে ছিড়লো ৬ষ্ঠ ফাইনালে।
আর্জেন্টিনার হয়ে মেসি প্রথম ফাইনালে নামেন কোপা আমেরিকায়, ২০০৭ সালে। সেবার ব্রাজিলের কাছে রীতিমত উড়ে গিয়েছিল আকাশী-নীল জার্সিধারীরা। সেলেসাওদের কাছে ৩-০ ব্যবধানে হেরে, মেসির স্বপ্ন ভঙ্গের যাত্রা শুরু। এরপর আরও তিনটি সুযোগ পেয়েছিলেন মেসি। তবে সে সুযোগগুলোকে কোনোভাবেই কাজে লাগাতে পারেননি তিনি।
সাত বছরের অপেক্ষার পর আবারও ফাইনালে আর্জেন্টিনা। টুর্নামেন্ট বদল তবে লিওনেল মেসি কিংবা আর্জেন্টিনা কারও ভাগ্যেই বদল আসেনি। ২০০৭ কোপা আমেরিকার ফাইনালে হয়তো মেসি ছিলেন সম্ভাবনাময়ী কোনো ফুটবলার। তবে ২০১৪ বিশ্বকাপে এসেছিলেন পরিপূর্ণ এক তারকা হয়ে, তবুও ফাইনাল ভাগ্য নিজের করে নিতে পারেননি তিনি।
ব্রাজিলের বিখ্যাত মারাকানা স্টেডিয়ামে অতিরিক্ত সময়ে মারিও গোটজের গোলে বিশ্বকাপের শিরোপা উল্লাসে মাতে জার্মানি। দ্বিতীয়বারের মত ফাইনালে স্বপ্নভঙ্গ, আর্জেন্টিনায় ফেরেন মেসি।
২০১৫ এবং ২০১৬ টানা দুই বছর বসে কোপা আমেরিকার আসর। দুইবারই কোপা আমেরিকার ফাইনালের প্রতিদ্বন্দ্বী চিলি এবং আর্জেন্টিনা। তবে এ দুইবারও ফাইনালে কাঙ্খিত শিরোপার দেখা পায়নি আর্জেন্টিনা। দুইবারই পেনাল্টি ভাগ্যে আটকে যায় আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়।
২০১৬ সালে চিলির বিপক্ষে ফাইনালে হারের পর অনেকটা অভিমান করেই আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানান লিওনেল মেসি। তবে অভিমান করে বেশিদিন দূরে থাকতে পারেননি। আবারও ফিরে এসেছিলেন। তবে ফিরে এসে দলকে ফাইনালেই তুলতে পারছিলেন না।
২০১৮ বিশ্বকাপ কিংবা ২০১৯ কোপা আমেরিকা দুইবারই নক আউট পর্ব থেকে বাদ পড়ে আর্জেন্টিনা। অবশেষে ২০২১ কোপা আমেরিকার ফাইনালের মঞ্চে পা রাখে আলবিসেলেস্তারা। তবে এবার আর কোনো ভুল নয়, শিরোপা নিজেদের ঘরেই তুললো আর্জেন্টিনা।
টানা চারবার শিরোপা হারের ক্ষত নিয়ে ফাইনাল খেলতে নেমেছিলেন লিওনেল মেসি। ব্যক্তিগত ট্রফিকেসে অসংখ্য ট্রফি থাকলেও অভাব ছিল একটি আন্তর্জাতিক শিরোপার। তবে সে আক্ষেপটাও পূর্ণ করেছেন লিও।
কোনো শিরোপা না থাকলেও তার অমরত্বের পথে কোনো বাধা ছিল না। হয়তো ফুটবল বিধাতাই চায়নি আকাশী-নীলদের জার্সিতে শিরোপা শূন্য থাকুক ক্ষুদে ফুটবল জাদুকর। ফেরেঙ্ক পুসকাস কিংবা ইয়োহান ক্রুইফ ক্যারিয়ারের কোনো আন্তর্জাতিক শিরোপার স্বাদ না পেয়েও হয়েছেন অমর। তবে বিধাতা চায়নি মেসিও হাঁটুক সে পথে, তাই তো শেষ বেলায় এসে জিতে নিলেন এক আন্তর্জাতিক শিরোপা।
স্পোর্টসমেইল২৪/পিপিআর
[sportsmail24.com এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও। খেলাধুলার ভিডিও-ছবি এবং সর্বশেষ সংবাদ পড়তে ব্রাউজ করুন যেকোন ঠিকানায়। এছাড়া অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলে ইনস্ট্রল করে নিতে আমাদের অ্যাপস ]