বর্ণবাদী আচরণের প্রতিবাদে ইস্তাম্বুল বাসাকসেহির খেলোয়াড়দের সাথে মাঠ ছেড়েছিলেন পিএসজির খেলোয়াড়রা। স্থগিত হওয়া ওই ম্যাচের আগে মাঠে হাঁটু গেড়ে বসে এক হাত তুলে বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছেন রেফারিসহ দুই দলের খেলোয়াড়। বিশ্বব্যাপী বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনে অংশীদার হতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করেছেন পিএসজির ফরাসি স্ট্রাইকার কিলিয়ান এমবাপে।
মঙ্গলবার (৮ ডিসেম্বর) ইস্তাম্বুল বাসাকসেহির সহকারী কোচের সাথে চতুর্থ রেফারির বিরুদ্ধে বর্ণবাদী আচরণের অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনায় খেলা বন্ধ হয়ে যায় এবং ইস্তাম্বুল বাসাকসেহির খেলোয়াড়রা প্রতিবাদে সমর্থন দিয়ে মাঠে ছেড়ে চলে যান। পড়ে নেইমার-এমবাপেরাও মাঠ ছাড়েন। ১৪ মিনিট খেলার পর ওই ঘটনায় ম্যাচটি স্থগিত ঘোষণা করে উয়েফা।
পুনরায় নতুন করে বুধবার (৯ ডিসেম্বর) ম্যাচটি আয়োজন করা হয়। আগের ১৪ মিনিট বাদ দিয়ে বাকি সময় খেলা অনুষ্ঠিত হয়। ম্যাচটি শুরু হওয়ার আগে দুই দলের ফুটবলার এবং রেফারিরা হাঁটু গেড়ে বসে মুষ্টিবদ্ধ এক হাত উপরে তুলে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান।
বর্ণবাদের বিরুদ্ধে এমন প্রতিবাদের অংশগ্রহণ করতে পেরে গর্বিত ফরাসি স্ট্রাইকার কিলিয়ান এমবাপে বলেছেন, ‘আমরা ক্লান্ত, আমরা এর মধ্যে দিয়ে (বর্ণবাদ আচরণ) আর যেতে চাই না। আমি যা করতে পেরেছি তা নিয়ে অবশ্যই গর্ববোধ করছি।’
মঙ্গলবার বর্ণবাদের প্রতিবাদে মাঠ ছাড়ে দু’দলের খেলোয়াড়রা
বর্ণবাদের প্রতিবাদে ইস্তাম্বুল বাসাকসেহির খেলোয়াড়দের সাথে নিজেদের মাঠ ছাড়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘খেলতে না পেরে আমরা হতাশ নই, আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিলাম -এর জন্য আমরা গর্বিত। অনেক কিছুই বলা হচ্ছিলো, কিন্তু বাস্তবে কিছু করে দেখানোর থেকে আর ভালো কিছু নেই।’
এদিকে প্রথম ম্যাচে ইস্তাম্বুল বাসাকসেহির সহকারী কোচ ওয়েবো -যাকে লাল কার্ড দেখিয়ে বের করা দেওয়া হয়েছিল, প্রাথমিক তদন্তের পর লাল কার্ডটি উঠিয়ে নিয়ে তাকে বেঞ্চে বসার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
লাল কার্ডের বিষয়ে ইস্তাম্বুল বাসাকসেহির কোচ ওকান বুড়ুক বলেছেন, ‘রেফারির পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা উচিত ছিল। কিন্তু তিনি তা করেননি এবং আমাদের দেখাতে হয়েছিল যে, আমরা ওয়েবোর পাশে দাঁড়িয়েছি।’
‘সিদ্ধান্তটি (না খেলা) খেলোয়াড়রাই নিয়েছিল। কেউ কেউ মাঠে ফিরে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দলের সাথে সবাই থেকেছে এবং এটা ছিল দলগত সিদ্ধান্ত। আমরা দেখাতে পেরেছিলাম আমরা সবাই একতাবদ্ধ।’ -যোগ করেন তিনি।
বুধবার খেলা শুরু হওয়া আগে মাঠে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয়
ইস্তাম্বুল বাসাকসেহির বদলি হিসেবে খেলতে নামা ন্যাসের চাদলি বলেছেন, ‘আমরা এখন ২০২০ সালে আছি। এ সময় এমন ঘটনা আমাদের সকলের জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক। ড্রেসিং রুমের সবার মতো আমারও খুব খারাপ লেগেছিল। আমরা খুব গভীরভাবে কষ্ট পেয়ছি। কারণ, আমরা ফুটবলকে ভালোবাসি। আমরা এখানে খেলতে এসেছি। কিন্তু এখানে এমন কিছু ঘটেছে যা, আমরা কখনই প্রত্যাশা করি না।’
এদিকে পিএসজির কোচ থমাস টুখেল দলের খেলোয়াড়দের সমর্থন জানিয়ে বলেন, ‘তারা খুব শক্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা তাদের (ইস্তাম্বুল বাসাকসেহির) সাথে মিশে গিয়েছিল এবং খুব সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ড্রেসিং রুমে বিষয়টি পরিষ্কার ছিল যে, তারা তাদের প্রতিক্রিয়া দেখাতে চায়।’
পিএসজির মিডফিল্ডার মার্কো ভেরাট্টি বলেন, ‘এটা সবার জন্য খুব কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল। আমরা মাঠে ছিলাম, সবাই খেলা দেখার পক্ষে ছিল, কিন্তু এমন কিছু ঘটেছিল যা একদমই উচিৎ হয়নি। আমাদের উদাহরণ হওয়া উচিৎ ছিল। কারণ, অনেক মানুষ আমাদের অনুসরণ করে। এর জন্য আমাদের না খেলার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল।’
এদিকে বুধবার নতুন রেফারি দিয়ে ম্যাচ পরিচালনা করা হয়। এছাড়া দুই দলের খেলোয়াড় এবং স্টাফরা ‘বর্ণবাদকে না’ লিখা জার্সি গায়ে মাঠে নামেন। একই সাথে দর্শকবিহীন গ্যালারিতে বর্ণবাদ বিরোধী ব্যানার ছিল।
স্থগিত হওয়া ম্যাচটিতে নেইমারের দুর্দান্ত হ্যাটট্রিক ও এমবাপের জোড়া গোলে ৫-১ ব্যবধানে জয় তুলে নিয়েছে পিএসজি।চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নেইমারের এটি তৃতীয় হ্যাটট্রিক। এ জয়ে ৬ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থেকে গ্রুপ পর্ব শেষ করেছে পিএসজি।
[sportsmail24.com এর ওয়েবসাইট এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও ব্রাউজ করে পড়তে পারবেন। এছাড়া অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনে স্পোর্টসমেইল২৪.কমের অ্যাপস থেকেও খেলাধুলার সকল নিউজ পড়তে পারবেন। ইনস্ট্রল করুন স্পোর্টসমেইল২৪.কমের অ্যাপস ]