ডেভিড ওয়ার্নার, ওসমান খাজা, স্টিভেন স্মিথ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল সাজঘরের পথ দেখেছেন আগেই। আসলে দেখিয়ে দিয়েছেন সাকিব আল হাসান। ম্যাথু ওয়েড এসেছেন এরপরে, খেলেছেন ১৩ বল, করেছেন ৪ রান। সাকিব তখন প্রহর গুণছেন রেকর্ডটা ছুঁয়ে ফেলার। তার বলে পা টা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন ওয়েড, বলটা প্যাডে লেগেছিল। সাকিব তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে প্রসারিত করেছিলেন দু’হাত, আউটের আবেদন করে। আঙুলটা তুলে দেন আম্পায়ার। আউট! রিভিউ! আউট!
সাকিব আল হাসান ঘুরছেন? নাকি ঘুরছে তার হাত? ছন্দে ছন্দে নাচছে কী বাংলাদেশ? স্বপ্নের চেয়েও বড় কিছুর নৈকট্য লাভের আনন্দটা তাহলে এই! ইতিহাসটা হয়ে গিয়েছিল ততক্ষণে। সাকিব আল হাসান রেকর্ডটাতে নিজের নাম লিখে ফেলেছিলেন।
তিনি এগোচ্ছিলেন স্বপ্ন ছোঁয়ার পথে। তার দল বাংলাদেশও। আসলেই কি স্বপ্ন? ক’জন ক্রিকেটার দেখেন টেস্ট খেলা ৯ দলের বিপক্ষে ফাইফারের স্বপ্ন? সাকিব নিশ্চয়ই দেখেছেন। তিনি তাই ছুঁয়ে ফেলেছেন অবিশ্বাস্য সেই কীর্তি। হয়েছেন ‘সাকিব আল হাসান’।
তার আগে কতজন হাত ঘুরিয়েছেন? বল ছুঁড়েছেন দুরন্ত গতিতে। সাকিবের ওই কীর্তি তো করতে পেরেছেন কেবল দু’জন। ডেল স্টেইন আর মুত্তিয়া মুরালিধরন। সাকিব তৃতীয়। আরও পরে, আফগানিস্তান আর আয়ারল্যান্ড টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়ে যাওয়াতে। সাকিবের সেই রেকর্ডটা একটু বদলেছে, তবে মাহাত্ম্য হারায়নি একটুও।
স্বপ্নের চেয়েও বড় হয়েছিলেন সাকিব সে দিন। সত্যি করেছিলেন তাই অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর ইচ্ছে। দুই ইনিংসে দশ উইকেট নিয়ে, ব্যাট হাতে ৮৪ আর ৫ রান করে। ম্যাথু ওয়েডকে যখন এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেললেন সাকিব, নাম লেখালেন আরও এক কীর্তিতে। এক ম্যাচে ১০ উইকেট আর ৮০ এর বেশি রান করে, যা তার আছে দুবার; একবারও নেই আর কারো।
সাকিব যেন নিজের দিনের জানানটা দিয়েছিলেন শুরুতে। ১০ রানেই তিন উইকেট চলে গিয়েছিল বাংলাদেশের। আরেকবার ব্যাটিংটা ধ্বংসস্তুপ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা জেগেছিল। অনেকবারের মতো ঢাল হলেন সেই সাকিবই, ব্যাট হাতে ৮৪ রান করে। একটা করে রান করছিলেন। আর সতীর্থদের মনে মন্ত্র জপে দিচ্ছিলেন হয়তো ‘লড়াই, লড়াই, লড়াই’ বলে। কীসের? অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দেওয়ার। ওয়ানডে কিংবা টি-টুয়েন্টিতে না। আভিজাত্যের ছাপ অজিদের যেটাতে, বাংলাদেশের বিষণ্নতার, সেই টেস্টে।
সাকিব এগিয়ে এসেছিলেন বল হাতেও, দুই ইনিংসেই। নাথান লায়নকে দিয়ে শুরু করেছিলেন, এলবিডব্লিউ করে। ম্যাথু ওয়েডে এসে থেমেছেন একই আউটে। মাঝে সাকিব উড়ে বেড়াতে চেয়েছেন দূর অজানায়। আকাশটা ছুঁয়ে দেখতে চেয়েছেন বার বার। দেশের কোণায় কোণায় তখন নিশ্চয়ই বিশ্বাস ছড়াচ্ছে, ‘সাকিব পারবেন তাও’।
সাকিব তা না করলেও সত্যি করেছিলেন অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন। সাকিব আকাশ না ছুঁয়েও পাখি হয়ে উড়ে বেড়াতে চেয়েছেন বারবার, দশবার। স্টিভেন স্মিথ, কিংবা ডেভিড ওয়ার্নাররা নত মস্তকে হার মেনেছেন।
এরপর সাকিব উড়ে বেড়িয়েছেন বাংলাদেশের ঘরে ঘরে। টিভি পর্দা হয়ে তার বিস্তীর্ণ ডানা মেলেছেন কোটি মানুষের বিশ্বাসে। সাকিব একটা করে উইকেট পান, পাখি হতে চান ; সতীর্থরা জাপটে ধরেন প্রতিবার।
বিশ্বাসের চোখে সাকিব ফিরে আসেন বোলিং মার্কে, ছুঁটে যান, হাত ঘুরান। সাকিব চোখে চোখ রাখেন প্রতিপক্ষের। আউট করেন একের পর এক অজি ব্যাটসম্যানকে। প্রতিক্ষা কমে আসে ক্রিকেটের আদি ফরম্যাটটাতে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দেয়ার।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ২৬০ রানে থেমেছিল। সাকিবের ৮৪ রানের ইনিংসের সঙ্গী হয়ে ব্যাট হাতে তামিম ঝলক দেখিয়েছিলেন, ৭১ এ কাটা পড়েছিলেন। জবাব দিতে নেমে সাকিব আর মিরাজে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল অস্ট্রেলিয়া। সাকিব ৫ আর মিরাজ পেয়েছিলেন ৩ উইকেট। অস্ট্রেলিয়া আটকে গিয়েছিল ২১৭ রানে।
দ্বিতীয় ইনিংসেও তামিম রান পেলেন, করলেন ৭৮ রান। রান আউট হওয়ার আগে ৪১ করলেন মুশফিক। বাংলাদেশ থামলো ২২১ রানে, ২৬৫-এর টার্গেট দিয়ে। অস্ট্রেলিয়া ব্যাটিংয়ে নেমে দেখলো কেবলই সাকিব যাদু।
মায়াবী স্পিনে কুপকাত করলেন অজি ব্যাটসম্যানদের। যাদের ক্রিকেটের পরতে পরতে মিশে আছে আভিজাত্যের ছাপ, সেই অস্ট্রেলিয়াকে। শত বছরের ক্রিকেট ইতিহাসের এক দেশকে। যাদের দম্ভের সামনে সাদা পোশাক নুয়ে পড়ার কথা বাংলাদেশের, তাদের। সাকিবে ভর করে।
তাতে ব্যস্ত রাস্তা, পথ-ঘাট থমকে দাঁড়ালো খানিকক্ষণ। হয়তো উল্লাসে মাতলো আপন মনে কিংবা প্রকাশ্যে। এই উচ্ছ্বাসের যেকোনো বাধ নেই। এই আনন্দের যে সীমানা জানা নেই। এরপর হয়তো সাকিব আরেকবার পাখি হতে চেয়েছেন মনে মনে। আরেকবার প্রাণ খুলে হেসেছেন সবার আড়ালে। আপনি কি কখনো পাখি হতে চেয়েছিলেন? সাকিবের মতো?
[sportsmail24.com এর ওয়েবসাইট এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও ব্রাউজ করে পড়তে পারবেন। এছাড়া অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনে স্পোর্টসমেইল২৪.কমের অ্যাপস থেকেও খেলাধুলার সকল নিউজ পড়তে পারবেন। ইনস্ট্রল করুন স্পোর্টসমেইল২৪.কমের অ্যাপস ]