১০ আলীপুর, কলকাতা

জান-ই-আলম জান-ই-আলম প্রকাশিত: ১২:৪৩ পিএম, ২৭ এপ্রিল ২০২০
১০ আলীপুর, কলকাতা

টি-টায়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে আমাদের কয়েকজনের ব্যস্ততা কার্যত তখন শেষের দুয়ারে চলে এসেছিল। দেশে ফেরার আগে কলকাতায় কাটানো সময়টার সঠিক ব্যবহার করাই ছিল মূল পরিকল্পনা। ২৮ মার্চ সকালে নতুন গন্তব্যের উদ্দেশে আমরা চারজন (পলাশ ভাই, আমি, রিপন ভাই ও রামিন) বেরিয়ে পড়ি।

নিউ মার্কেটের কাছে গিয়ে আলীপুরের বাসে চড়ে বসি। ট্যাক্সি ৩০০ রুপি চাইলেও লোকাল বাস ভ্রমণের ইচ্ছা পূরণে সবাই একমত হই। প্রত্যাশার চেয়ে কম সময়ে আমরা পৌঁছে যাই আলীপুর। ভাড়া মাত্র ৮ রুপি!

আলীপুরে মূলত কলকাতার অভিজাত লোকেরই বসবাস। ঢাকার গুলশান-বারিধারার মতো চাকচিক্য হয়তো নেই। সাবেকী আভিজাত্যের একটা ছাপ ঠিকই রয়েছে গোটা এলাকায়। ব্যস্ত কলকাতার কোলাহল এখানে নেই। শান্ত, নিরিবিলি আবহ রয়েছে এখানে। গিজ গিজ করে গড়ে উঠেনি বসতি। প্রতিটি বাড়িই বেশ জায়গা জুড়ে গড়ে উঠেছে। ফ্ল্যাট বাড়ি, ডুপ্লেক্স সবই আছে।

আমরা বাংলাদেশি জনা চারেক সাংবাদিক খুঁজতে খুঁজতে শেষ পর্যন্ত সন্ধান পাই কাঙ্ক্ষিত বাড়ির। জায়গাটা নিউ আলীপুর হলেও মূলত আলীপুর রোডেই পড়েছে।

ঠিক উল্টো দিকে বড় একটা বাড়ি আছে। ওই বাড়ির দারোয়ানই দেখিয়ে দিলেন দোতালা বাড়িটি। রাস্তা লাগোয়া ১০ নম্বর বাড়িটা আলীপুরের আর দশটা বাড়ির মতোই। যথারীতি প্রধান ফটকের গেইটের অভ্যন্তরে নিরাপত্তা কর্মী আছে।

ভদ্রলোককে ফোন করেই যাচ্ছি, ফোন তুলছেন না। এর মাঝে কলকাতার এক সাংবাদিক জানালেন, উনার মিটিং আছে। ইডেনে চলে যেতে পারেন। চেষ্টার কমতি চলছে না। আমি একটা ক্ষুদে বার্তা পাঠালাম, ফোন ব্যস্ত পেয়ে।

ততক্ষণে ঘণ্টা পেরিয়ে যাচ্ছে। অনিশ্চিত আশায় দাঁড়িয়ে আমরা চারজন। ক্ষুদে বার্তা পাঠানোর মিনিট পাঁচেক পরেই আবার কল করি। এবার ফোনটা রিসিভ করলেন অভিষেক ডালমিয়া।

জানালেন, তিনি বাড়িতেই আছেন। আমরা বাইরে দাঁড়িয়ে আছি জানাতেই বললেন, নিরাপত্তা কর্মীকে ফোন দিতে। এভাবেই পাওয়া গেল বাড়িতে প্রবেশাধিকার।

বাড়ির লনে সাদা একটি ঘোড়া পায়চারি করছে। সামনে অনেকটা খালি জায়গা। গাড়ি রাখা আছে। গাছের, ঘাসের চাষ আছে সামনের জায়গাতে। বাড়িটা বেশ শুনশান।

বাড়ির গৃহস্বামী প্রয়াত হয়েছেন ২০১৫ সালের ২০ সেপ্টেম্বর। চৌকাঠ পার হতেই চোখে পড়ে সেই গৃহস্বামী তথা ক্রিকেট জগতের অবিসংবাদিত সংগঠক জগমোহন ডালমিয়ার ছবি। নির্লিপ্ত, অপলক চোখে চেয়ে আছেন। দুধারের দেয়ালে তার উপস্থিতি।

নিচতলায় ছোট একটি রুমেই আমাদের বসানো হলো। পরে বসানো হয় নিচতলায় ডালমিয়ার অফিস কক্ষে। যেখানে তিনি নিজে বসতেন।

বেশ পরিপাটি করে সাজানো। কালো একটি রিবলবিং চেয়ারেই আসন পাততেন প্রয়াত ডালমিয়া। রুমটার চর্তুদিকে অনেক ছবি, স্মারক, ডালমিয়ার পাওয়া বিভিন্ন সংগঠনের ক্রেস্ট, তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পাঠানো স্মারক, বড় বড় ক্রিকেটারদের ছবি, ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া দলগুলোর অধিনায়কদের পোট্রের্ট। ডালমিয়াকে দেওয়া বিসিবির স্মারকটাও ঠাঁই পেয়েছে পেছনের টেবিলে।

সবখানেই যেন জীবন্ত, চিরঞ্জীব ডালমিয়া। বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু বলেই যার খ্যাতি। বাংলাদেশের ক্রিকেটে ডালমিয়া নামটি চিরভাস্বর। কখনোই বিস্মৃত হওয়ার নয়।

তার হাত ধরেই ২০০০ সালে টেস্ট ক্রিকেটের অভিজাত আঙ্গিনার সদস্য হয় বাংলাদেশ। তারও আগে ১৯৯৮ সালে মিনি বিশ্বকাপ আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ ডালমিয়ার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়। আমৃত্যু বাংলাদেশের প্রতি ভালোবাসার স্বরুপ দেখিয়েছেন তিনি।

ডালমিয়া নামটি ভারতীয়, কলকাতার ক্রিকেটে দিব্যি বেঁচে আছে। ডালমিয়ার পুত্র অভিষেক ডালমিয়া এখন সিএবিতে যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন। বাবার আদর্শ নিয়েই এগিয়ে চলেছেন তিনি।

বাড়ির অভ্যন্তরে বড় হলরুমের মতো ডাইনিং আছে। রয়েছে বোর্ড মিটিং করার মতো মিটিং রুম। যেখানে বিসিসিআই, সিএবি’র মিটিং অনেক হয়েছে। নীচতলায় রুমগুলো নানা কাজে ব্যবহৃত বলে বাড়ির লোকজনের বসবাস দোতালায়। চাকর-বাকর মিলে জনা ছয়েক লোকই থাকেন এখানে।

দুপুর গড়িয়েছে। সূর্যের তেজও কমেছে বাইরের প্রকৃতিতে। বর্তমানে এই সংসারের দায়িত্বে থাকা অভিষেক ডালমিয়া নির্ধারিত সময়ের কিছুক্ষণ পরই রুমে আসলেন। কুশল বিনিময়ের পর বাবার চেয়ার গিয়ে বসলেন।

আমরাও তার অনুগামী হয়ে সামনে পাতা চেয়ারে বসে পড়লাম। বেশ আন্তরিকতা, সহযোগিতাপরায়ন কথার মাধ্যমে লম্বা সময় আলাপ হলো অভিষেকের সঙ্গে। ক্রিকেট, নিজের পরিবার, তার প্রয়াত বাবাকে নিয়ে কথা বলেছেন।

তিনি জানিয়েছিলেন, প্রায় ৭৫ বছর পুরনো এই বাড়িটি। ৬০ বছর আগে পরিবার সমেত এই ভিটায় এসে উঠেছিলেন জগমোহন ডালমিয়া। তারপর থেকে এখানেই বসতি। বংশধর হিসেবে মাড়োয়ারী হলেও ডালমিয়ার জন্ম নাকি কলকাতাতেই।

গাছ-গাছালিপূর্ণ বাড়ি, নীচতলার অনেক কক্ষই ঘুরে ঘুরে দেখালেন অভিষেক ডালমিয়া। বাবার মৃত্যুর পর ছয়মাসও পার হয়েছে। আর এ সময়ের মধ্যেই আপন-পৃথিবীর দায়িত্ব নিতে হয়েছে তাকে।

অভিষেক ও বৈশালী ডালমিয়ারা (ডালমিয়ার মেয়ে বৈশালী) এর মাঝে গুছিয়ে উঠেছেন। কিন্তু খাপছাড়া ভাবটা উবে যায়নি। একটা অপূর্ণতার ছায়া রয়ে গেছে অভিষেকের কণ্ঠে।

আসলে সংসারে প্রিয়জন তথা অভিবাবকের অভাব কখনোই পূরণ হওয়ার নয়। তবে তার প্রস্থান তথা সৃষ্টির অমোঘ বিধান সবার জন্যই প্রযোজ্য। যেই ধারায় নিঠুর বাস্তবতায় ডুব দিতে হয় সবাইকে।

অভিষেকও পিতার স্মৃতিকে প্রেরণা, উৎসাহ বানিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। ১০ নম্বর আলিপুর বাড়িটা তাই কর্মচঞ্চল থাকার সুযোগ পাচ্ছে অতীতের মতোই।

ডালমিয়ার প্রয়াণের পর ক্রিকেটের বাইরে আরও অনেক কিছুর সঙ্গেই যুক্ত হচ্ছে তার পরিবার। যেমনটা ডালমিয়ার একমাত্র কন্যা বৈশালী ডালমিয়া নাম লিখিয়েছেন রাজনীতিতে।

বাড়ির ভেতরেই তৃণমূল কংগ্রেসের পতাকাসহ একটি গাড়ি চোখে পড়েছিল আমাদের। বৈশালী মমতা ব্যানার্জীর তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিট পেয়েছিলেন। ডালমিয়া বেঁচে থাকতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গে এ পরিবারের ভালো যোগাযোগ ছিল। তার মৃত্যুর পর যোগাযোগটা বেড়েছে। সামাজিক নানা সংগঠনে যুক্ত থাকা বৈশালীকেই নিজ পতাকাতলে ভেড়িয়েছেন মমতা।

চলবে...

সবগুলো পর্ব পড়তে ক্লিক করুন- ভারত ভ্রমণের দিনলিপি

 [sportsmail24.com এর ওয়েবসাইট এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও ব্রাউজ করে পড়তে পারবেন। এছাড়া অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনে স্পোর্টসমেইল২৪.কমের অ্যাপস থেকেও খেলাধুলার সকল নিউজ পড়তে পারবেন। ইনস্ট্রল করুন স্পোর্টসমেইল২৪.কমের অ্যাপস ]



শেয়ার করুন :


আরও পড়ুন

কফি হাউসের আড্ডায় কিছু সময়

কফি হাউসের আড্ডায় কিছু সময়

কোহলিদের জন্য অস্ট্রেলিয়ার বিশেষ ফ্লাইট, লক্ষ্য ৩শ মিলিয়ন ডলার

কোহলিদের জন্য অস্ট্রেলিয়ার বিশেষ ফ্লাইট, লক্ষ্য ৩শ মিলিয়ন ডলার

অভিষেকেই জীবনের শেষ টেস্ট ভেবেছিলেন শচীন

অভিষেকেই জীবনের শেষ টেস্ট ভেবেছিলেন শচীন

ক্রিকেটে পিচের আকার পরিবর্তন চান রমিজ রাজা

ক্রিকেটে পিচের আকার পরিবর্তন চান রমিজ রাজা