কফি হাউসের আড্ডায় কিছু সময়

জান-ই-আলম জান-ই-আলম প্রকাশিত: ১০:২৬ এএম, ২৬ এপ্রিল ২০২০
কফি হাউসের আড্ডায় কিছু সময়

২৭ মার্চ সকালে ঘুম থেকে ওঠেই পরিকল্পনা মাফিক বেরিয়ে পড়ি আমরা (আমি ও মহিউদ্দিন পলাশ ভাই, সঙ্গে সুলতান মাহমুদ রিপন ভাই ও রামিন তালুকদার)। গন্তব্য কফি হাউস।

মান্না দে’র কালজয়ী গানের কারণে কফি হাউস নামটা বাংলা ভাষী মানুষের কাছে অতীব পরিচিত। মারকুইস স্ট্রিট থেকে ট্যাক্সি যোগে আমরা চলে যাই কলেজ স্ট্রিটে। কফি হাউসের কাছাকাছি যেতেই চোখে পড়লো প্রেসিডেন্সি কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। বইপত্রের দোকান মিলে আবহটা ‘কলেজ স্ট্রিট’ নামের সঙ্গে পুরো মানানসই।

বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর সাহায্যে বিল্ডিংটা আবিষ্কার করা গেল। বাইরে নেমপ্লেট নেই বলে বুঝতে কষ্ট হবে নতুন যে কারোর জন্য। তবে মানুষের আনাগোনায় বুঝে যাওয়া যেত। কিন্তু রোববার সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং হাফ বেলা বলে মানুষের ভিড় কম ছিল। তাই যাতায়াত দেখে বিল্ডিং বুঝার উপায় ছিল না।

সুশ্রী মেয়েটাও কফি হাউসে ঢুকছিল বলে তাকে অনুসরণেই গন্তব্যস্থল পেয়ে গেলাম।

ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সুপার টেন পর্বে খালি হাতে ফেরায়নি আফগানিস্তানকেও। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অঘটনের শিকার বানিয়ে জয়ের স্বাদ পেয়েছিল এশিয়ার উদীয়মান ক্রিকেট শক্তি আফগানরা।

হতাশাম্লান বিশ্বকাপ শেষে রোববারই ঢাকায় ফিরে গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। সুপার টেন পর্বে জয় শূন্য মাশরাফির দল প্রস্থানের পরও থামেনি তাদের নিয়ে আলোচনা। কলকাতার মানুষজনের নানামুখী আলাপে, আড্ডায় ঠাঁই পেয়েছে টাইগারদের বিশ্বকাপ মিশন। কফি হাউসেও সেই আলোচনার সুর পাওয়া গেল।

কলকাতার কলেজ স্ট্রিটে অবস্থিত কফি হাউস প্রায় শত বছরের পুরনো। ধূমায়িত কফি পানের সঙ্গেই নগরীর আবাল-বৃদ্ধ বনিতার আলোচনায় টাইগারদের কথাও ছিল। সবাই দুর্ভাগাই বলেছিল মাশরাফিদের। ক্রিকেট হীন দিন কাটানোর অভিপ্রায়ে সেই আলাপে আমরা আর মনোযোগী হতে চাইনি।

ছুটির দিনে আড্ডাবাজের সংখ্যা কমই ছিল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সি কলেজের পাশে পুরনো বিল্ডিংটা (এখন কফি হাউস) মূলত আলবার্ট হল নামেই এটি পরিচিত ছিল। ১৮৭৬ সালে যেটি তৈরি হয়েছিল। ভারতের কফি বোর্ডই ১৯৪২ সালে এখানে কফি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়।
sportsmail24হাতে গোনা মানুষরাই তখন আসতেন। ১৯৪৭ সালে কেন্দ্রীয় সরকার নাম পরিবর্তন করে এটিকে ‘কফি হাউস’ নাম দেয়। তখনই এটি হয়ে যায় মানুষের মিলনমেলা, কবি, অভিনেতা, শিক্ষক, ছাত্র সবার আড্ডার জায়গা। ১৯৫৮ সালে একবার বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। যদিও ওই বছরই সেটি আবার চালু করা হয়।

আসলে চালু হয়েছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সি কলেজের শিক্ষকদের বিশেষ রিটের কারণে। ২০০৬ সালে কফি হাউসের সংস্কারের অনেক চেষ্টা হয়েছিল।

কফি হাউসের নিয়মিত যাতায়াতকারীদের মধ্যে ছিলেন কলকাতার সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বড় তারকারাও। যেমনটা সত্যজিৎ রায়, অমর্ত্য সেন, মৃনাল সেন ও অপর্না সেনরা অহরহ আসতেন এখানে। গুণী সব মানুষের আড্ডা ছিল সাধারণের সঙ্গেই।
লেখক, সাহিত্যিক, কবি, চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে ঋতিক ঘটক, নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়দের আড্ডার অন্যতম স্থল ছিল কফি হাউস। তারা আবার এটিকে পৃষ্ঠপোষকতাও করতেন।

ছুটির দিনেও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা নানা টেবিলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। গমগম একটা ভাব পুরো রুম জুড়ে। জায়গাটাও বিশাল। অনেক টেবিল। দেয়ালে সাঁটানো আছে কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পোট্রের্ট। আছে আরও কিছু চিত্রকর্ম। ধূমায়িত কফি, কোল্ড কফি ছাড়াও অনেক খাবার পাওয়া যায় এখানে। কফির সর্বনিম্ন মূল্য ভারতীয় ১৬ রুপি।

নির্বিবাদে শতশত মানুষ আড্ডা দিচ্ছে। এক টেবিলে চারজন বসে মুখোমুখি আলোচনটা জমে যায় ক্ষণিকেই। আমাদের মতো নতুন আগুন্তকও আসেন। ছবি তোলার কাজে তাদের ব্যস্ত দেখা যায়। বাদ যায় না উপমহাদেশের বাইরের মানুষও। অনেক বিদেশিকে দেখা গেল বিখ্যাত কফি হাউসের ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হতে এসেছেন।

সংগীত শিল্পী মান্না দে কাল্পনিক চিন্তা থেকেই লিখেছিলেন ‘কফি হাউস’ গানটি। যদিও তিনি নিজে জীবদ্দশায় কখনোই নাকি পা মাড়াননি কলেজ স্ট্রিটে! তারপরও এই গান থেকেই কফি হাউস সবার হৃদয়ে গেঁথে যায়। ওই গানটাই বড়সড় পরিচিতি এনে দিয়েছে কলকাতার উদারপন্থি, সংস্কৃতমনা, প্রাণবন্ত মানুষদের আড্ডা স্থলটিকে।

কফি হাউসের পর সেদিন হাঁটতে হাঁটতে শিয়ালদহ রেলওয়ে স্টেশনটাও ঘুরে এসেছিলাম আমরা। ফুটপাতে দোকান থাকায় রাস্তুাগুলো খুব সুরু হয়ে গেছে। ট্রেনে অনেক মানুষ যাতায়াত করে বলে সেখানে রাস্তাগুলো সবসময় মানুষে গিজগিজ করে।

স্টেশনটা বেশ বড় হলেও সারাক্ষণই ভিড় লেগে থাকে। ভিড় ঠেলে ভেতরে যাওয়া ইচ্ছা কমে যাওয়ায় বাইরে ঘুরে ফিরে আমরা চলে এসেছিলাম।

চলবে...

সবগুলো পর্ব পড়তে ক্লিক করুন- ভারত ভ্রমণের দিনলিপি

 [sportsmail24.com এর ওয়েবসাইট এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও ব্রাউজ করে পড়তে পারবেন। এছাড়া অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনে স্পোর্টসমেইল২৪.কমের অ্যাপস থেকেও খেলাধুলার সকল নিউজ পড়তে পারবেন। ইনস্ট্রল করুন স্পোর্টসমেইল২৪.কমের অ্যাপস ]



শেয়ার করুন :


আরও পড়ুন

রণক্লান্ত, হারের ভারে ভারাক্রান্ত

রণক্লান্ত, হারের ভারে ভারাক্রান্ত

ক্রিকেটের স্থগিতাদেশ বাড়ালো ইংল্যান্ড

ক্রিকেটের স্থগিতাদেশ বাড়ালো ইংল্যান্ড

ক্রিকেটে পিচের আকার পরিবর্তন চান রমিজ রাজা

ক্রিকেটে পিচের আকার পরিবর্তন চান রমিজ রাজা

বৈধতা পেতে পারে বল টেম্পারিং

বৈধতা পেতে পারে বল টেম্পারিং