ব্যাঙ্গালুরু : বাংলাদেশের বেদনার প্রান্তর-১

জান-ই-আলম জান-ই-আলম প্রকাশিত: ০৯:৩০ এএম, ২২ এপ্রিল ২০২০
ব্যাঙ্গালুরু : বাংলাদেশের বেদনার প্রান্তর-১

প্রেস বক্স থেকে চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের সবুজ গালিচা

সুপার টেন পর্বে কঠিন গ্রুপে পড়লেও সেমিফাইনাল খেলার আশাবাদ ভালোভাবেই জিইয়ে ছিল বাংলাদেশ দলে। তাসকিন-সানির বিদায়টা আঘাত হেনেছিল মাশরাফি বাহিনীর আত্মবিশ্বাসের দেয়ালে। সেই ধাক্কা সমালে অবশ্য সুপার টেন-এর দ্বিতীয় ম্যাচেও জয়ের ধারায় ফিরতে পারেনি বাংলাদেশ। ২১ মার্চ অস্ট্রেলিয়ার কাছে ম্যাচ হেরে যায় তিন উইকেটে।

ফুড পয়জনিংয়ের কারণে ম্যাচটি খেলেননি তামিম ইকবাল। ইনজুরি কাটিয়ে ফিরেছিলেন মোস্তাফিজ। পরীক্ষিত পারফরমার নাসির হোসেনকে বসিয়ে রেখে আগের দিনই উড়ে আসা শুভাগত, সাকলাইন সজীবকে ম্যাচের একাদশে খেলিয়ে দেওয়া হয়। ১৫৬ রানের পুঁজিতেও ম্যাচটা জমিয়েছিল বাংলাদেশ।

৩০ বলে ৩৬ রানের সমীকরণটা সহজ হয়ে যায় অভিষিক্ত বাঁহাতি স্পিনার সাকলাইনের করা ১৬তম ওভারে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল তিন চারে ১৪ রান তুললে। পরের ওভারে মোস্তাফিজকেও দুটি ছক্কা মারেন তিনি। তাসকিন-সানির বিদায়ের শোককে শক্তি বানিয়ে জয় আনতে সমর্থ হয়নি বাংলাদেশ। কারণ দল হিসেবে ম্যাচের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অবস্থায় প্রতিপক্ষকে চেপে ধরতে পারেনি।

তবে উল্লেখযোগ্য হলো, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা যেন নিছকই খেলার জন্যই লড়েছিল। যে লড়াইয়ে আসলে প্রাণ ছিল না। সতীর্থদের বিদায়ে বেদনাহত মনের ছাপ যেন সবার শারীরিক পরিভাষা তথা বডি ল্যাঙ্গুয়েজে স্পষ্ট ছিল।

সুপার টেন পর্বে এসে টানা দুই হার। অস্ট্রেলিয়ার কাছে ওই পরাজয়ে টুর্নামেন্ট থেকে বাংলাদেশের বিদায় কার্যত ঠিক হয়ে গিয়েছিল। যা কিছু সম্ভাবনা ছিল তা সমীকরণের সুঁতোয় ঝুলছিল। ২২ মার্চ সংবাদ সম্মেলনে সাকিব আল হাসান বলেছিলেন, সেই সুক্ষ্ম সম্ভাবনাকে ভারতের বিরুদ্ধে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ। জয়ের সঙ্গে রান রেট বাড়ানোর কাজটাও করতে হবে।

২৩ মার্চই ছিল ব্যাঙ্গালুরুতে আমাদের শেষ দিন। তাই সকাল থেকেই কলকাতায় ফেরার সকল বন্দোবস্ত করতে ব্যস্ত সময় কেটেছে। হোটেলের বিল মেটানো, কলকাতার ফ্লাইটের টিকিট কেনা, রাতে হোটেল থেকে বিমানবন্দর যাওয়ার গাড়ি ঠিক করাসহ অনেক কাজই ছিল।

হোটেল থেকে স্টেডিয়ামে এসেছিলাম ম্যাচ শুরুর আগেই। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরের রাস্তাগুলোতে দেখা গেল হাজারও জনতার মিছিল। শরীরে, মুখশ্রীতে তেরঙ্গা এঁকে স্টেডিয়ামে আসছেন স্বাগতিক দর্শকরা। ধোনি বাহিনীর জার্সি সমেত দর্শক তো ছিলেনই। সেই ভিড়ে লাল-সবুজের চিহ্ন খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এবং তা খুব স্বাভাবিকই বটে। তারপরও কতিপয় বাংলাদেশ সমর্থকের দর্শন মিলেছিল।

ক্রিকেটের মানচিত্রে বাংলাদেশ-ভারত দ্বৈরথটা একতরফাই ছিল লম্বা সময় ধরে। গত কয়েক বছর ধরে দুদলের ম্যাচের গাঁয়ে লেগেছে উত্তেজনা, চাপ-তাপের স্পর্শ। বিশেষ করে সেটা সমর্থকদের আবেগের রঙে। হলফ করে বললে বলতে হয়, বাংলাদেশের সমর্থকদের দুর্দমনীয় চেষ্টাই সেটিকে নতুন উচ্চতায় এনেছে। পরবর্তীতে টাইগারদের পারফরম্যান্স যা বেগবান করেছে। এখন ভারতীয় সমর্থকরাও গাঁ জুলুনি বাক-বিতন্ডায় নাম লেখাচ্ছেন।

ভারতের জার্সি, পতাকায় সয়লাভ গোটা এলাকা। চলার পথে হঠাৎ দেখা হয়ে গেল গান্ধীনগরের সেই হোটেল বয় আশরাফের সঙ্গে। সে তখন বাংলাদেশ ও ভারতের পতাকা বিক্রি করছিল। আমাকে দেখেই এগিয়ে আসে আশরাফ। বাংলাদেশ ও মুশফিকের জন্য শুভকামনা জানায় আশরাফ।

ঘরের মাঠে শক্তিশালী ভারতের বিরুদ্ধে অবশ্য শোক ধমিয়ে ও অদম্য স্পৃহাকে মনোবল বানিয়ে খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। নিকট অতীতে সাধারণত বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচগুলোর বেশিরভাগই হয়েছিল বাংলাদেশের মাটিতে। যেখানে ভারতকে হজম করতে হয়েছিল শত্রুাতাভাবাপন্ন বিরাট সংখ্যক দর্শকের হর্ষধ্বনি। দু’দলের ম্যাচ দুই দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে আন্দোলন সৃষ্টির মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ মঞ্চে উন্নীত হওয়ার পর ভারতের মাটিতে এটিই ছিল প্রথম লড়াই।

অনুমিতভাবেই মাঠের ক্রিকেটের সঙ্গে চিন্নাস্বামীর গ্যালারিও মাশরাফিদের জন্য সুখকর অভিজ্ঞতা বয়ে আনেনি।
ম্যাচ শুরুর আগেই প্রায় পঁয়তাল্লিশ হাজার মানুষ সমস্বরে ‘ধোনি, ধোনি’ বলে চিৎকার করছেন। রীতিমতো কান ফাটানো গর্জনই পরিলক্ষিত হয় গোটা স্টেডিয়ামে। যা আপাদমস্তকই বৈরী পরিবেশ ছিল বাংলাদেশের জন্য।

এই স্টেডিয়ামে প্রেস বক্স ছোট হলেও গ্যালারিগুলো সুন্দর। প্রেস বক্সের পাশেই আছে ভিআইপি বক্স। যা বিজয় মালিহার লাউঞ্জ নামে পরিচিত। অভিজাত জায়গা। উঁচু শ্রেণির মানুষ, ধনাঢ্য ব্যক্তি তথা মালিহার অতিথিদেরই শুধু প্রবেশাধিকার আছে এখানে। ম্যাচ চলাকালীন পার্টি, খাবারের ব্যবস্থা আছে। ছোট ভাই বাংলা ট্রিবিউনের রবিউল ইসলাম রবি প্রেস বক্সে আসার পর বললো, ভাই চলেন আপনাকে একটা জায়গায় নিয়ে যাই। দারুণ জায়গা। চা খেয়ে চলে আসবো। চায়ের কথা শুনে আমিও গেলাম।

প্রেস বক্সে প্রবেশের উল্টো দরজা দিয়েই যাওয়া যায়। রবি বলেছিল, ও এখানে আগেও একদিন এসেছিল। কেউ বাধা দেয়নি। যদিও ঢোকার সময়ই আমার মনে হয়েছিল জায়গাটার প্রবেশাধিকার সীমিত। তারপরও কোনো বাধা না পেয়ে আমরা ঢুকে যাই। ব্যুফে খাবারের টেবিল ও কয়েকটি কপাট পেরিয়ে একটা খোলা জায়গা।

সোফা ফেলা আছে। চিন্নাস্বামীর সবচেয়ে পরিপাটি জায়গা বোধহয় এটি। সেখানে বসেই দুপুরের শেষাংশে গরম চা পান, প্রকৃতি দর্শন, ছবি তোলা, উপর থেকে স্টেডিয়ামের একটা পাশ দেখলাম। মিনিট দশেক অবস্থানের পর ফিরতে গিয়ে ব্যুফে টেবিলের সামনে যেতেই এক নারী পথ আগলে দাঁড়ালেন।

পরিচয় জানা ও গলায় ঝোলানো অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেখার পর তার কৌতহূল, প্রশ্ন আমরা কিভাবে এখানে আসলাম? বাধাহীন প্রবেশের কথা জানাতেই তিনি বললেন, দ্রুত প্রেস বক্সে ফিরে যেতে। এখানে আমাদের প্রবেশ করা ঠিক হয়নি। এবং আর যেন এখানে আসার চেষ্টা না করি। আমরা চলে আসার পর শব্দ শুনে মনে হলো, ওই দরজাটা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হলো!

আইপিএলে রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু দলের মালিক মালিহার লাউঞ্জে এরপর প্রেস বক্স থেকে আর কেউ প্রবেশ করতে পারেনি বলেই ধারণা করছি।

চলবে...

সবগুলো পর্ব পড়তে ক্লিক করুন- ভারত ভ্রমণের দিনলিপি

[sportsmail24.com এর ওয়েবসাইট এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও ব্রাউজ করে পড়তে পারবেন। এছাড়া অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনে স্পোর্টসমেইল২৪.কমের অ্যাপস থেকেও খেলাধুলার সকল নিউজ পড়তে পারবেন। ইনস্ট্রল করুন স্পোর্টসমেইল২৪.কমের অ্যাপস ]



শেয়ার করুন :


আরও পড়ুন

চিন্নাস্বামীর দ্রাবিড় ধারণ, মিনি প্রেস বক্স ও সইশিকারী প্রণব

চিন্নাস্বামীর দ্রাবিড় ধারণ, মিনি প্রেস বক্স ও সইশিকারী প্রণব

ইসলাম গ্রহণ করলেন অস্ট্রিয়ার রেসলিং তারকা উইলহেম ওট

ইসলাম গ্রহণ করলেন অস্ট্রিয়ার রেসলিং তারকা উইলহেম ওট

তাসকিন-সানিকে মাশরাফির অশ্রুসজল বিদায়

তাসকিন-সানিকে মাশরাফির অশ্রুসজল বিদায়

দালাইলামার মন্দিরে সাকিব ভক্ত

দালাইলামার মন্দিরে সাকিব ভক্ত