মারকুইস স্ট্রিট : কলকাতার বুকে এক টুকরো বাংলাদেশ

জান-ই-আলম জান-ই-আলম প্রকাশিত: ১০:৪১ এএম, ১৫ এপ্রিল ২০২০
মারকুইস স্ট্রিট : কলকাতার বুকে এক টুকরো বাংলাদেশ

নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হতে খুব বেশি সময় লাগেনি। রোদ চড়া সকালে আমরা বিমানবন্দর থেকে ট্যাক্সি যোগে সবাই চলে আসি মারকুইস স্ট্রিট। কলকাতার বিখ্যাত নিউ মার্কেটের সন্নিকটেই মারকুইস স্ট্রিট। জায়গাটাকে কলকাতার বুকে ‘এক টুকরো বাংলাদেশ’ বললে অত্যুক্তি হবে না।

সে গল্পে পরে আসছি। শিরদাঁড়া বেয়ে দরদরিয়ে বহমান ঘাম কলকাতার মাটির উত্তপ্ত তেজটা ততক্ষণে স্পষ্ট করে দিয়েছে। ট্যাক্সি থেকে আমরা সবাই একই হোটেলের সামনে নামলাম। ভেতরে যোগাযোগ করে পর্যাপ্ত রুম পেলাম না। চার-পাঁচজন এখানে থাকতে পারবে, এমন বন্দোবস্ত হলো।

তারপর সব লাগেজ এক জায়গায় রেখে কলকাতার রাস্তায় হোটেল খুঁজতে বেরিয়ে পড়লাম কয়েকজন। হোটেলগুলোতে রুম সঙ্কট হওয়ার মূল কারণ ছিল চলমান বিশ্বকাপ। আমরা আসার আগেই ঢাকা থেকে অনেক দর্শক কলকাতায় চলে এসেছিল বাংলাদেশ দলের খেলা দেখতে। তারা সিংহভাগই মারকুইস স্ট্রিটের হোটেলগুলোতে উঠেছেন।

‘এই যে দাদা এখানে, এখানে রুমগুলো একটু দেখুন। আরে আসুন না দাদা, ভালো হবে। সবাই একসাথে থাকতে পারবেন, একটু দেখুন তো আগে’ -এ জাতীয় কথা, ডাকে কানা ঝালাপালা হওয়ার যোগাড়।

এর মাঝে দুই-একজনকে যাও একটু বিশ্বাস করে সাথে গিয়েছি, সেখানেও মন ভরেনি রুম দেখে। এক প্রৌঢ় বললো, একটু ভেতরে ভালো একটা হোটেল আছে তার জানা মতে। আমি ও বন্ধুবর মিথুন আশরাফ (জনকণ্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার) ছুঁটলাম ওই লোকের সঙ্গে। আর একটু, আর একটু করতে করতে লোকটা প্রায় মিনিট দশেক হাঁটালো।

তারপর পুরান ঢাকার আগের দিনের বাসাগুলোর মতো তের চিপা, ঘুপছি, সরু সিড়ি, পাতাটন দিয়ে তৈরি বারান্দা জাতীয় একটা বিল্ডিংয়ে রুম দেখালো। তা দেখে মেজাজ তখন তিরিক্ষি হয়ে গেছে। দ্রুত ফিরে আসি সেখান থেকে। এদিকে আমাদের পুরো দলটা ভেঙে গেছে। চার-পাঁচজন করে গ্রুপ হয়ে দুটো হোটেলে ওঠে গেছে।

শেষ আমরা ছয়জন মিলে একটা হোটেলে উঠলাম। ততক্ষণে সূর্য মধ্যগগণে। নাওয়া-খাওয়ার পর্ব শেষে ক্লান্তি দূর করতে ভাত-ঘুমে ডুবে যাওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়নি। ল্যাপটপ সমেত ছুঁটতে হয়েছে বিশ্ব বিখ্যাত ইডেন গার্ডেন্স স্টেডিয়ামের দিকে। পরদিন (১৬ মার্চ) পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সুপার টেন পর্বে বাংলাদেশের ম্যাচ। মাশরাফিদের অনুশীলন দেখে প্রিভিউ করতে হবে। তাই ইডেনের উদ্দেশে রওনা হই সবাই।

এখন বলছি, মারকুইস স্টিট্র কেন এক টুকরো বাংলাদেশ? এখানে আপনি রাস্তায় বের হবেন দেখবেন সোহাগের (বাস) কাউন্টার, আরেকটু হাঁটলে বিআরটিসির কাউন্টার, অনেকগুলো দোকান আছে যেখানে মানি এক্সচেঞ্জের কাজটা সহজেই করা যায়। বাংলাদেশে বিক্রি হওয়া সিগারেট যেমন বেনসন, গোল্ডলিফ কিনতে পাওয়া যায় একই মোড়কে।

রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে আপনার সঙ্গে ধাক্কা খাওয়া লোকটা হতে পারে খুলনার, ঢাকার শ্যামলীর, কিংবা কুমিল্লার। মাঝ রাত পর্যন্ত ভিড় লেগে থাকা খাবার হোটেল খালেক কিংবা প্রিন্স-এ গেলেই পাওয়া যায় বাংলাদেশিদের। সীমান্তের ওপাড়ে দেশের স্বাদ, গন্ধ মিলিয়ে ‘খালেক’ হোটেল সবার কাছে জনপ্রিয়। ঢাকার মতোই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যারা এই হোটেলে খাচ্ছে, নিশ্চিত থাকতে পারেন এদের বেশিরভাগই বাংলাদেশি।

যতটুকু শুনেছিলাম, খালেক-প্রিন্স হোটেলের মালিকানায়ও নাকি বাংলাদেশিরা আছে। বলা বাহুল্য, এখানকার ব্যবসায়ীদের মূল অবলম্বন বাংলাদেশের মানুষ। আমাদের চাহিদার কথা ভেবেই তাদের দোকান সজ্জিত হয়। ভালো মানের আবাসিক হোটেল আছে। আবার সাশ্রয়ীভাবে থাকার মতো হোটেলও রয়েছে এখানে। হোটেল ভাড়াও নাগালের মাঝেই পাওয়া যায়। তবে বিশ্বকাপ উপলক্ষে ওরা একটু ভাড়া বাড়িয়েছিল। অনেক হোটেলে ওয়াইফাই সুবিধা পাওয়া যায়।

মারকুইস স্ট্রিটে সবার আসার কারণটা খুব স্পষ্ট। কেননা মিনিট পাঁচ-সাতেক হাঁটা দূরত্বেই কলকাতা নিউ মার্কেট। বাংলাদেশ থেকে অনেকেই আসেন কেনাকাটা করতে। সেক্ষেত্রে মূল্য, মান সবমিলিয়ে নিউ মার্কেট ভালো পছন্দ। তাই পরিবার সমেত অনেকেই আসেন এখানে। নিউ মার্কেটেও একটা বড় অঙ্কের ব্যবসা হয় বাংলাদেশের মানুষদের মাধ্যমে।

চলবে...

সবগুলো পর্ব পড়তে ক্লিক করুন- ভারত ভ্রমণের দিনলিপি



শেয়ার করুন :


আরও পড়ুন

দালাইলামার মন্দিরে সাকিব ভক্ত

দালাইলামার মন্দিরে সাকিব ভক্ত

স্থগিত নয়, পিছিয়ে যাচ্ছে আইপিএল

স্থগিত নয়, পিছিয়ে যাচ্ছে আইপিএল

অপ্রতুল প্রস্তুতি, বড় অভিযাত্রা

অপ্রতুল প্রস্তুতি, বড় অভিযাত্রা

ঘরে ঘরে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে মাশরাফির উদ্যোগ

ঘরে ঘরে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে মাশরাফির উদ্যোগ