ধর্মশালা থেকে ধর্মতলা

জান-ই-আলম জান-ই-আলম প্রকাশিত: ১১:৩৭ এএম, ১৪ এপ্রিল ২০২০
ধর্মশালা থেকে ধর্মতলা

জয়ের আনন্দ, সুপার টেন পর্বে উন্নীত হওয়ার স্বস্তি সবই পাওয়া গেল ধর্মশালায়। মাঝ রাতে হোটেলে ফেরায় সেদিন আর ধর্মশালা ছাড়া হয়নি আমাদের। এমনকি রাত পোহালে সকালেও যাওয়া হয়নি। কারণ, ধর্মশালার নিয়ম অনুযায়ী সকালে এখান থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায় না দিল্লি। প্রতিদিনই বিকেলে তথা সন্ধ্যার আগে বাস পাওয়া যায় দিল্লি যাত্রার জন্য। পর্যটকের পকেট কাটার জন্য এটা ভালো বুদ্ধি স্থানীয়দের।

বিমানের ফ্লাইট অবশ্য আছে। ট্যাক্সিতে যেতে বাধা নেই। কিন্তু ১০ ঘণ্টার পথ ট্যাক্সিতে চড়া সুখকর হবে না। তাছাড়া সাথে ব্যাগ, লাগেজের বিষয় তো আছেই। ট্যাক্সিতে চন্ডিগড় যাওয়া যায় ৪-৫ ঘণ্টায়। তারপর সেখান থেকে বাসে দিল্লি। সবকিছু মিলিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, এত ঝক্কিতে না গিয়ে বাসেই দিল্লি যাব।

এবার ধর্মশালা ছেড়ে যাওয়ার সময় এসে গেল। কিন্তু মনের মাঝে সত্যিই গেঁথে গিয়েছিল শহরটার অপূর্ব প্রকৃতি। শেষবেলায় যেন ছেদের সুরই বেজে উঠল মনে। ১৪ মার্চ বিকেলে ধর্মশালা ছেড়ে যাওয়ার বাস।

দুপুরের দিকে কিছু নিউজ পাঠানোর অভিপ্রায়ে আমরা হোটেল থেকে বের হই সাইবার ক্যাফে খুঁজতে। স্থানীয়দের সাহায্যে ঢালু, উঁচু পথ বেয়ে চলছি। মিনিট বিশেক হাঁটার পর পাওয়া গেল সাইবার ক্যাফে। সেখানে ঘণ্টা দুয়েক কাজ করেছি আমরা। পাসপোর্টের কপি জমা দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাওয়া গেল।

অবাক করা হলেও সত্য যে, এই শহরে বাংলাদেশিও পেয়েছিলাম আমরা। কাজ শেষে পাশের গলিতে চা খেতে যাই সবাই। চা দোকানি কথা বলতে বলতে জানলেন, তারা বাংলাদেশি। তখন নিজেও জানালেন, তার বাড়ি চট্টগ্রাম। পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষটা স্মৃতি চারণ করলেন বাংলাদেশের। খুব ছোট বয়সে চট্টগ্রাম থেকে কলকাতায় চলে যায় তার পরিবার। পরে কলকাতা ছেড়ে চলে আসে এই ধর্মশালায়। কিন্তু চট্টগ্রামকে ভুলেননি। আগের রাতে সেঞ্চুরি করা তামিম যে চট্টগ্রামের ছেলে সেটাও জানা আছে তার।

বাস ছাড়ার সময় হয়ে গেল দেখতে দেখতে। মজার বিষয় হলো, ছয় দিনের সফরে ধর্মশালায় লাল চা খুঁজেছি অনেক। সেভাবে পছন্দসই দোকান পাইনি। কিন্তু বাসে উঠার মিনিট ত্রিশেক আগে আমাদের হোটেলের ঠিক সামনেই ছোট্ট একটা দোকানে পাওয়া গেল লাল চা এর সন্ধান। হোটেলের ১০০ গজের মধ্যে ছিল কাঙ্ক্ষিত চায়ের দোকান অথচ এই ক’দিন দিব্যি খুঁজে বেড়ালাম আমরা সর্বত্র। শেষবেলায় পছন্দের চা না পাওয়ার অতৃপ্তিও ঘুচিয়ে দিল ধর্মশালা।

পুরো সফরে হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (এইচপিসিএ) তাদের আতিথেয়তা দিয়ে ধর্মশালার প্রতি আমাদের মুগ্ধতা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল। এইচপিসিএ’র কর্মকর্তারা হোটেলে এসে বিদায় জানালেন। হাসিমুখে হাতে ধরিয়ে দিলেন একটি করে সুভ্যেনির বক্স। বলা বাহুল্য, ওই কয়েকদিনে এখানকার কর্মকর্তাদের আমাদের প্রতি আন্তরিকতা ছিল অতুলনীয়।

বাংলাদেশের সাংবাদিকদের দেখভালের ক্ষেত্রে প্রতিটি কাজই তারা সচারুভাবে সম্পন্ন করেছেন। হোটেল থেকে স্টেডিয়ামে নেওয়া, রাতে ফেরত আনা, আনুসাঙ্গিক সুবিধাদি, প্রয়োজন মেটানোসহ সার্বিকভাবে আমরা পূর্ণ অতিথির মর্যাদাই পেয়েছিলাম এইচপিসিএ থেকে। অবশ্য এইচপিসিএ’র সভাপতি অনুরাগ ঠাকুর পরে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডেরও সভাপতি হয়েছিলেন।

পড়ন্ত বিকেল। সূর্যিমামা হেলে পড়ছে। ভলবো বাসে চেপে আমাদের ধর্মশালা ছাড়ার পালা। বাসে বসে পর্দা সরিয়ে বারবার দেখছিলাম শহরটাকে। যেন চোখে, মনে এখনও সাজানো পরিপাটি নিরুত্তাপ ধর্মশালা শহরটা ভাসছে। আঁকা-বাঁকা পথ, ঢালু পথ বেয়ে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে বাস। সন্ধ্যা নেমে আসার আগেই ধর্মশালা শহর পার হয়ে যাই আমরা।

বাস চলার ঘণ্টা খানেক না যেতেই ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা হলো। বাসে থাকা স্থানীয় মানুষজন শুরু করেন ‘বমি’! বাস থেকে পলিথিন দেওয়া হয়েছিল। আমাদের কেউ অবশ্য বমি করেননি। কিন্তু স্থানীয়দের এমন একের পর এক বমি হওয়া দেখে আমরা অবাক। কারণ তারাই এই পথে আমাদের চেয়ে বেশি অভ্যস্ত।

পরে এক প্রৌঢ় জানালেন, এই পাহাড়ি উঠা-নামার রাস্তায় চলতে গেলে এখানকার অনেক লোকেরই এমন বমি হয়। তবে ধর্মশালার পাহাড় বেষ্টিত রাস্তা পার হতেই পরিবেশ স্বাভাবিক হয়ে আসে।

আমাদের গন্তব্য এখন দিল্লি। এরই মধ্যে আমাদের সহযাত্রীর তালিকায় কিছু পরিবর্তন হয়। কয়েকজন বিভিন্ন চলে গেছে নিজের মতো করে। নতুন করে যোগ হয়েছে কয়েকজন। তাদের মধ্যে বিসিবির লজিস্টিকস বিভাগের ম্যানেজার কাওসার আজম সজীব আমাদের সহযাত্রী হয়েছিলেন।

মধ্যরাতে পাঞ্জাব এসে আমাদের বাসটা থেমেছিল। সেখানেই রাতের খাবার খেয়েছিলাম সবাই। ভোরের আলো ফোটার আগেই আমরা পৌঁছে যাই ভারতের রাজধানী দিল্লিতে। ৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়া শেষে বাস স্ট্যান্ড থেকে ট্যাক্সি যোগে যাই দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। আবশ্যক আনুষ্ঠানিকতা শেষে হালকা নাস্তা করেছিলাম সবাই। সকাল ৮টা ৫ মিনিটের ফ্লাইটে শুরু হয় আকাশ পথে আমাদের কলকাতা যাত্রা।

ঘুম-ঘুম চোখগুলো আর মেলে থাকার দরকার হয়নি। বিমান আকাশে উড্ডয়নের পর ধীরে ধীরে আমরা বেশিরভাগই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ২ ঘণ্টা ১০ মিনিটের ফ্লাইটে সময় কাটাতে ঘুম আসলেই মোক্ষম অস্ত্র ছিল।

ধর্মশালা থেকে ‘সিটি অব জয়’ খ্যাত কলকাতায় এসে পৌঁছাই আমরা রোদ্রকোজ্জল সকালে। দিল্লি আসার পরই কমে এসেছিল ঠান্ডার প্রতাপ। সকাল ১০টার পর কলকাতায় নামার পর অনুভব করলাম আবহাওয়া যেন খলনলচে বদলে গেল। যদিও তা স্বাভাবিক ও প্রত্যাশিত ছিল। এখানে রোদের তাপ প্রচুর। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বিমানবন্দর থেকে বের হতেই রীতিমতো ঘামছি সবাই।

বলে রাখা ভালো দিল্লি থেকে একই ফ্লাইটে আমরা বাংলাদেশি প্রায় ১৫ জন সাংবাদিক কলকাতায় এসেছিলাম।

চলবে...

সবগুলো পর্ব পড়তে ক্লিক করুন- ভারত ভ্রমণের দিনলিপি



শেয়ার করুন :


আরও পড়ুন

ভাগসুর ঝর্ণা, অনন্যার মাশরাফি প্রেম ও তামিমের সেঞ্চুরি

ভাগসুর ঝর্ণা, অনন্যার মাশরাফি প্রেম ও তামিমের সেঞ্চুরি

দালাইলামার মন্দিরে সাকিব ভক্ত

দালাইলামার মন্দিরে সাকিব ভক্ত

ধর্মশালার শীতলতা ও মনোহর প্রকৃতি

ধর্মশালার শীতলতা ও মনোহর প্রকৃতি

মিশন ধর্মশালা

মিশন ধর্মশালা