থ্রি বাইটস, নো কার্ড!

পার্থ প্রতীম রায় পার্থ প্রতীম রায় প্রকাশিত: ০৪:১৮ পিএম, ২৩ জুলাই ২০২২
থ্রি বাইটস, নো কার্ড!

২০১৪ ব্রাজিল ফুটবল বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছিল লুইস সুয়ারেজের কামড়! সেটি ছিল ফুটবল মাঠে প্রতিপক্ষ ফুটবলারকে সুয়ারেজের কামড় দেওয়ার তৃতীয় ঘটনা। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, প্রতিপক্ষকে তিনবার কামড় দিয়ে একটি বারও লাল কার্ড তো দূরে থাক, হলুদ কার্ডও দেখেননি। কার্ড না দেখলেও ঘটনাগুলোর পর তাকে দীর্ঘমেয়াদী নিষেধাজ্ঞায় থাকতে হয়েছে।

প্রতিপক্ষকে কামড়ে দেওয়ার ঘটনায় লুইস সুয়ারেজ প্রথম নজরে আসেন ২০১০ সালে। ডাচ ক্লাব আয়াক্স আমস্টারডামে খেলার সময় প্রতিপক্ষ ক্লাব পিএসভির ওটমান বাক্কালকে কামড় দিয়ে বসেন। সবার সামনে কামড় দেওয়ার এই ঘটনা অবিশ্বাস্যভাবে এড়িয়ে যায় রেফারির চোখ।

রেফারির নজরে না পড়লেও নিজের জার্সি সরিয়ে বিষয়টি রেফারির নজরে আনার চেষ্টা করেছিলেন বাক্কাল। রেফারি বিষয়টি দেখলেও শেষ পর্যন্ত তার মন না গলায় ওই ম্যাচে সুয়ারেজকে কোনো কার্ডই দেখতে হয়নি।

রেফারি ঘটনা আমলে না নিলেও ম্যাচ শেষ ডাচ লিগ কর্তৃপক্ষ তদন্তে নামে। সেখানে সাত ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় লুইস সুয়ারেজকে। এ ঘটনার পরেই ডাচ লিগে আয়াক্সের প্রতিপক্ষ সমর্থকরা তার ডাক নাম দেন ‘আয়াক্সের নরখাদক।’

আরও পড়ুন- মেসির পাঁচ গোল সমাচার: যেখানে তিনিই একমাত্র

ঢেঁকি নাকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাঙে! সেই কথার যথার্থ প্রমাণ দিয়েছিলেন সুয়ারেজ। আয়াক্সে তার দারুণ ফর্ম দেখা গিয়েছিল লিভারপুলের জার্সিতে। শুধু ফর্ম নয়, কামড় দেওয়ার পুরোনো অভ্যাস অলরেড জার্সিতেও ধরে রেখেছিলেন লুইস সুয়ারেজ।

২০১৩ সালে প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে চেলসি ডিফেন্ডার ব্রানিস্লাভ ইভানোভিচের বাহুতে কামড় দিয়ে বসেন সুয়ারেজ। এবারও অবিশ্বাস্যভাবে তা এড়িয়ে যায় রেফারির চোখ। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ার পরও কোনো কার্ড ছাড়াই বেঁচে গিয়েছিলেন সুয়ারেজ।

প্রথমবারের ঘটনায় অনুতাপ প্রকাশ না করলেও ইভানোভিচকে কামড় দিয়ে অনুতপ্ত হয়েছিলেন। সংবাদমাধ্যমে অনুতাপ প্রকাশ করার পরও এই উরুগুইয়ান নিজের বড় শাস্তি আটকাতে পারেননি। প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ তাকে নিষিদ্ধ করেছিল ১০ ম্যাচ।

sportsmail24

প্রথম থেকে দ্বিতীয় ঘটনা ঘটাতে তিন বছর অপেক্ষা করালেও তৃতীয় ঘটনা বেশ দ্রুতই ঘটিয়েছিলেন। দ্বিতীয় কামড়ের ঘটনার এক বছর পরে আবারো প্রতিপক্ষকে কামড় দেন সুয়ারেজ। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে উরুগুয়ের প্রতিপক্ষ ছিল ইতালি। ম্যাচ জিতলেই দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত এমন সমীকরণ নিয়ে মাঠে নামা দু’দলই ছিল গোল করতে মরিয়া।

ম্যাচের ৭০ মিনিটের দিকে ইতালিয়ান ডিফেন্ডার জর্জিও চিয়েলিন্নির কাঁধে কামড় বসিয়ে দেন সুয়ারেজ। যদিও বিশ্বকাপ শুরুর আগে নিজের ‘ব্যাড বয়’ ইমেজ সরিয়ে রাখার কথা বলেছিলেন। ব্রাজিল বিশ্বকাপে নিজের পরিচ্ছন্ন ইমেজ ফেরানোর চেষ্টায় ব্যর্থ ছিলেন।

চিয়েলিন্নিকে কামড়ানোর ওই দৃশ্যও দৈবক্রমে এড়িয়ে যায় ম্যাচ রেফারির চোখ। নিজের জার্সি সরিয়ে বাক্কালের মতো রেফারির দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছিলেন চিয়েলিন্নিও। তবে কাজ হয়নি, তৃতীয়বার একই ঘটনা ঘটিয়ে কার্ড থেকে বেঁচে যান সুয়ারেজ।

আরও পড়ুন- দুঃস্বপ্নের বার্সেলোনা অধ্যায়, যেভাবে থেমে যায় আগুয়েরোর ক্যারিয়ার

ওই সময় কার্ড থেকে বেঁচে গেলেও ফিফার নিষেধাজ্ঞা থেকে নিজেকে রেহাই দিতে পারেননি। চিয়েলিন্নিকে কামড়ানোর অপরাধের সবধরনের ফুটবল থেকে চার মাসের জন্য সুয়ারেজকে নিষিদ্ধ করা হয়।

ফিফার এই নিষেধাজ্ঞা সুয়ারেজের জন্য হয়ে উঠে আশীর্বাদ স্বরুপ। চার মাস পর ফুটবলে ফিরে নিজের সেই ‘ব্যাড বয়’ ইমেজকে অতীত করে, পরিচ্ছন্ন এক ইমেজ তৈরি করে নেন সুয়ারেজ।

সুয়ারেজ কামড়ের ঘটনায় একটি বারও দেখেননি লাল কার্ড। মজার বিষয় হলো, যে ম্যাচগুলোতে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারকে সুয়ারেজ কামড় দিয়েছেন, একটিতেও হারেনি তার দল। আর প্রত্যেকবারই রেফারির দৃষ্টি এড়িয়ে যাওয়ায় বেঁচে গেছেন কার্ড থেকে। রেফারির দৃষ্টিতে পড়লে একটি বারও হয়তো এড়াতে পারতেন না লাল কার্ড!

স্পোর্টসমেইল২৪/পিপিআর



শেয়ার করুন :


আরও পড়ুন

ডকট্রোভ: ফুটবল রেফারিং করা ডোমিনিকান ক্রিকেট আম্পায়ার

ডকট্রোভ: ফুটবল রেফারিং করা ডোমিনিকান ক্রিকেট আম্পায়ার

ফুটবলের সাথে আগাচ্ছে ব্রাজিলের নারী ক্রিকেট

ফুটবলের সাথে আগাচ্ছে ব্রাজিলের নারী ক্রিকেট

২০১৪ বিশ্বকাপজয়ী জার্মান তারকাদের গল্প

২০১৪ বিশ্বকাপজয়ী জার্মান তারকাদের গল্প

একই ক্লাব মাতানো দশ ‘পিতা-পুত্র’

একই ক্লাব মাতানো দশ ‘পিতা-পুত্র’