ফুটবল বিশ্বে ক্লাব প্রতিযোগিতায় নির্দিষ্ট খেলোয়াড় নিয়ে কাড়াকাড়ি নতুন নয়। একজন খেলোয়াড়ের পিছনে একসাথে একাধিক ক্লাবের দৌড়ানোর অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে।
এই যেমন ধরুণ, সম্প্রতি ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটিতে যোগ দেওয়া আরলিং হল্যান্ডের কথা। হয়তো জনেন বা হয়তো জানেন না, তিন বছর আগে হল্যান্ডকে দলে ভেড়ানোর খুব কাছেই ছিল আরেক ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা হয়নি।
এরকম অসংখ্য ফুটবলার রয়েছে, যাদের দলের ভেড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল রেড ডেভিলরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হতাশ হতে হয়েছে তাদের। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এরকম কিছু ‘চেয়েও না পাওয়ার’ ইতিহাস পাঠকদের জন্য তুলে ধরেছে স্পোর্টসমেইল২৪.কম।
সাদিও মানে
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোচ হিসেবে স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের ২৭ বছরের অধ্যায় শেষ হয় ২০১৩ সালে। ফার্গুসন পরবর্তী যুগে ওল্ড ট্রাফোর্ডে প্রথম কোচ হয়ে গিয়েছিলেন ডাচ কোচ লুইস ভান গাল।
কোচ হয়ে আসার পর ইংলিশ ক্লাব সাউদাম্পটন থেকে সেনেগাল স্ট্রাইকার সাদিও মানেকে ইউনাইটেডে নিয়ে আসার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন, ক্রমাগত চাপ দিয়ে যাচ্ছিলেন ক্লাবের উপর।
কিন্তু কোচের চাহিদা পূরণ করতে পারেনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। সাউদাম্পটনের সঙ্গে আলোচনা শুধু দীর্ঘ হয়েছে! কাজের কাজ কিছু হয়নি। বরং ২০১৫ সালে তাদের মুখের সামনে থেকে মানেকে ৩৪ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে ছিনিয়ে নিয়ে যায় আরেক ইংলিশ ক্লাব লিভারপুল।
সাত বছর পর সাদিও মানে এখন বিশ্বের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার। ইতিমধ্যে লিভারপুলের হয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ (ইপিএল), চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপাও জিতেছেন। অথচ এদিকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এখন নিয়মিত চ্যাম্পিয়নস লিগও খেলতে পারছে না।
টনি ক্রুস
একুশ শতকের দলবদলে রিয়াল মাদ্রিদে ভেড়া অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার জার্মানির টনি ক্রুস। টনির প্রতি চোখ ছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে কোচ থাকা ডেভিড ময়েসের।
মাত্র আট মাসের ওল্ড ট্রাফোর্ড অধ্যায়ের শুরুতেই ক্রুস্কে দলে টানতে চেয়েছিলেন তিনি। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ঢেলে সাজানোর ক্ষেত্রে ক্রুসকে দলে ভেড়ানো অপরিহার্য বলে মনে করছিলেন তিনি।
অথচ ইউনাইটেড তার এই চাওয়া পূরণে কিছুই করতে পারেনি। গুঞ্জন ছিল পরবর্তী মৌসুমে ওল্ড ট্রাফোর্ডে আসার জন্য ক্রুসের সঙ্গে ময়েসের মৌখিক কথাবার্তাও হয়ে গেছিল।
তবে মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই বিদায় ঘন্টা বেজে যায় ময়েসের! ফলে টনিকেও আর দলে ভেড়ানো হয়নি ইংলিশ ক্লাবটির।
পিটার বিয়ার্ডসলে
১৯৮৬ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোচের দায়িত্ব পান স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন। ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে ১৯৮৭ সালে নিউক্যাসল থেকে মিডফিল্ডার পিটার বিয়ার্ডসলেকে দলে ভেড়াতে চেয়েছিলেন তিনি।
তবে ইউনাইটেডকে রীতিমতো মুখের উপর না করে দেন। ইউনাইটেডের ৩ মিলিয়ন ইউরোর প্রস্তাব ফিরিয়ে মাত্র ১.৯ মিলিয়ন ইউরোতে লিভারপুলে যোগ দেন তিনি।
জর্ডান হেন্ডারসন
অ্যালেক্স ফার্গুসন নানা সময়েই লিভারপুল ডিফেন্ডার জর্ডান হেন্ডারসনের প্রতি মুগ্ধতা জানিয়েছেন। সান্ডারল্যান্ডে থাকাকালীন জর্ডানকে ওল্ড ট্রাফোর্ডে উড়িয়ে আনার জন্য বেশ আগ্রহী ছিলেন তিনি।
ব্যয়বহুল ট্রান্সফার: ব্যর্থ দশ ফুটবলার
কিন্ত পরবর্তীতে ইউনাইটেডেড় মেডিকেল বিভাগ পরামর্শ দেয় জর্ডানকে না কেনার। কারণ জর্ডানের দৌড়ানোর গতি নাকি তাকে ঘনঘন ইনজুরিতে ফেলে দিবে। ফলে জর্ডানকে পরবর্তীতে আর কেনা হয়নি।
করিম বেনজেমা
বর্তমানে ফুটবল বিশ্বের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার রিয়াল মাদ্রিদের ফরাসি তারকা করিম বেনজেমা। ২০০৯ সালে রিয়াল মাদ্রিদ ভেড়ানোর আগে তার উপর চোখ ছিল রেড ডেভিলদের।
একই বছর রিয়ালের কাছে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে বিক্রি করে ম্যানইউ। তার জায়গা পূরণে বেনজেমাকেই প্রথম পছন্দ ছিল তাদের। কিন্তু ম্যানউইউকে হতাশ করে ২৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে করিম বেনজেমাকে দলে ভেড়ায় স্প্যানিশ ক্লাবটি।
আরলিং হল্যান্ড
ইতালিয়ান ক্লাব বরুশিয়া ডর্টমুণ্ডের খেলোয়াড় আরলিং হল্যান্ডকে দলে ভেড়াতে রীটিমতো লড়াই করেছে ম্যানচেস্টার সিটি ও রিয়াল মাদ্রিদ। শেষ হাসিটা সিটিই হেসেছে। তবে তিন বছর আগে সবকিছু ঠিকঠাক হলে গল্পটা অন্যরকম হতে পারতো। ২০১৯ সালে হল্যান্ডকে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।
তখনকার কোচ ওলে আর হল্যান্ড একই দেশের হওয়ায় কাজটা সহজ বলেই ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু অর্থ নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় বরুশিয়া ডর্ট্মুন্ডে পাড়ি জমান হল্যান্ড।আজকের হল্যান্ডকে দেখে তাই ইউনাইটেডের আফসোসেই পোড়ার কথা।
স্পোর্টসমেইল২৪/এসকেডি