বড় স্বপ্ন নিয়ে ম্যানচেস্টার সিটি থেকে বার্সেলোনায় পাড়ি জমিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন তারকা ফুটবলার সার্জিও আগুয়েরো। কিন্তু কাতালান ক্লাবটিতে সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হতে বেশিদিন সময় লাগেনি। বিধাতাই হয়তো চাননি তিনি বার্সেলোনার জার্সিতে লম্বা সময়ের জন্য খেলুক। তাই বলে বার্সেলোনায় যোগ দেওয়ার সাথে সাথেই তার ক্যারিয়ারও শেষ হয়ে যাবে! আগুয়েরো তার বার্সেলোনা অধ্যায়ের শুরুতেই পেয়েছিলেন বড় এক ধাক্কা, শেষও হয়েছে আরো বড় এক ধাক্কা দিয়ে!
সবসময়ই ক্লাব ক্যারিয়ারে জাতীয় দল সতীর্থ এবং দীর্ঘদিনের বন্ধু লিওনেল মেসির সাথে খেলতে চেয়েছিলেন সার্জিও আগুয়েরো। সেই আশা নিয়েই স্প্যানিশ ক্লাবটিতে যোগ দিয়েছিলেন এই আর্জেন্টাইন। ইচ্ছা ছিলো দীর্ঘদিনের জাতীয় দলের সতীর্থ ও ছোটবেলার বন্ধু মেসির সাথে একই ক্লাবে খেলবেন।
অথচ কাতালান শিবিরে যোগ দিয়ে মেসির সাথে একসাথে ম্যাচ খেলা তো দূরের থাক, অনুশীলনও করার সুযোগ পাননি। কারণ বিধাতা যে অন্য কিছু ঠিক করে রেখেছেন! না হলে আগুয়েরো আসার পর পরই কেন মেসি বার্সেলোনা ছাড়তে বাধ্য হবেন! বার্সেলোনায় এসে প্রথম ধাক্কাটাই লেগেছে প্রিয় বন্ধুকে সতীর্থ হিসেবে না পেয়ে।
এরপরে মাঠে নামার আগেই পুরোনো ইনজুরির কবলে পড়েন! যে ইনজুরির কারণে ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে নিজের শেষ দুই-তিন মৌসুমে মাঠে নিয়মিত হতে পারেননি। সেই ইনজুরি দিয়েই শুরু হয় তার বার্সেলোনা অধ্যায়।
আগুয়েরোর এক গোল ম্যানচেস্টার সিটির ইতিহাসই পাল্টে দিয়েছে। অথচ ইনজুরি তাকে শেষ দিকে এসে একদম অতিথি খেলোয়াড় বানিয়ে দিয়েছিলো। একের পর এক ইনজুরি সাথে সিটিজেন কোচ পেপ গার্দিওয়ালার কৌশলের সাথে খেলার ধরণের সাথে কতটুকু মানিয়ে নিতে পারবেন তা নিয়েও উঠা প্রশ্নে থমকে গিয়েছিল আগুয়েরোর ইংল্যান্ড অধ্যায়! তবে কোচকে সন্তষ্ট করতে নিজের খেলার কৌশল রাতারাতি বদলেও ফেলেছিলেন! গার্দিওয়ালার অধীনেই তার পা থেকে এসেছিল ৬৭ গোল। দেখিয়ে দিয়েছিলেন চ্যাম্পিয়ন ফুটবলাররা যে কোন পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেন।
এরপরও হয়তো তাকে নিয়ে সন্তষ্ট হতে পারেননি গার্দিওয়ালা। তাই জানিয়ে দেন তার পরিকল্পনায় খুব একটা গুরুত্ব পাবেন না এই আর্জেন্টাইন। যদিও আগুয়েরোর বিদায়বেলায় গার্দিওয়ালার চোখ থেকে ঝড়েছিল অশ্রু। জানিয়েছিলেন, সিটি কখনোই আগুয়েরোর বিকল্প পাবে না।
ম্যানচেস্টার সিটি থেকে বিদায় নিয়ে বার্সেলোনায় গেলেন। বন্ধু মেসির সাথে খেলার স্বপ্ন পূরণ না হলেও হয়তো ভেবেছিলেন নতুন করে স্পেনে ক্যারিয়ার শুরু করবেন। কিন্তু সেখানেও ইনজুরি এসে বাঁধ সাধলো। কোন ম্যাচ খেলার আগেই ইনজুরিতে ছিটকে গেলেন মাঠের বাইরে। এতেই বার্সেলোনায় যোগ দেওয়ার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বড় দুইটি ধাক্কা সামলাতে হয় এই আর্জেন্টাইন ফুটবলারকে। মানসিকভাবে ঠিক কেমন অবস্থায় ছিলেন সেটা একমাত্র তিনিই জানেন। অবশ্য তার সাথে ইনজুরির ঘনিষ্ট সম্পর্ক তো অনেকদিনেরই!
বাঁধা কাটিয়ে মাঠে ফিরলেন, বহু কাঙ্খিত বার্সেলোনার হয়ে অভিষেক ম্যাচও খেলেছেন। এমনকি এল ক্লাসিকোতে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে গোলও করলেন। ভেবেছিলেন হয়তো বিপদ কেটে গেছে, এখন সামনে অপেক্ষাটা সুদিনের! আর এদিকে বিধাতা হয়তো আগুয়েরোর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছিলেন। বলছিলেন তুমি তো জানো না তোমার জন্য কি অপেক্ষা করছে!
সার্জিও আগুয়েরো ক্যারিয়ারে অসংখ্যবারই ইনজুরিতে পরেছেন। ইনজুরি কাটিয়ে ফিরেও এসেছেন, কিন্তু কখনো দুঃস্বপ্নেও হয়তো কল্পনা করেননি তার জীবনে এমন এক ইনজুরি আসবে যেটা তার ক্যারিয়ারকেই শেষ করে দিবে।
অনেক স্বপ্নের ক্লাব বার্সেলোনায় তার ক্যারিয়ারের মেয়াদ শেষ হলো মাত্র চার ম্যাচে! লা-লিগায় ৩০ অক্টোবর আলভেসের বিপক্ষে খেলছিলেন আগুয়েরো। ম্যাচের এক পর্যায়ে বুকে ব্যথা অনুভব করছিলেন আগুয়েরো। এমনকি কথাও বলতে পারছিলেন না ঠিকমতো। সাথে সাথেই তাকে মাঠে থেকে সরাসরি হাসপাতালে নেওয়া হয়।
চিকিৎসকরা একাধিক টেস্ট করেন। তবে এরপর চিকিৎসকেরা যেটা বললেন সেটার জন্য আগুয়েরো দুঃস্বপ্নেও হয়তো প্রস্তত থাকতেন না। বাস্তবেও তিনি একেবারেই প্রস্তত ছিলেন না।
চিকিৎসকেরা তাকে জানান তিনি যদি আবারো ফুটবল মাঠে নামেন তাহলে এর চেয়েও বড় দুঃস্বপ্ন অপেক্ষা করছে তার জন্য! এ কথা শুনে যেন আকাশ ভেঙে পড়লো আগুয়েরোর মাথায়।
কিন্তু কি আর করবেন! বিধাতার উপরে তো আর কেউ থাকে না! বিধাতায় হয়তো চাচ্ছিলেন না আগুয়েরো মাঠে নিজের পায়ের জাদুতে ফুটবল সমর্থকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখুক। এরপরই পুরো বিশ্বকে জানিয়ে দেন বুটজোড়া উঠিয়ে রাখছেন! জানিয়ে দেন আর ফুটবলটাই খেলবেন না!
ফুটবল ক্যারিয়ারে ম্যানচেস্টার সিটির পুনরুত্থানে সার্জিও আগুয়েরোর ভূমিকা ভাষায় বর্ণনা করা যাবে না। দশ বছরে ম্যানচেস্টার সিটি ভবিষ্যৎ রুপরেখা পাল্টে দিয়েছেন এই আর্জেন্টাইন। একটা গোলের গুরত্ব যে ঠিক কতটা হতে পারে সেটা দশ বছর আগের ম্যানসিটি আর বর্তমান সিটিকে দেখলেই বোঝা যায়।
বার্সেলোনার হয়েও নিজেকে উজাড় করে দিতে চেয়েছিলেন। কে জানে, সুযোগ পেলে হয়তো বার্সেলোনার হয়েও কোন ইতিহাস গড়ে ফেলতে পারতেন আগুয়েরো। কিন্তু সেই সুযোগটা মেলেনি! বিধাতা যে তার জন্য অন্য কিছু ঠিক করে রেখেছিলেন। যে কারণে মাত্র ৩৩ বছর বয়সেই তাকে বুটজোড়া তুলে রাখতে হয়েছে।
স্পোর্টসমেইল২৪/এসকেডি/পিপিআর