পৃথিবীতে আসার পর কখনোই নিজের জন্মদাতা বাবা-মাকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি এই ক্রিকেটারের। এক ইংলিশ দম্পতি তাকে দত্তক নিয়েছিলেন। ৬ মাস বয়স থেকেই দত্তক বাবা-মায়ের ঘরে জীবন শুরু হয় তার। এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন কার কথা বলছি! হ্যাঁ, আপনার ধারণাই সঠিক। বলছি সদ্য প্রয়াত অজি ক্রিকেটার অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসের কথা।
ক্রিকেট মাঠে নানা কারণে অসংখ্যবার বিতর্কের মুখে পড়েছেন সাইমন্ডস। একদমই নিজের খেয়ালে চলতে পছন্দ করতেন। ক্রিকেট ক্যারিয়ারে যতটা না মাঠের ক্রিকেটের জন্য আলোচনায় থাকতেন তার চেয়ে বেশি খামখেয়ালি নানা বিতর্কিত কাজের জন্য।
ব্যক্তিগত জীবনে নানা চড়াই উৎরাই পার করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন। অস্ট্রেলিয়ার জার্সি গায়ে ২০০৩ ও ২০০৭ সালে টানা দুইবার বিশ্বকাপ শিরোপা জিতেছেন সাইমন্ডস। চরম অগোছালো প্রতিভাবান বলে যাকে বোঝায় সাইমন্ডস যেন তার জ্বলন্ত প্রমাণ ছিলেন। হ্যাঁ ‘ছিলেন’ বলতে হচ্ছে। কারণ এই ধরাধামে তিনি আর নেই। মর্মান্তিক এক গাড়ি দুর্ঘটনায় পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন তিনি।
সাইমন্ডসের পুরো জীবনটাই নানা ঘটনায় ঘটনাবহুল। তবে সাইমন্ডসেরও কিছু অজানা তথ্য রয়েছে যেগুলো আপনার দৃষ্টি এড়িয়েও যেতে পারে। এমনই কিছু তথ্য পাঠকদের জন্য তুলে ধরেছে স্পোর্টসমেইল২৪.কম।
২৭ বছরের ছক্কার রেকর্ড
১৯৯৫ সালে কাউন্টি ক্রিকেটে অভিষেক হয় সাইমন্ডসের। অভিষেক ম্যাচেই গ্লাস্টারশায়ারের হয়ে গড়ে ফেললেন অসাধারণ এক রেকর্ড। মাত্র ২০ বছর বয়সে অভিষেকেই এমন একটা সময়ে ব্যাটিংয়ে আসলেন দল যখন ভয়াবহ ব্যাটিং বিপর্যয়ে।
কিন্ত সাইমন্ডসের মত চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটাররা তো নিজের আগমণি বার্তা দেওয়ার জন্য এরকম প্রতিকূল পরিবেশকেই বেছে নেন। সেদিন ব্যাট হাতে প্রতিপক্ষের উপর যে তাণ্ডবলীলা চালিয়েছিলেন তাতে করে প্রতিপক্ষের বোলারদের অবস্থা যেন ‘ছেড়ে দে মা কাইন্দে বাঁচি’ হয়ে গিয়েছিল।
২৫৪ রানের টর্নেডো ইনিংস খেলার পথে ১৬ বার বলকে উড়িয়ে মাঠের বাইরে পাঠিয়েছিলেন তিনি। ১৯৯৫ সালে করা রেকর্ড কাউন্টি ক্রিকেটে অক্ষ্যত ছিল ২৭ বছর! কিছুদিন আগে সদ্য দায়িত্ব পাওয়া ইংলিশ অধিনায়ক বেন স্টোকস এক ম্যাচে ১৭ ছক্কা হাঁকিয়ে সাইমন্ডসের রেকর্ড ভেঙেছেন।
চ্যারিটির অর্থ সংগ্রহের জন্য চুল দান
অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসের নাম শুনলে প্রায় অধিকাংশ ক্রিকেট প্রেমীর কল্পনায় অবয়ব আসবে ঠিক এমন, 'রঙিন ঝাঁকড়া কোকড়ানো চুল এবং সানস্ক্রীন ক্রিম মাখানো ঠোঁট।' টানা ছয় বছর এরকম চুল রাখার পর ২০০৯ সালে একটি চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য তার এই বিখ্যাত চুল দান করে দেন তিনি। ঐ বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি একটি টিভি চ্যানেলের লাইভ অনুষ্ঠানে মাথা শেইভ করে চুল দিয়ে দেন সাইমন্ডস।
যে কারণে ডাক নাম হলো ‘রয়’
সাইমন্ডসকে সবাই আদর করে ডাকতেন ‘রয়’ নামে। কিন্তু কেন তার ডাকনাম রয়, এটা কি জানেন? ছোটবেলা থেকে বাস্কেটবল খেলাটার বড় ভক্ত ছিলেন সাইমন্ডস। অজি বাস্কেটবল তারকা খেলোয়াড় লিওরি লজিনসের সঙ্গে ভালো সাদৃশ্য ছিল সাইমন্ডসের। আর এ কারণেই তাকে ‘রয়’ নামে ডাকা হতো।
প্রথম আইপিএলে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হওয়া বিদেশী ক্রিকেটার
২০০৮ সালে যাত্রা শুরু করে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ(আইপিএল)। আইপিএল ইতিহাসের প্রথম নিলামে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়েছিলেন অজি অলরাউন্ডার সাইমন্ডস। ডেকান চার্জারসের হয়ে প্রথম আইপিএলে খেলেছিলেন তিনি। আইপিএল শুরুর ৪ দিনের মাথায় রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে তার খেলা ৫৩ বলে ১১৪ রানের ইনিংসটি যেন তার দামের যথার্থতার প্রমাণ দিয়েছিলো।
ভারতীয় টিভি শো বিগ বসে অংশ নিয়েছিলেন সাইমন্ডস
২০১১ সালে ভারতীয় টিভি শো বিগ বসে যোগ দিয়েছিলেন সাইমন্ডস। দুই সপ্তাহ বিগ বসে ছিলেন এই অজি অলরাউন্ডার। বিস বসে অংশ নেওয়া নিয়ে সাইমন্ডস বলেছিলেন, ‘আমি ভারতে লম্বা সময় ধরে ভ্রমণ করেছি। এখানে (ভারত) আমার অনেক বন্ধু রয়েছে। তাই এরকম শো’তে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত খুব একটা অস্বাবাভিক নয়।’ বিগ বসের সেই মৌসুমে সানি লিওনের মত তারকাও উপস্থিত ছিলেন।
ইংলিশ দলে ডাক পেয়েছিলেন
ইংল্যান্ডে জন্ম নেওয়ায় ব্রিটিশ পাসপোর্ট ছিল সাইমন্ডসের। ৬ মাস বয়সে এক ইংলিশ দম্পতি তাকে দত্তক নিয়েছিলেন। এরপর অবশ্য সাইমন্ডসকে দত্তক নেওয়া দম্পতি অস্ট্রেলিয়া চলে আসেন। ১৯৯০ সালে ইংল্যান্ড ‘এ’ দল থেকে ডাকও পেয়েছিলেন সাইমন্ডস। তবে ইংলিশ নির্বাচকদের তখন ফিরিয়ে দেন এই অজি অলরাউন্ডার।
সাইমন্ডসের শিকড় ছিল ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে
জন্মের পর বাবা-মাকে দেখেননি সাইমন্ডস। তবে তার শিকড় রয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজে। সাইমন্ডসকে জন্ম দেওয়া বাবা-মা’র একজন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ও আরেকজন ইউরোপিয়ান বলে ধারণা করে থাকেন ইতিহাসবিদরা।
বলিউডে অভিনয় করেছেন সাইমন্ডস
বলিউডের একটা সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন সাইমন্ডস। ক্রিকেট নিয়ে নির্মিত ‘পাতিয়ালা হাউজ’ ছবিতে ২০১১ সালে কাজ করেছিলেন তিনি। কেন্দ্রীয় চরিত্রে ছিলেন বলিউড সুপারস্টার অক্ষয় কুমার। এছাড়াও ঋষি কাপুর ও আনুষ্কা শর্মাও অভিনয় করেছেন এই ছবিতে।
ক্রিকেট ছেড়ে রাগবি খেলতে চেয়েছিলেন
ছোটবেলা থেকেই নিয়মিত রাগবি খেলার খোজখবর রাখতেন সাইমন্ডস। এমনকি রাগবি ক্লাব ব্রিসবেন ব্রোংকোসের খেলা দেখতেন এবং তাদের হয়ে খেলতেও চাইতেন। ২০০২ সালে সাইমন্ডস গুরত্বের সাথেই ক্রিকেট ছেড়ে রাগবিতে যোগ দেওয়া কথা ভেবেছিলেন। ২০০৯ সালে সেই চাওয়া সম্ভবও করছিলেন খ্যাপাটে স্বভাবের এই ক্রিকেটার। ২০০৯ সালে ব্রোংকোসের সাথে অনুশীলন করেন এবং উইননাম ম্যানলি সেগালস টুর্নামেন্টে একটি অলস্টার দলের হয়ে অংশও নিয়েছিলেন।
নেশায় ডুবে দল থেকে বাদ
মদ খেয়ে মাতাল হওয়ার অভিযোগে ২০০৫ সাল অস্ট্রেলিয়া দল থেকে বাদ পড়েছিলেন এই অলরাউন্ডার। এমনকি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া তার সাথে চুক্তিও বাতিল করেছিল ঐ ঘটনায়।
স্পোর্টসমেইল২৪/এসকেডি