ক্রিকেট বিশ্বের দাপুটে দল অস্ট্রেলিয়া। একসময় তাদের একটা সোনালী প্রজন্ম ছিল, যে প্রজন্মের এগারোজন খেলোয়াড়ের প্রত্যেককেই ক্রিকেট ইতিহাসের অমরত্বের আসনে বসানো যায়। এই তালিকায় আছেন রিকি পন্টিং, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, শেন ওয়ার্নদের মতো তারকারা। মাস দুয়েক আগেই শেন ওয়ার্ন বিদায় নিয়ে এই তালিকাটা ছোট করে দিয়ে গেছেন। এবার বিদায় নিলেন আরেককন, অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস।
সাইমন্ডসের নাম আসলেই চোখের সামনে ভেসে উঠবে লম্বা চুলের এক অজি খেলোয়াড়। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে যিনি ছিলেন্ রিকি পন্টিংয়ের দলের মূল স্তম্ভ। মিডল অর্ডারে ব্যাটিং কিংবা মিডিয়াম পেস বোলিং মিলিয়ে অধিনায়কের জন্য কার্যকরী এক প্যাকেজ ছিলেন সাইমন্ডস। ট্রাম্পকার্ড বলা হয় যাকে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ডের সুযোগ রেখে বেছে নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে সর্বজয়ী দলটা ছিল সম্ভবত রিকি পন্টিংয়ের। শুরু থেকে শেষ, ব্যাটিং থেকে বোলিং - কোনো জায়গায় ঘাটতি ছিল না। এখানে ‘সর্বজয়ী’ শব্দটা নিয়ে অনেকের আপত্তি থাকতে পারে। কেননা, ক্রিকেট এখনো চলছে এবং প্রজন্মের থেকে প্রজন্ম চলতেই থাকবে। সেরাদের সেরারা আসতেই থাকবে।
তবুও ১৯৯৯-২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনটা ওয়ানডে বিশ্বকাপ দলটাকে ‘সর্বজয়ী’ বলাই যায়। স্বর্নেরও একটা খুঁত থাকে। এই দলটারও ছিল। মিডল অর্ডারে একজন ফিনিশারের অভাব ছিল। তখনকার সময়ে অনেক জনকে দিয়ে পরীক্ষা চালালেও কঠিন যাত্রায় টিকতে পেরেছেন মাত্র একজন। তিনি অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস।
ক্রিকেটার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করার দুইটা সুযোগ ছিল সাইমন্ডসের সামনে। প্রথমটা জন্মুভূমি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে, দ্বিতীয়টা পিতৃভূমি ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে। তবে শৈশবে বেড়ে ওঠা শহরটাকেই বেছে নিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে ইংল্যান্ডের হয়েও খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন, তবে মন সায় দেয়নি।
২০০৩ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করার পর উল্লাস
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১৯৯৮ সালে অভিষেক তার। ২০০৩ সালেই বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়ে যান সাইমন্ডস। এই এক সুযোগেই অজিদের নায়ক হয়ে ওঠেন তিনি। সেই বিশ্বকাপে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুর্দান্ত খেলার পর আর কখনোই জাতীয় দলে নিজের জায়াগা নিয়ে ভাবতে হয়নি সাইমন্ডসকে।
তখন থেকেই অজিদের ব্যাটিং ও বোলিং লাইনের নিশ্চিন্ত ভরসা হয়ে ওঠেন সাইমন্ডস। তিন বিভাগেই ছিলেন দুর্দান্ত। সেটা কেমন বুঝতে কেবল একটি পরিসংখ্যানই যথেষ্ট। ক্রিকেটের ইতিহাসে নির্দিষ্ট একটি সিরিজে ২৫০ রান ও ১০ উইকেটের সঙ্গে ১০টি ক্যাচ নেয়ার রেকর্ডের দিকে তাকালে একটি নামই জ্বলজ্বল করবে। ক্রিকেটের ১৭৮ বছরের ইতিহাসে এখন অবধি এই রেকর্ডের একমাত্র মালিক অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস।
মিডিয়াম পেসে বোলিংটাও ভালো করতেন সাইমন্ডস
সাইমন্ডসের ক্যারিয়ারটাকে পরিসংখ্যানের পাতায় আবদ্ধ করলে তাকে অজি ক্রিকেটের অন্যতম নায়ক বলা যায়। আবার খলনায়কও ধরা যায়, সেটা তার বিতর্কিত ব্যক্তিগত জীবনের কারণে। ঠিক এই কারণেই ভালো খেলেও ২০০৯ সালে দল থেকে বাদ পড়েন সাইমন্ডস। এরপর আরও ৩ বছর ক্রিকেট খেলে গেছেন। অবসর নেন ২০১২ সালে। বয়স তখন ৩৬। এই বয়সে অবসর নেয়ার আরেকটা কারণ তার পরিবার।
পরিবারকে সময় দিতেই ক্রিকেট থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন সাইমন্ডস। সেই পরিবারকে রেখেই থেমে গেলো তার জীবনের গল্প। শনিবার (১৪ মে) রাতে গাড়ি দূর্ঘটনায় পতিত হলেন সাইমন্ডস। পরিবারের কাছে ফেরত না গিয়ে সাইমন্ডস রওয়ানা দিলেন অনন্তকালের পথে। চিরবিদায় নিলেন অস্ট্রেলিয়ার সোনালী সময়ের আরেক নায়ক।
ব্যাটিং বোলিংয়ের পাশাপাশি ফিল্ডিংয়ে ছিলেন দুর্দান্ত
সাইমন্ডস চলে গেলেও আজীবনের জন্য রয়ে গেল তার কীর্তি। পুরো ক্যারিয়ারে প্রায় সাত হাজার রান (৬৮৮৭) ও ১৬৫ উইকেট। দুইটি ওয়ানডে বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য। ইংল্যান্ডকে হারানো অ্যাশেজজয়ী দলের সদস্য। এই ছোট ছোট কীর্তিগুলো রয়ে যাবে আজীবন। সাইমন্ডস আমাদের কাছে হয়ে থাকবেন চিরভাস্বর।
স্পোর্টসমেইল২৪/এএইচবি