ফুটবল বিশ্বকাপের ২০১৪ সালের আসর অনুষ্ঠিত্ হয় ফুটবলের উর্বরভূমি লাতিন দেশ ব্রাজিলে। ওই আসরে সবচেয়ে এগিয়ে ছিল ইউরোপের জায়ান্ট জার্মানি। শেষমেশ সেটা প্রমাণিতও হয়। পর্তুগালকে ৪-০ গোলে পরাজিত করে টুর্নামেন্ট শুরু করা জোয়াকিম লো’র দল গ্রুপ টপার হিসেবে কোনো ম্যাচ না হেরেই নকআউট পর্বে পৌঁছে যায়। ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে চতুর্থবার শিরোপা উচিয়ে ধরে তারা।
এরপর কেটে গেছে ৮ বছর। মাঝে রাশিয়ার মাটিতে মহারণে শিরোপা জিতলো ফ্রান্স। চার বছর ঘুরে আবারও ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বকাপের উন্মাদনা। এই উন্মাদনায় সামিল হতে ফিরে দেখা যাক জার্মানির বিশ্বকাপজয়ী দলটার বর্তমান অবস্থা। কারা ছিলেন সেই দল, বর্তমানে কেমন আছেন সেই তারকারা।
ম্যানুয়েল নিউয়ার (গোলরক্ষক)
নিউয়ার আজও জার্মানির প্রথম পছন্দের কিপার হিসাবে খেলে চলেছেন। ২০১৪ বিশ্বকাপে তিনি চারটি ক্লিন শিট রেখেছিলেন। সেই সঙ্গে ২৪৪টি পাস দিয়েছিলেন, যা মেসির চেয়ে দুটি বেশি ছিল। তাকে বিশ্বের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। বর্তমানে ক্লাব পর্যায়ে বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে খেলে যাচ্ছেন নিউয়ার।
ফিলিপ লাম (রাইট-ব্যাক)
২০১৪ বিশ্বকাপ জয়ী জার্মান দলের অধিনায়ক ছিলেন ফিলিপ লাম। গ্রুপ পর্বে এবং রাউন্ড অফ সিক্সটিনে জোয়াকিম লো’র পরিকল্পনায় রাইট-ব্যাক থেকে রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার হয়ে উঠেছিলেন লাম। বিশ্বকাপ ফাইনাল ছিল তার শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। বর্তমানে ২০২৪ ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য জার্মানির দুত হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন এবং বিভিন্ন ব্যবসায়িক উদ্যোগের সাথে জড়িত।
জেরোম বোয়াটেং (সেন্টার-ব্যাক)
২০১৪ বিশ্বকাপে ফাইনালে দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন বোয়াটেং। ৮৩ শতাংশ সময় নিজের দখলে বল রেখেছিলেন তিনি। পুরো ম্যাচে মাত্র একটি ফাউল করেছেন। স্কোরলাইন অপরিবর্তিত রাখার জন্য অতিরিক্ত সময়ে তার শেষ-ডিচ ট্যাকলটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বর্তমানে তিনি ফ্রান্সের ক্লাব লিওনের হয়ে খেলছেন।
ম্যাটস হামেলস (সেন্টার-ব্যাক)
ওই আসরে হামেলস শুধু রক্ষণাত্মক হয়ে ট্যাকলগুলোই করেননি। বিপরীত প্রান্তে কিছু গুরুত্বপূর্ণ গোলও করছিলেন। তিনি প্রথম ম্যাচে পর্তুগালের বিপক্ষে গোল করেন এবং তারপর কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষেও আরেকটি গোল করেন। বর্তমানে তিনি খেলছেন বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে।
বেনেডিক্ট হাওয়েডেস (লেফট ব্যাক)
হাওয়েডস জার্মানির হয়ে ২০১৪ বিশ্বকাপের প্রতিটি মিনিট খেলেছেন। তিনি ফাইনালে বেশ ভালোভাবেই তার দায়িত্ব পালন করেন। ২০২০ সালে ফুটবল থেকে অবসর নেন এই ডিফেন্ডার। বর্তমানে আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়দের কোচিংয়ের জন্য জন্য উয়েফা মাস্টার্স কোর্স চালিয়ে যাচ্ছেন।
ক্রিস্টোফ ক্রেমার (মিডফিল্ডার)
ফাইনাল খেলা শুরুর কয়েক মিনিট আগে সামি খেদিরা কাফ মাশলের চোটে পড়ার পর ক্রেমারকে ফাইনালের জন্য শুরুর লাইন-আপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। দারুণ খেলেছিলেন তিনি। ক্রেমার বর্তমানে বরুশিয়া মনচেংগ্লাডবাখের হয়ে খেলে যাচ্ছেন।
বাস্তিয়ান শোয়েনস্টেইগার (মিডফিল্ডার)
২০১৪ বিশ্বকাপে জার্মানির সাফল্যের চাবিকাঠি ছিলেন শোয়েনস্টেইগার। বৈচিত্র্যময় পাসিংয়ে ফাইনালে পুরো দলকে নিয়ন্ত্রন করেন তিনি। জার্মানির হয়ে ১২১টি ম্যাচ খেলার পর তিনি ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে এবং ২০১৯ সালে সব ধরণের ফুটবল থেকে অবসর নেন। বর্তমানে তিনি একটি জার্মান সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একজন বিশেষজ্ঞ হিসাবে কাজ করছেন।
টনি ক্রুস (মিডফিল্ডার)
ক্রুস ২০১৪ বিশ্বকাপে তিনটি গোল করেন এবং চারটি সহায়তা প্রদান করেন। সেমিফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে দুর্দান্ত নৈপুন্য প্রদর্শনের জন্য ম্যান অফ দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন। গোল্ডেন বল পুরস্কারের জন্য ১০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকায়ও তার নাম ছিল। আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নিলেও রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে এখনো মাঝমাঠে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন ক্রুস।
টমাস মুলার (রাইট উইঙ্গার))
মুলার টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ছিলেন। পাঁচটি গোল করেছিলেন তিনি এবং তিনটি গোলে সহায়তা প্রদান করেছেন। তিনি বিশ্বের তৃতীয় খেলোয়াড় যিনি তার প্রথম দুই বিশ্বকাপে অন্তত পাঁচটি গোল করেছেন। বিশ্বকাপের অল স্টার একাদশ ও ড্রিম টিমে জায়গা করে নেন তিনি। বর্তমানে বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে খেলছেন এই তারকা।
মিরোস্লাভ ক্লোজ (স্ট্রাইকার)
বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক গোল (১৬) করার রেকর্ড ক্লোসের। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ খেলার মধ্য দিয়ে তিনি প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টানা চারটি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার গৌরব অর্জন করেন। ফুটবল থেকে অবসর নেওয়ার পর কোচিংয়ে নেমেছেন তিনি। ২০২০ সালের মে মাসে, তিনি হ্যান্সি ফ্লিকের সহকারী হওয়ার জন্য এক বছরের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
মেসুত ওজিল (লেফট উইং)
২০১৪ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে আট গোল করে ওজিল জার্মানির সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন। তিনি পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন এবং রাউন্ড অব সিক্সটিনে আলজেরিয়ার বিরুদ্ধে জয়ী গোলটা তারই ছিল। আসরে তিনি তৃতীয় সর্বোচ্চ পাস (১৭১) দিয়েছিলেন এবং দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে ১৭টি সুযোগ তৈরি করেছিলেন। তিনি বর্তমানে তুর্কি লিগে ফেনারবাহসের সাথে চুক্তিবদ্ধ।
আন্দ্রে শুরলে (বদলি)
২০১৪ বিশ্বকাপে শুরলেকে বেশিরভাগ সময়ই বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। ফাইনালের জয়সূচক গোলেও তিনি সহায়তা করেছিলেন। মাত্র ২৯ বছর বয়সে তিনি ফুটবল থেকে অবসর নিয়েছেন। ফুটবল থেকে অবসর নেওয়ার পর তার পুরো সময়টা তার পরিবারের সঙ্গে কাটানোর মনস্থির করেছেন।
মারিও গোটজে (বদলি)
গোটজের ক্যারিয়ারে সববেশি গুরুত্বপূর্ণ গোলটি করেছেন ২০১৪ বিশকাপের ফাইনালে। লো তাকে নামানোর আগে বলেছিলেন, ‘বিশ্বকে দেখাও তুমি মেসির চেয়ে ভালো।’ বিশ্বকাপ ফাইনালে বদলি হিসেবে নেমে গোল করা দ্বিতীয় খেলোয়াড় গোটজে। এর আগে ১৯৬৬ সালে বদলি হিসেবে নেমে গোল করেছিলেন উলফগ্যাং ওয়েবার। বিশ্বকাপের ফাইনালে গোল করা সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়ও তিনি। তিনি বর্তমানে পিএসভি আইন্দহোভেনের হয়ে খেলছেন।
পার মার্টসিকার (বদলি)
এই সেন্টার ব্যাক জার্মানির হয়ে ১০০টিরও বেশি ম্যাচ খেলেছে। তিনি ২০১৪ বিশ্বকাপে রাউন্ড অব সিক্সটিন পর্যন্ত নিয়মিত খেলেন এবং ফাইনালে তিনি মেসুত ওজিলের বদলি হিসেবে খেলতে নামেন। তিনি ২০১৮সালে ফুটবল থেকে অবসর নেন এবং বর্তমানে আর্সেনাল একাডেমির ম্যানেজার।
স্পোর্টসমেইল২৪/এএইচবি