ফুটবল বিশ্বকাপকে বলা হয় ‘গ্রেটেস্ট শো অন দ্য আর্থ’। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আসরটির ২২তম মহামিলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কাতারের মাটিতে। এই আসরকে ঘিরে চারদিকে উন্মাদনার কমতি নেই। শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিহাসের পাতায় স্মৃতি হাতড়ে ফেরা। শুরু থেকে শেষের সেই গল্পে আজ আমরা আরেকবার দৃষ্টিপাত করবো। জানবো ফুটবল বিশ্বকাপের ‘আদ্যোপান্ত’।
বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা
ফুটবল বিশ্বকাপের বর্তমান নিয়মে প্রতি আসরে ৩২টি দল চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। তবে এই নিয়ম চিরন্তন ছিল না। প্রকৃতপক্ষে, সবসময় হবেও না। প্রথম বিশ্বকাপে মাত্র ১৩টি দল মুখোমুখি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। ১৯৩৪ থেকে ১৯৭৮সাল পর্যন্ত ৪৪ বছরে দলের সংখ্যা বেড়ে হয় ১৬টি।
১৯৮২ বিশ্বকাপে আরও আটটি দলকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যাতে মোট অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪ দলে। ৩২ দল নিয়ে সর্বপ্রথম আসর অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৮ সালে ফ্রান্স বিশ্বকাপে। এটিও সম্ভবত পরিবর্তন হবে। ফিফা নিশ্চিত করেছে যে ২০২৬ বিশ্বকাপে ১৬ দল বেড়ে দলের সংখ্যা দাঁড়াবে ৩২ থেকে ৪৮!
প্রথম বিশ্বকাপজয়ী দল
১৯৩০ সালে প্রথমবারের মতো আয়োজিত হয় ফুটবল বিশ্বকাপ। সেবারের আয়োজক ছিল উরুগুয়ে এবং শিরোপাও জিতে নেয় তারা। সেবার মাত্র ১৩ টি দলের মধ্যে সাতটি ছিল দক্ষিণ আমেরিকার। ইউরোপ থেকে চারটি দল অংশ নেয়। বাকিটা পূরণ করেছে মেক্সিকো এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
প্রথম বিশ্বকাপজয়ী দল উরুগুয়ে
সবচেয়ে বেশি বিশ্বকাপজয়ী দল
১৯৩০ সালে বিশ্বকাপের শুরুর পর থেকে মাত্র আটটি দেশ শিরোপা জিততে পেরেছে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে সফল দল ব্রাজিল। তারা সর্বোচ্চ পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ১৯৫৮ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জিতে লাতিন দলটি।। এরপর ১৯৬২, ১৯৭০, ১৯৯৪ এবং সবশেষ ২০০২ সালে শিরোপা ঘরে তোলে তারা।
সবচেয়ে বেশিবার শিরোপাজয়ী ব্রাজিল
ইতালি এবং জার্মানি প্রত্যেকে চারবার করে বিশ্বকাপ জিতেছে (জার্মানি পশ্চিম জার্মানি হিসাবে তিনবার জিতেছে), আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে এবং বর্তমান হোল্ডার ফ্রান্স সবাই দুইবার করে শিরোপা উচিয়ে ধরেছে। একবার করে বিশ্বকাপ জিতেছে ইংল্যান্ড ও স্পেন।
বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা
বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় সবার উপরের নামটা জার্মান তারকা মিরোস্লাভ ক্লোসা। যিনি চারটি টুর্নামেন্টে মিলিয়ে জার্মানির জার্সি গায়ে সর্বোচ্চ ১৬ গোল করেন তার পরেই আছেন ব্রাজিলিয়ান তারকা রোনালদো নাজারিও। তিনটি আসরে তিনি করেছেন ১৫ গোল। ১৪ গোল করে তিন নাম্বারে আছেন আরেক জার্মান তারয়াক গার্ড মুলার।
সর্বোচ্চ গোলদাতা মিরোস্লাভ ক্লোসা
সবচেয়ে বেশিবার অংশগ্রহণ করা তারকা
জার্মানির মিডফিল্ডার লোথার ম্যাথাউস সর্বোচ্চ পাঁচটি টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেন। ২৫ ম্যাচ খেলে সবচেয়ে বেশি বিশ্বকাপ ম্যাচ খেলার রেকর্ডও তার। ম্যাথাউসের পরেই আছেন স্বদেশী মিরোস্লাভ ক্লোসা। এরপর আছেন ইতালির কিংবদন্তি পাওলো মালদিনি। ডিয়েগো ম্যারাডোনা খেলেন চারটি বিশ্বকাপ।
সবচেয়ে বেশিবার অংশগ্রহণ করা তারকা লোহার ম্যাথাউস
ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফি
বিশ্বকাপের বিজয়ীদেরকে স্মারক হিসেবে দেয়া হয় একটি ট্রফি। বিশ্বকাপ ট্রফির ডিজাইনার ইতালীয় শিল্পী সিলভিও গাজানিগা। এটি একটি ম্যালাকাইট বেস সহ ১৮-ক্যারেট সোনা দিয়ে তৈরি করা হয়। ট্রফিটি ৩৬ দশমিক ৮ সেন্টিমিটার লম্বা (১৪ দশমিক ৫ ইঞ্চি)। ওজন ৬ দশমিক ১৭৫ কিলোগ্রাম (১৩ দশমিক ৬১ পাউন্ড)।
জুল রিমে ট্রফির ইতিহাস
বর্তমান বিশ্বকাপের ট্রফিটি ১৯৭৪ সালে প্রথমবার উন্মোচিত হয়। তার আগে টুর্নামেন্ট বিজয়ীদের জন্য একটি ভিন্ন পুরস্কার দেওয়া হতো। ১৯৩০ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত বিশ্বকাপ বিজয়ীদের দেওয়া ট্রফিটির নাম ছিল ‘জুলে রিমে’ কাপ।
প্রথম প্রচলিত শিরোপা জুলে রিমে ট্রফি
জুলে রিমের প্রথম নাম ছিল ‘ভিক্টোরি’। ফরাসি ভাস্কর আবেল লাফ্লেউরকে ফিফা ট্রফিটি ডিজাইন করার জন্য কমিশন দেয়। তিনি একটি বিখ্যাত ট্রফিটি তৈরি করেন যা প্রাথমিক বিশ্বকাপের প্রতীক হয়ে ওঠে। ১৯৪৬ সালে সাবেক ফিফা সভাপতি জুলে রিমের সম্মানে ‘ভিক্টোরি’র নাম বদলে জুলে রিমে কাপ নামকরণ করা হয়। জুলে রিমে ফিফা বিশ্বকাপ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
বিশ্বকাপের মূল নিয়ম মেনে ১৯৭০ সালে তৃতীয়বারের মতো টুর্নামেন্ট জিতে ব্রাজিল চিরতরে ট্রফিটি নিজেদের করে নেয়। তবে ১৯৮৩ সালে ট্রফিটি চুরি হয়ে যায়। তারপর আর কখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।
স্পোর্টসমেইল২৪/এএইচবি