ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপের সবশেষ আসরের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। ২০১৮ সালে রাশিয়ার মাটিতে সোনালি ট্রফি হাতে উল্লাসে মেতে উঠেছিল তারা। চার বছর পর আরেকবার হাজির লড়াইয়ের মহামঞ্চ। এবারও নিশ্চয়ই শিরোপাটা নিজেদের কাছেই সযত্নে রেখে দিতে চাইবে তারা। দলটাও ঠিক তেমনভাবেই সাজাচ্ছেন কোচ দিদিয়ের দেশম।
দেশমের হাতের তুরপের তাস হতে পারেন পাঁচ উদীয়মান তরুণ। পায়ের ঝলকে যারা মাতিয়ে তুলেছেন ইউরোপ ও ফ্রান্সের ক্লাব। তাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখছে খোদ প্যারিসিয়ানরাও। আজ আমরা দৃষ্টিপাত করবো পাঁচ উদীয়মান তরুণের দিকে, যারা সুযোগ পেলে কাতারে হতে পারেন ফ্রান্সের ‘আশার আলো’।
ক্রিস্টোফার এনকুনকু (২৪)
প্যারিসে জন্ম নেয়া এনকুনকুর ক্যারিয়ারের শুরু প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ের (পিএসজি) হয়ে। সেখান থেকে জার্মান ক্লাব লেইপজিগের হয়ে পেশাদার ফুটবল শুরু। চলতি মৌসুমে দুর্দান্ত ছন্দে আছেন এনকুনকু। চলতি মৌসুমে জার্মান বুন্দেসলিগায় ১৭ গোল নিয়ে আছেন চার নাম্বারে।
ফ্রান্স কোচ দিদিয়ের দেশম এই তরুণের পারফরম্যান্সে আনন্দিত। ফ্রান্স কাপ জয়ে ভূমিকা রাখা এই তরুণকে জুনে আবারও ডাকতে পারেন দেশম। এনকুনকুর বিশ্বাস, যদি সে যদি ফর্ম ধরে রাখতে পারে তবে কাতার বিশ্বকাপের দলে থাকবেন। সুযোগ পেলে হয়ে উঠতে পারেন ফ্রান্সের আরেকটি শিরোপার নায়ক।
অরেলিয়ান চৌমেনি (২২)
বয়স মাত্র ২২। এই বয়সেই মোনাকোর মাঝমাঠের ভরসা হয়ে উঠেছেন অরেলিয়ান চৌমেনি। ২০২১ সালের গ্রীষ্মে মোনাকোতে আসার পর থেকেই দারুণ পারফর্ম্যান্স করে যাচ্ছেন তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের হয়ে এই মিডফিল্ডার বেশ ছাপ রেখে চলেছেন। তার গোলেই ফ্রান্স কাপ জিতেছে ফ্রান্স।
পল পগবা এবং এন'গোলো কান্তের সাথে মাঝমাঠে চৌমেইনি হয়ে উঠতে পারেন দেশমের প্রথম পছন্দ। ফ্রান্স কোচের মতে, তার সামনে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। সব দিকেই তিনি সমানে খেলে যাচ্ছেন।
উইলিয়াম সালিবা (২১)
লিগ ওয়ানে অলিম্পিক মার্সেইয়ের রক্ষণভাগ বেশ শক্তিশালী। এর অন্যতম কারণ হলো উইলিয়াম সালিবা। আর্সেনালের কাছ থেকে লোনে ফ্রান্সে এসে আপাতদৃষ্টিতে অপরিহার্য একজন ডিফেন্ডার হয়ে উঠেছেন তিনি। চলতি মৌসুমে সমস্ত প্রতিযোগিতা মিলিয়ে মোট ৪৬ ম্যাচে উপস্থিত ছিলেন। মার্চে তাকে প্রথম ফ্রান্স দলে ডাকেন দেশম।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ৫-০ জয়ে দুর্দান্ত খেলেন সালিবা। বল দখলের ক্ষমতা প্রদর্শন কিংবা হুটহাট বল নিয়ে আক্রমণে ঢুকে পড়াও তার প্লাস পয়েন্ট। যদি সে ক্লাব পর্যায়ে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারে তবে কাতারে জাতীয় দলের বিমানে উঠতে পারেন এই তরুণ। সেটা বলেছেন ফ্রান্স কোচ দেশমও।
ইব্রাহিমা কোনাতে (২২)
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সেরা দলের একটি লিভারপুলের রক্ষণের গুরুদায়িত্ব সামলানোর ভারটা ফ্রান্সের যুবা ইব্রাহিমা কোনাতের কাঁধেই। সাবেক লেইপজিগ তারকা চলতি মৌসুমে সমস্ত প্রতিযোগিতায় ক্লাবের হয়ে ২২টি ম্যাচে উপস্থিতি থেকেছেন। এফএ কাপের সেমিফাইনালে ম্যানচেস্টার সিটিকে ৩-২ গোলে হারানোর অন্যতম নায়ক ছিলেন কোনাতে।
চলতি মাসে শুরু থেকে পাঁচটি ম্যাচে তিনটিতেই গোল করেছেন ফ্রান্স তারকা (উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার-ফাইনালে সিটির বিপক্ষে একটি এবং বেনফিকার বিপক্ষে দুটি)। কোনাতে দেশমের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে থাকতে পারেন। আর থাকলে ফ্রান্সের জন্য সেটা হবে কাতারে শিরোপা জয়ের জন্য প্লাস পয়েন্ট।
মাত্তেও গুয়েনডোজি (২৩)
অলিম্পিক মার্সেইয়ের সাথে ক্যারিয়ারের সেরা মৌসুমটাই উপভোগ করছেন গুয়েনডোজি। ইতোমধ্যে সমস্ত প্রতিযোগিতায মিলিয়ে ৪৯ ম্যাচ খেলে ফেলছেন তিনি। তাতে চারটি গোল নিজে করেছেন এবং ১৪টি গোলে সহায়তা করেছেন। মিডফিল্ডে তার প্রাণবন্ত উপস্থিতির জন্য মার্চে তাকে ডেকেছিলেন দেশম।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে গোল করার পর বিশ্বকাপ প্রসঙ্গ এলে গুয়েনডৌজি বলেন, ‘বিশ্বকাপ ? এটি একটি উদ্দেশ্য এবং স্বপ্ন যা নিয়ে আমি কাজ করছি। যদি এখনও অনেক পথ বাকি আছে।’ কাতারে সেই পথ শেষ হলে ফ্রান্সের জন্যই ভালো। তরুণরাই তো বিশ্বমঞ্চে আশার আলো হয়ে জ্বলজ্বল করেন।
স্পোর্টসমেইল২৪/এএইচবি