কাতার বিশ্বকাপের উন্মাদনা শুরু হওয়ার সাথে সাথে শুরু হয়ে গেছে অনেক হিসাবনিকাশও। তাতে উঠে আসছে ফুটবলের অনেক জীবন্ত ইতিহাস। কয়েক দশক আগের ইতিহাস নতুন করে জাগিয়ে তুলেছে কয়েকটি দল। স্বপ্ন দেখাচ্ছে একটা জাতিকে। এই দলগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো আল্পস পর্বতমালার কোল ঘেষে দাঁড়িয়ে থাকা দেশ সুইজারল্যান্ড।
ফুটবল বিশ্বকাপের মহামঞ্চে একটা দলের মানদণ্ড নির্ধারণ করা ‘শেষ আট’ বা কোয়ার্টার ফাইনাল দিয়ে। এই কোয়ার্টার ফাইনালের ইতিহাস ঘাটতে গেলেই ফিরে আসে সুইসদের ৬৮ বছরের পুরনো স্বপ্ন। আজ থেকে ঠিক ৬৮ বছর আগে ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’-এর কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল সুইজারল্যান্ড।
১৯৫৪ সালে সেবার সুইজারল্যান্ডের মাটিতেই বসেছিল মহামঞ্চের আসর। নিজেদের মাটিতে সেবারের লড়াইয়ে সুইসদের প্রতিপক্ষ মোটেই সহজ কোনো দেশ ছিল না। লুসানে স্টেড অলিম্পিক দে লা পন্টাইসে অনুষ্ঠিত ম্যাচে স্বাগতিকরা মুখোমুখি হয়েছিল ফুটবলের তৎকালীন পরাশক্তি দেশ অস্ট্রিয়ার।
ম্যাচের পরিস্থিতির দিকে দৃষ্টি ফেরালে বিশ্বকাপ তো বটেই, ফুটবলে সর্বকালের সেরা একটি ম্যাচ দেখে ফেলবেন দর্শকরা। ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রার সেই ম্যাচে খেলা শুরু হতেই অস্ট্রিয়ান গোলরক্ষক কার্ট স্মিড হিটস্ট্রোকে মাঠ থেকে উঠে যান এবং ম্যাচের বাকি সময় পোস্টের চারপাশে ঘুরে বেড়ান।
তখনকার সময় খেলোয়াড়ের বদলি নামানোর কোনো নিয়ম ছিল না! সুযোগ বুঝে ম্যাচের শুরুর দিকেই ৩ গোলের লিড নেয় সুইসরা। প্রথমার্ধের বিরতির আগমুহূর্তে স্কোর লাইন ভোঁজবাজির মতো পাল্টে হয়ে যায় ৫-৪! অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, খেলার প্রথমার্ধেই দর্শকরা দেখে ফেলে ‘নয়’ গোলের এক থ্রিলার।
এরপরের অংশে ঠিক কতটা লড়াই হয়েছে সেটা বুঝতে চূড়ান্ত সময়ের স্কোরলাইনের দিকে চোখ বুলালেই সবার ধারণা হয়ে যাবে। চূড়ান্ত বাঁশি বাজানোর সময় অস্ট্রিয়া ৭-৫ গোলের ব্যবধানে জিতে সুইসদের স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায় পুঁড়িয়েছিল। যদিও সেমিতে পশ্চিম জার্মানির কাছে হেরে যায় অস্ট্রিয়ানরা।
এই ম্যাচ আজও ‘হিট ব্যাটল অফ লউসেন’ নামে পরিচিত। এক ম্যাচে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড হয়েছিল এই ম্যাচেই। এরপর আরও চারবার বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে পৌছালেও কখনো কোয়ার্টার ফাইনালে পা রাখতে পারেনি ‘লা নাটি’ খ্যাত সুইসরা।
অবশেষে আরেকবার বিশ্বকাপে সুইসরা, আরেকবার ৬৮ বছর আগের স্বপ্ন পূরণের আশা। কাতার বিশ্বকাপের দলটাকে নিয়ে এবার আশায় বুক বাঁধতেই পারে আল্পস পর্বতমালার দেশের মানুষ। এবারের আসরে তাদের গ্রুপে তিন প্রতিপক্ষ ব্রাজিল, সার্বিয়া ও ক্যামেরুন। তিন কঠিন প্রতিপক্ষ, তারপরও তিনটি কারণে কাতার বিশ্বকাপে ৬৮ বছরের ইতিহাস ছোঁয়ার স্বপ্ন নিয়ে নামবে গ্রানিট জাকর দল।
মানব ‘দেয়াল’ (হিউম্যান ওয়াল)
কাতারে সুইসদের স্বপ্নের বড় কারণ ইয়ান সোমার। তাকে বলা হয় ‘হিউম্যান ওয়াল’। ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপে সুইস স্কোয়াডের বদলি খেলোয়াড় হিসেবে ডাগআউটে থাকা সোমার এবার তাদের অতন্দ্র প্রহরী। সুইসদের কাতার বিশ্বকাপে নিয়ে আসতে তার অবদান সিকিভাগ। আট ম্যাচে মাত্র দুটি গোল হজম করেন জার্মান লিগে খেলা এই গোলরক্ষক।
বড় পর্যায়ে কঠিন প্রতিপক্ষ
বিশ্বকাপে সুইজারল্যান্ডের দুর্দান্ত একটি রেকর্ড রয়েছে। দলটি একবার শেষ ষোলোর বাঁধা অতিক্রম করতে পারলেই কোয়ার্টারে জায়গা করে নেয়। আগের চারবার তারা যে কোয়ার্টারে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে, সেখানে ১৫টি ম্যাচের মধ্যে মাত্র তিনটিতে হেরেছে তারা। সুতরাং বড় পর্যায়ে তাদের কঠিন প্রতিপক্ষ বলা যায়।
অবিরত জয়ের ধারা
সুইজারল্যান্ড তাদের শেষ ২১ ম্যাচের মধ্যে ১১টি ম্যাচে জিতেছে এবং আটটি ড্র করেছে। হেরেছে মাত্র তিনটি। এই তিন হারের দুটি ২০২০ সালের উয়েফা ইউরোর আসরে। অন্যটি চলতি বছরের মার্চে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে একটি প্রীতি ম্যাচে। তার মানে কাতার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে তারা অপরাজিত। এই ধারা চলতে থাকলে ৬৮ বছর পর আরেকবার শেষ আটের স্বপ্নে বুদ হয়ে থাকতেই পারে ‘লা নাটি’রা।
স্পোর্টসমেইল২৪/এএইচবি