দুয়ারে কড়া নাড়ছে কাতার বিশ্বকাপ। চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে উন্মাদনা। বিশ্বকাপ আসলে আমাদের মাঝে আনন্দের ঢেউ যেমন খেলে যায়, তেমন বিষাদের রাগিনীও বেজে ওঠে। প্রতি আসরেই ঝলমল করে নিজেদের আগমনী বার্তা জানান দেয় একঝাঁক উদীয়মান তারকা। আরেকদিকে বয়সের সাথে লড়ে বিদায় নেয় একঝাঁক ধ্রুবতারা। এক কথায় আমরা যাকে বলি, নতুনের আগমনে পুরনোর বিদায় নেয়া।
কাতার বিশ্বকাপে এই বিদায়ীদের তালিকাটা হতে যাচ্ছে বেশ বড়। এই তালিকায় আছেন আর্জেন্টাইন ক্ষুদে জাদুকর লিওনেল মেসি থেকে শুরু করে পর্তুগিজ যুবরাজ ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোও। দু’জনেরই এটা পঞ্চম ও শেষ বিশ্বকাপ। তালিকায় থাকা বাকি নাম গুলোও চিরচেনা। একনজরে তাদেরকে দেখে নেয়া যাক।
লিওনেল মেসি (আর্জেন্টিনা)
লিওনেল মেসি ২০০৬ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেন। এরপর একে একে খেলেছেন আরও তিনটি বিশ্বকাপ। এর মধ্যে ২০১৪ সালে শিরোপার একদম নাগালে এসেও ছুঁতে পারেননি সোনালি ট্রফিটা। ফাইনালে হেরে যেতে হয় জার্মানির কাছে। সেই হারের ক্ষত নিয়েই এবার পঞ্চমবার ও সম্ভবত শেষবারের মতো বিশ্বমঞ্চে নামতে যাচ্ছেন আর্জেন্টাইন ক্ষুদে জাদুকর। এবারই তার সামনে শেষ সুযোগ।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (পর্তুগাল)
মেসির সঙ্গে একই আসরে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে নেমেছিলেন রোনালদোও। এরপর টানা তিনটি বিশ্ব আসরে খেলে ফেললেও কোনো ট্রফি নেই পর্তুগিজ যুবরাজের ভান্ডারে। এ নিয়ে পঞ্চমবার এবং শেষবারও। অনেক হিসেব নিকাশ রোনালদোর সামনে। বিদায় বেলায় নিশ্চয়ই নিজের সেরাটা দিবেন রন।
রবার্ট লেভানডোভস্কি (পোল্যান্ড)
লেভানডোভস্কিকে নিয়ে কিছু বলার নেই। বর্তমান সময়ের সেরা ফুটবলারের সেরা তিনের একজন এই পোলিশ তারকা। বয়সের কাটা ৩৩। তবে বিশ্বকাপ খেলেছেন মাত্র একটি। ২০১৮ সালে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। এ নিয়ে দ্বিতীয়বার। বয়স বলেছে তৃতীয় বিশ্বকাপও খেলতে পারেন। তবে দর্শক কিংবা ভক্ত সমর্থকদের চোখ কাতারেই নিজের বিশ্বমঞ্চ ক্যারিয়ার ইতি টানতে পারেন বায়ার্ন তারকা।
লুইস সুয়ারেজ (উরুগুয়ে)
উরুগুয়ের সেরা তারকা। বয়সের ঘর ৩৫। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ খেলেতে যাচ্ছেন সাবেক বার্সা তারকা। বয়সের কাটা বলছে, এই তার শেষ। কাতারেই থেমে যেতে পারে ক্যারিয়ারের কাটা।
এডিনসন কাভানি (উরুগুয়ে)
সুয়ারেজ্জের মতো তিনিও বিশ্বকাপ খেলেছেন তিনটি। বয়স যথারীতি ৩৫। পরের বিশ্বকাপে দাঁড়াবে ৩৯। কাভানী বোধহয় দর্শক হিসেবেই পরের বিশ্বকাপে থাকবেন। কাতারেই লিখে ফেলবেন গল্পের সমাপ্তি।
লুকা মডরিচ (ক্রোয়েশিয়া)
মেসি-রোনালদোর সঙ্গে একই মঞ্চের তারকা। ২০০৬ বিশ্বকাপ দিয়ে শুরু। এরপর খেলছেন আরও তিনটি বিশ্বকাপ। ২০১৮ বিশ্বকাপে হয়েছেন সেরা খেলোয়াড়। এবারও তার দিকেই তাকিয়ে ক্রোয়েশিয়া। বিদায়বেলায় ৩৬ বছর বয়সী কতটা মেলে ধরতে পারবেন নিজেকে সেটা দেখা যাবে কাতারেই।
ম্যানুয়েল নিউয়ার (জার্মানি)
২০১০ সালের জার্মানির হয়ে তার বিশ্ব যাত্রা শুরু। এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো জার্মানদের জালের নিচে। বয়স ৩৬ এর ঘর পার হলো। নিশ্চিত শেষবারের মতো বিশ্বকাপের আসরে। জার্মানরা তাকিয়ে তার দিকে।
টমাস মুলার (জার্মানি)
বয়স ৩২। তাকে ডাকা হয় ‘জার্মান মেশিন’ নামে। ২০১০ সালে শুরু এরপর খেলেছেন দুটি বিশ্বকাপ। এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো। হয়রত আরেকটা বিশ্বকাপ খেলবেন তিনি। তবে সেটা সময়ের হাতেই থাকুক।
দানি আলভেস (ব্রাজিল)
বয়স ৩৮ অথচ এখনো দিব্যি খেলে যাচ্ছেন দানি আলভেজ। বিশ্বকাপেও তার জায়গা পাওয়াটা নিশ্চিত। এ নিয়ে চারবার বিশ্বমঞ্চে। ২০১০ থেকে শুরু। পরের বিশ্বকাপে বয়স হবে ৪২। সুতরাং ধরেই নেয়া যায়, কাতারেই বুটজোড়া তুলে রাখতে যাচ্ছেন ব্রাজিলের সেরা রাইটব্যাক।
থিয়াগো সিলভা (ব্রাজিল)
আলভেজের মতোই তার ক্যারিয়ার। এখনো দুর্দান্ত গতিতে ঝাঁপিয়ে যাচ্ছেন মাঠের বামদিকে। এ নিয়ে খেলতে যাচ্ছেন চার নাম্বার বিশ্বকাপ। পাচ নাম্বারটায় বয়স হবে ৪১। সব মিলিয়ে বলা যায়, কাতারেই দানি আলভেজের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে শেষ বিশ্বকাপটা খেলে ফেলবেন সিলভা।
ইডেন হ্যাজার্ড (বেলজিয়াম)
২০১০ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বমঞ্চে নামা। এবার মিলিয়ে চারটি বিশ্বকাপ খেলে ফেলবেন হ্যাজার্ড। বয়স কেবল ৩১। খুব্ বেশি না। আরেকটা বিশ্বকাপ খেলতে চাইবেন নিশ্চয়ই। বাকিটা সময়ের হাতে।
জর্ডি আলবা (স্পেন)
স্পেন বিশ্বকাপ জেতার পরের আসরেই প্রথমবারের মতো মাঠে নেমেছিলেন আলবা। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বমঞ্চে। বয়স ৩৩। এটাই কি শেষ নাকি পরের আসরেও নিজেকে জানান দিবেন আলবা ভালো জানেন। এখনও যে দুর্দান্ত খেলে যাচ্ছেন।
হুগো লরিস (ফ্রান্স)
ফ্রান্সের হয়ে তিনটি বিশ্বকাপে মাঠে নেমে একটিতে শিরোপা উচিয়ে ধরেছেন লরিস। আর বোধহয় কোনো অপ্রাপ্তি নেই তার। কাতারে তাই শেষবারের মতোই খেলতে নামবেন লরিস। বয়স যে ৩৫ হয়ে গেলো!
অলিভিয়ার গিরৌড (ফ্রান্স)
ফ্রান্সের হয়ে তিনটি বিশ্বকাপে মাঠে নেমে একটিতে শিরোপা উচিয়ে ধরেছেন অলিভিয়ার। আর বোধহয় কোনো অপ্রাপ্তি নেই তার। কাতারে শেষবারের মতোই খেলতে নামবেন ৩৫ বয়সী এই ফরাসি তারকা।
সার্জিও বুস্কেটস (স্পেন)
২০১০ সালে স্পেনের বিশ্বকপ জয়ী দলের সদস্য। ফিটনেসে টিকে গেলে খেলতে পারেন ২০২৬ সালের আসরও। তবে বার্সেলোনা অধিনায়ক বোধহয় চাইবেন না। কাতারেই তাই বুস্কেটসের শেষ ধরে নেয়া যায়।
অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (আর্জেন্টিনা)
ডি মারিয়া ইতোমধ্যে বিশ্বকাপ শেষেই জার্সি তুলে রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। খেলেছেন চারটি বিশ্বকাপ। আর্জেন্টিনাক জিতিয়েছেন কোপা আমেরিকার শিরোপা।
পেপে (পর্তুগাল)
বয়স ৩৯। কাতারে তার খেলাটা বেশ অবাক করার মতো। তাও পর্তুগালের রক্ষণভাগের প্রধান ভরসা এই তারকাই। কাতারেই রোনালদোর সঙ্গী হতে যাচ্ছেন পেপেও। তুলে রাখতে পারেন বুটজোড়া।
ম্যাটস হুমেলস (জার্মানি)
বয়স ৩৩ অথচ হুমেলস বিশ্বকাপ খেলেছেন মাত্র দুটি। তৃতীয়বারের মতো কাতারে পা রাখতে যাচ্ছেন তিনি। পরের বিশ্বকাপে বয়স হবে ৩৭। কাতারই শেষ নাকি পরের আসরেও মাঠ মাতাবেন, হুমেলস ভালো জানেন।
দিয়েগো গডিন (উরুগুয়ে)
দিয়েগো গডিন ২০১০ সালের পর এ নিয়ে মোট তিনবার বিশ্বমঞ্চে মাঠে নেমেছেন। কাতারের চতুর্থবারের মতো নামবেন তিনি। এখন বয়স ৩৬, পরের বিশ্বকাপে বয়স হবে ৪০। তাই বলেই দেয়া যায় এটাই গডিনের শেষ।
মায়া ইয়োশিদা (জাপান)
এশিয়ার খেলোয়াড় হিসেবে দুটি মহামঞ্চে খেলে ফেলছেন ইয়োশিদা। এ নিয়ে তৃতীয়বার। বয়সের কাটা ৩৩ এর ঘরের পড়লো। পরের আসরে হবে ৩৭। জাপানের জার্সি গায়ে আরেকবার মাঠে নামবেন কিনা সময় বলে দিবে।
স্পোর্টসমেইল২৪/এএইচবি