ক্লাব ফুটবলে নজর কেড়ে জাতীয় দলে ভালো খেলতে না পারার অপবাদ সহ্য করা ফুটবলারদের জন্য নিয়মিত ঘটনা। জাতীয় দলের জার্সিতে অনেক তারকাই নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে না পারলেও বিশ্বকাপে খেলার ইচ্ছা পূরণ হয়ে যায়। অনেক সময় দেখা যায় নিজেরা ভালো না খেলেও দলীয় নৈপ্যুণে জিতে যান ফুটবল বিশ্বকাপও।
তবে এর ব্যতিক্রমও আছে অনেক। ক্লাবের পাশাপাশি জাতীয় দলের জার্সিতে নিজেকে প্রমাণ করেও অনেক তারকাই ফুটবলের বিশ্ব মঞ্চে খেলতে পারেননি। বাছাইপর্বের বাঁধা পেরিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে না পারার আক্ষেপে পুড়েছেন অনেক বড় বড় ফুটবল তারকা। ইনজুরি কিংবা কোচের সাথে ভালো সম্পর্ক না থাকার কারণেও বাদ পড়েছেন অনেক ফুটবলার। এমনই পাঁচ ফুটবলারের কথা তুলে ধরা হলো স্পোর্টসমেইল২৪.কমের এই আয়োজনে।
আলফ্রেড ডি স্টেফিনো (স্পেন)
বিশ্ব ফুটবলের সেরা তারকাদের মধ্যে একজন আলফ্রেড ডি স্টেফিনো। স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে দারুণ ফর্ম দিয়ে নজর কেড়েছিলেন ফুটবল বিশ্বের। দলটির হয়ে জিতেছেন অসংখ্য শিরোপা। ক্লাব ফুটবলের সম্ভাব্য সব শিরোপা স্বাদ পেলেও তার ক্যারিয়ার নিয়েও আছে আক্ষেপ। তার দারুণ ফর্ম দেখে স্বয়ং পেলে বলেছিলেন, তার থেকে সেরা ফুটবলার স্টেফিনো।
তবে এই স্টেফিনো কখনই বিশ্বকাপ মঞ্চে পা রাখতে পারেননি। অথচ আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়া এবং স্পেনের মতো তিন দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলেছেন এই ফুটবলার। ১৯৫৮ বিশ্বকাপের আগে স্পেন দলে থাকলেও সেবার স্প্যানিশরা পার করতে পারেনি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের বাঁধা। পরেরবার ১৯৬২ সালে বিশ্বকাপ খেললেও সেবার স্টেফিনোকে ছাড়াই এসেছিল স্পেন। কারণ ইনজুরির কারণে খেলার জন্য ফিট ছিলেন না তিনি।
জর্জ বেস্ট (উত্তর আয়ারল্যান্ড)
ফুটবলের ব্যাড বয় খ্যাত জর্জ বেস্ট। ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে দীর্ঘদিন দেখিয়েছিলেন ঝলক। তবে মাদক কেলেঙ্কারির কারণে অকালেই থামতে হয়ে এই ফুটবলারকে। অকালে থেমে গেলেও ফুটবল ইতিহাসের একজন কিংবদন্তি খেলোয়াড় হিসেবেই গণ্য করা হয় তাকে। স্টেফিনোর মতো এই তারকাও বিশ্বকাপ মঞ্চে নিজের পায়ের জাদু দেখাতে পারেননি।
জাতীয় দলে উত্তর আয়ারল্যান্ডকে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন জর্জ বেস্ট। জাতীয় দলের হয়ে পারফর্মেন্সও ছিল বেশ উজ্জ্বল। ৩৭ ম্যাচে করেছিলেন ৯ গোল। তার উজ্জ্বল ফর্মের কারণে ১৯৮২ সালে বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়েছিল উত্তর আয়ারল্যান্ড। তবে কোচের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে সেই বিশ্বকাপে খেলতে পারেননি জর্জ বেস্ট। শুধু তাই নয়, আর কখনই বিশ্বকাপে খেলা হয়নি তার।
জর্জ উইয়াহ (লাইবেরিয়া)
আফ্রিকার ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলার জর্জ উইয়াহ। নিজ প্রতিভাগুনে ইউরোপিয়ান ফুটবলে জায়গা পাকাপোক্ত করেছিলেন। এমনকি নির্বাচিত হয়েছিলেন ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলারও। আফ্রিকার সেরা ফুটবলারের খেতাবও জিতেছিলেন।
ক্লাব ফুটবলে প্যারিস সেন্ট জার্মেইনের হয়ে দারুণ ছন্দে থাকা এই তারকা নিজ দেশকে কখনই বিশ্বকাপ মঞ্চে তুলে আনতে পারেননি। জাতীয় দলের হয়ে ৭৫ ম্যাচে করেছিলেন ১৮ গোল। জর্জ উইয়াহ যেখানে ব্যর্থ, সেখানে অন্যরাও দেখাতে পারেনি সফলতার মুখ। তাই তো বিশ্বকাপ ফুটবলের ২২ আসরের কোনোটিতেই খেলতে পারেনি উইয়াহর দেশ লাইবেরিয়া।
রায়ান গিগস (ওয়েলস)
মিডফিল্ডের অন্যতম সেরা ফুটবলার হিসেবে রায়ান গিগসকে বিবেচনা করা হয়। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে নিজেকে বারবারই প্রমাণ করেছিলেন। হয়ে উঠেছিলেন স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের অন্যতম আস্থা। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে দারুণ ফর্মের কারণে জিতেছেন অসংখ্য পুরষ্কার। এত ব্যক্তিগত অর্জনের মাঝেও একটি আক্ষেপ রয়ে গেছে। তা হলো কখনই বিশ্বকাপ খেলতে না পারা।
সর্বশেষ ১৯৫৬ বিশ্বকাপে খেলেছিল রায়ান গিগসের দেশ ওয়েলস। এরপর থেকেই বিশ্বকাপ মঞ্চে অনুপস্থিত দলটি। বাছাইপর্বের বাঁধা পার করতে না পারায় জাতীয় দলের হয়ে নিজের মিডফিল্ড জাদু বিশ্ববাসীকে দেখাতে পারেননি গিগস। শুধু বিশ্বকাপ নয়, ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপেও খেলতে পারেননি তিনি। ওয়েলসের হয়ে ৬৪ ম্যাচে ১২ গোল করেছিলেন এই তারকা।
আব্দে আইয়ু (ঘানা)
আফ্রিকা পেলে হিসেবে খ্যাত আব্দে আইয়ু। ফরাসি লিগের দল মার্শেইয়ের সবসময়ই উজ্জ্বল ছিলেন আব্দে আইয়ু। তবে দূর্ভাগ্য, তার সময়ে কখনই বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পায়নি ঘানা।
ক্লাব ক্যারিয়ারে মার্শেইয়ের হয়ে অসংখ্য শিরোপা জিতিয়েছেন আব্দে আইয়ু। তবে জাতীয় দলকে কখনই বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের বাঁধা পেরিয়ে মূল পর্বে নিয়ে যেতে পারেননি। এই কারণে বিশ্বকাপ মঞ্চে তার পা পড়েনি। জাতীয় দলের বিশ্বকাপ জিততে না পারলেও ১৯৮২ আফ্রিকান নেশন্স কাপ জিতেছিলেন আব্দে আইয়ু।
স্পোর্টসমেইল২৪/পিপিআর