টেস্ট ক্রিকেটকে বলা হয় ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণ। সাদা পোশাকে পারফর্ম্যান্সের উপর ভিত্তি করেই নির্ধারণ করা হয় একজন ক্রিকেটারের সেরার মানদণ্ড। ক্রিকেটের ‘বাইবেল’ খ্যাত উইজডেন খুঁজে নিয়েছে এগারোজন ক্রিকেটারকে, যারা ২৩ বছর বয়সের আগেই সাদা পোশাকে আলো ছড়িয়েছেন আপন মহিমায়। এই ১১ জনকে নিয়ে উইজডেন ঘোষণা করেছে তাদের ‘সর্বকালের সেরা অনূর্ধ্ব-২৩ টেস্ট একাদশ’।
এক এগারোজনে আছেন কিংবদন্তি স্যার ডন ব্র্যাডম্যান থেকে শুরু করে হালের কাগিসো রাবাদাও। আরও আছেন ক্রিকেট মহাকাব্যের চিরঅমর কয়েকজন। দেখে নেয়া যাক উইজডেনের চোখে সেরা এগারোজন।
গ্রায়েম স্মিথ (অধিনায়ক, দক্ষিণ আফ্রিকা)
মাত্র ২২ বছর দক্ষিন আফ্রিকার অধিনায়কত্ব পাওয়া স্মিথের নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে খুব বেশি সময় লাগেনি। ক্যারিয়ারের চতুর্থ টেস্টেই ডাবল সেঞ্চুরি করে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন এই বাহাতি। ২০০৩ সালে ইংল্যান্ড সফরে তার প্রথম তিনটি ইনিংস ছিল ২৭৭, ৮৫ ও ২৫৯। ২৩ বছর হওয়ার আগেই ২১ টেস্টে ৬ সেঞ্চুরিতে করে ফেলেছিলেন ১৮৮১ রান। তার হাতেই অধিনায়কত্বের ভার দিয়েছে উইজডেন।
অ্যালিস্টার কুক (ইংল্যান্ড)
টেস্ট অভিষেকেই কুক জানান দিয়েছেন তিনি কিংবদন্তি হতেই এসেছেন। ২০০৬ সালে নাগপুরে ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্টে ৬০ আর দ্বিতীয় টেস্টেই করেছিলেন অপরাজিত সেঞ্চুরি। ২৩ বছর হওয়ার আগে টেস্টে প্রথম বছরেই চারটি সেঞ্চুরি করে ফেলেছিলেন কুক। ২৪ টেস্টে ৪৫ দশমিক ০২৩ গড়ে রান করেছিলেন ১৯৩৬। শতরানের ইনিংস ছিল ৭টি। সর্বোচ্চ ছিল ১২৭।
ডন ব্র্যাডম্যান (অস্ট্রেলিয়া)
ডন ব্র্যাডম্যানকে নিয়ে কিছু বলার নেই। ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় টেস্টেই ৬ নম্বরে নেমে করেন ৭৯ ও ১১২। এরপর কেবল সামনেই চলা। মাত্র ২১ বছর বয়সে হেডিংলিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করেছিলেন ক্যারিয়ার সেরা ৩৩৪। ঐ বয়সেই নয় টেস্টের পর তার গড় হয়ে যায় ১০৩। ২৩ বছর পুর্ন হওয়ার আগেই ১৪ টেস্টে ৯৪.৪৫ গড়ে ১৮৮৯ রান করে ফেলেন ডন।
শচীন টেন্ডুলকার (ভারত)
মাত্র ১৬ বছর বয়সে শুরু। শুরুটা তেমন ভালো না হলেও মাত্র ২০ বছর বয়সেই ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ভারতে টেস্ট সেঞ্চুরি করে সারা ফেলে দেন শচীন। ২৩ বছরের আগেই খেলে ফেলেছিলেন ৩৮ টেস্ট। তাতে রান করেছেন ২৪৮৩। সর্বোচ্চ ১৭৯। গড় ছিল ৫১ দশমিক ৭২।
জাভেদ মিয়াঁদাদ (পাকিস্তান)
মিয়াঁদাদের ক্যারিয়ার তিনটি ভিন্ন দশক জুড়ে বিস্তৃত ছিল। ১৯৭৬ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেকে ১৬৩ রানের ইনিংস দিয়ে পথচলা শুরু।। ২৩ বছর হওয়ার আগেই ৩০ টেস্টে ৬২.৩৮ গড়ে ২৪৩৩ রান করে ফেলেন তিনি। সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল ২০৬। শতক ছিল সাতটি।
গ্যারি সোবার্স (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
গ্যারি সোবার্স শুরুতে ছিলেন সাধারণ। তবে সময়ের সাথে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন। ২১ বছর বয়সেই করে বসেন অপরাজিত ৩৬৫। পরের পথটায় জোড়া সেঞ্চুরিও আছে তার। ২৭ টেস্টে ৫৬.৭৪ গড়ে ২২১৩ রান করেছিলেন তিনি। শতক ছিল ৬টি। ৩১টি উইকেটও নিয়েছিলেন ক্যারিবীয় কিংবদন্তি।
ঋষভ পন্ত (উইকেটরক্ষক, ভারত)
ঋষভ পন্তের মতো এত কম বয়সে কোনো উইকেটরক্ষক ব্যাটার নিজেকে চেনাতে পারেননি। এশিয়ার বাইরে তার আগে দুটি সেঞ্চুরি করতে পারেননি কোনো ভারতীয় উইকেটরক্ষক। ২৩ বছর বয়সেই ১৩ টেস্টে ৩৮ দশমিক ৭৬ গড়ে ৮১৪ রান করে ফেলেছিলেন পন্ত। শতক ছিল দুইটি। ক্যাচ আছে ৫৯টি।
ইয়ান বোথাম (দক্ষিণ আফ্রিকা)
বোথাম টেস্টে তার প্রথম কয়েক বছরে দুর্দান্ত প্রভাব ফেলেছিলেন। চতুর্থ টেস্টেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৭ নম্বরে সেঞ্চুরি করেছিলেন। বল হাতে ছিলেন দুর্দান্ত। ১১ টেস্টে ৮ বার পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। ২৩ বছর পূর্ন হওয়ার আগে ১১ টেস্টেই ৫০০ রান ও ৬৪ উইকেট নিয়েছিলেন বোথাম। শতক ছিল তিনটি।
ওয়াকার ইউনিস (পাকিস্তান)
শচীনের সাথে একই ম্যাচে অভিষেক। এরপর গোটা ক্যারিয়ারে দুর্দান্ত বোলিং করেছিলেন ওয়াকার। ২৩ বছর হওয়া আগেই ২০০ টেস্ট উইকেট শিকার করে ফেলেন তিনি। এর আগে ৩৩ টেস্ট নিয়েছিলেন ১৯০ উইকেট। পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন ১৯ বার। সেরা বোলিং ৭৬ রানে ৭ উইকেট।
কাগিসো রাবাদা (দক্ষিণ আফ্রিকা)
দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসে রাবাদার মতো কেউ এভাবে আসেনি। ক্যারিয়ারে শুর থেকেই গতির ঝড় তোলা রাবাদা ২৩ বছর বয়সের আগেই ৩০ টেস্টে নিয়েছিলেন ১৪৩ উইকেট। এর মাঝে উঠেছিলেন টেস্ট র্যাংকিংয়ের শীর্ষেও। পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন নয়বার। দশ উইকেট তিনবার।
সাকলাইন মোশতাক (পাকিস্তান)
উইজডেনের সেরা একাদশের একমাত্র স্পিনার সাকলাইন মোশতাক। মাত্র ২৭ বছর বয়সেই ক্যারিয়ার থামিয়ে দিলেও শুরুর দিকে দুর্দান্ত ছিলেন তিনি। ২৩ বছরের আগেই ২৪ টেস্টে ১০৭ উইকেট শিকার করেছিলেন এই অফ স্পিনার। পাঁচ উইকেট ছিল নয়টি। সেরা বোলিং ৪৬ রানে ৬ উইকেট।
স্পোর্টসমেইল২৪/এএইচবি