‘ফুটবল খেলা শুরু করেছিলাম কারণ আমি কার্টুন ভালোবাসতাম। আমি অলিভার হতে চাইতাম, কারণ সে পুরো মাঠজুড়ে খেলতো।’- কথাটি বলেছিলেন সাবেক স্প্যানিশ তারকা ফার্নান্দো তোরেস। অন্য সবার মতো পাশের কাউকে বা কোনো ফুটবলারকে দেখে প্রভাবিত হননি, বরং তার ফুটবলার হিসেবে গড়ে উঠার পিছনে বড় প্রভাব রেখেছে ফুটবল সম্পর্কিত জাপানিজ একটি কার্টুন সিরিজ। আর অলিভার ছিল সেই কার্টুনের এক চরিত্র। শুধু কি ফুটবল খেলা? সেই কার্টুন সিরিজ দেখেই বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন বুনেছিলেন তোরেস। দারুণ ছন্দে থেকে ২০১০ সালে সেই বিশ্বকাপ শিরোপাও জিতে নিয়েছিলেন এই স্প্যানিয়ার্ড।
পুরো মাঠ জুড়েই বল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে চাইলেও শুরুটা গোলবারের নিচে করেছিলেন ফার্নান্দো তোরেস। বড় ভাইয়ের মতো তিনিও গোলবারের অতন্দ্র প্রহরী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু যার মধ্যে লুকায়িত আছে গোল করার অসীম সম্ভাবনা, সে কি আর গোলবারের নিচে দাঁড়িয়ে থাকে?
অপেশাদার ফুটবলে গোলকিপিং করতে গিয়ে মুখে আঘাত পেয়ে হারিয়ে ফেলেন নিজের দাঁত। এরপরেই গোলকিপিং থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। জানান, খেলবেন নতুন কোনো পজিশনে। আর নতুন পজিশন হিসেবে তোরেসের পছন্দ স্ট্রাইকিং। নতুন পজিশনে এসেই যেন নিজেকে একদম পাল্টে ফেলার শুরু। স্ট্রাইকিং পজিশনে শুরু হয় ফার্নান্দো তোরেসের উত্থান যাত্রা। মাদ্রিদের অপেশাদার ক্লাবগুলোর হয়ে শুরু করেন নিজের ফুটবলার হওয়ার মিশন।
মাদ্রিদের বিভিন্ন অপেশাদার দলে ভুড়ি ভুড়ি গোল করে নজর কাড়েন অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের স্কাউটদের। সেই সুবাদে ১৯৯৫ সালে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের একাডেমিতে সুযোগ করে নেন তোরেস। একাডেমি থেকে তড়িৎগতিতেই যুব দলে উত্থান ঘটে তোরেসের। সেখান থেকে মূল দল আর মাত্র ১৯ বছর বয়সেই তার কাঁধে উঠে অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের মতো ক্লাবের অধিনায়কত্বের দায়িত্ব ভার।
এর আগে ২০০১ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সেই অসম্ভব প্রতিভাবান এই ফুটবলারের অভিষেক ঘটে অ্যাটলেটিকোর মূল দলে। লেগানেসের বিপক্ষে দারুণ পারফর্ম করেই নজর কাড়া অভিষেক তার। যদিও সেই অভিষেকটা ছিল স্প্যানিশ প্রথম বিভাগ ফুটবলে। কারণ সে সময় প্রথম বিভাগে খেলতো মাদ্রিদের ঐতিহ্যবাহী এই ক্লাব।
অভিষেক মৌসুমে অবশ্য খুব একটা ম্যাচ খেলার সুযোগ মেলেনি তার। মূলত ইনজুরির কারণে অভিষেক মৌসুমে মূল দলে নিয়মিত হতে পারেননি। অবশ্য ফিট হওয়ার পর তোরেসকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তার দারুণ ফর্মেই দুই মৌসুম পর প্রথম বিভাগ থেকে লা লিগায় ফিরে আসে মাদ্রিদের দলটি।
২০০২-০৩ মৌসুমে লা লিগায় নিজের অভিষেকেই ২৯ ম্যাচে ১৩ গোল করে নজর কাড়েন ফার্নান্দো তোরেস। উজ্জ্বল এক মৌসুম কাটানোর পর তার দিকে হাত বাড়ায় সদ্যই বড় বিনিয়োগ পাওয়া চেলসি। সে সময় চেলসিকে কিনে নিয়ে সাজানোর কাজে হাত দেন রাশিয়ান ধনকুবের রোমান আব্রামোভিচ। তখনই চেলসিতে তোরেসকে ভেড়াতে চেয়েছিলেন। তবে আর্থিকভাবে বেশি লাভবান হওয়ার সুযোগ না নিয়ে তোরেসকে নিজেদের ডেরায় রেখে দেয়। তখন না পারলেও পরে অবশ্য লিভারপুল থেকে ফার্নান্দো তোরেসকে নিজেদের দলে ভিড়িয়েছিল স্ট্যামফোর্ড ব্রিজের দল চেলসি।
লা লিগায় অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের হয়ে যখন শুধুই নজর কাড়া পারফর্ম করে যাচ্ছিলেন তোরেস সে সময় বরাবরই তার দিকে নজর রাখছিলো ইউরোপিয়ান জায়ান্ট ক্লাবগুলো। মাত্র কয়েক মৌসুমের ব্যবধানে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলারে পরিণত হওয়া তোরেসের শুধুই সামনে এগিয়ে যাওয়ার গল্প। অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের হয়ে এই দারুণ ছন্দ তাকে সুযোগ করে দিয়েছিল ২০০৬ বিশ্বকাপ খেলার।
দ্রুতগতিতে সামনে এগিয়ে যাওয়া তোরেস পথে অনেকবারই হোঁচট খেয়েছিলেন। উঠেও দাঁড়িয়েছিলেন, তবে চেলসিতে খাওয়া হোঁচটের পর তার থেমে যাওয়ার গল্পটাও সবারই জানা। আর এতেই তার মধ্যে বিশ্বসেরা হওয়ার সবধরনের প্রতিভা থাকলেও মধ্যমমানের একজন স্ট্রাইকার হিসেবেই পরিচিত পেয়েছিলেন।
অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদে নিজের জাত চেনানোর পর তাকে দলে পেতে উঠে পড়ে লাগে ইউরোপিয়ান জায়ান্ট ক্লাবগুলো। তাকে দলে নিতে দলগুলো যে উঠে পড়ে লাগবে পরিসংখ্যানই সেই স্বপক্ষে যুক্তি দেয়। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের সিনিয়র দলের হয়ে ১৭৪ ম্যাচ খেলে তার গোল সংখ্যা ছিল ৭৪!
শেষ পর্যন্ত তোরেসকে নিজেদের দলে নেওয়ার লড়াইয়ে জয়ী ইংলিশ জায়ান্ট লিভারপুল। ২০০৭-০৮ মৌসুমে অ্যাথলেটিকোর সাথে ১২ বছরের সম্পর্ক ছেদ করে অলরেডদের ডেরায় যোগ দেন তোরেস। সে সময় এই স্প্যানিয়ার্ডকে দলে পেতে অলরেডদের খরচ করতে হয়েছিল ২৬ মিলিয়ন ইউরো! যা কি-না তখনকার সময়ে দল-বদলের বাজারে ইউরোপিয়ান রেকর্ড। যদিও এখনকার দল-বদলে অর্থের ঝনঝনানিতে ২৬ মিলিয়ন শুনলে মনে হতেই পারে লিভারপুল এমন কি আর খরচ করছে!
অর্থের মূল্যমান বোঝাতে একটা উদাহরণই যথেষ্ট। ফার্নান্দো তোরেসকে বিক্রি করে পাওয়া অর্থ দিয়ে অভিজ্ঞ উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার ডিয়েগো ফোরলানকে দলে নিয়েছিল মাদ্রিদের ক্লাবটি।
তোরেস লিভারপুলে টেনে নিয়ে এসেছিলেন অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদে থাকা তার সেই দারুণ ছন্দ। সাথে লিভারপুলের রেকর্ড পরিমাণ অর্থ খরচের সেই আস্থার প্রতিদান দিয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে (ইপিএল) নিজের অভিষেক মৌসুমে করেন ২৪ গোল। অথচ এর আগে কোনো মৌসুমেই ২০ গোলের বেশি করতেই পারেননি তোরেস। গোল সংখ্যা বাড়ার পিছনে অনেকটাই অবদান রেখেছেন অলরেড কিংবদন্তি স্টিভেন জেরার্ড। দ্রুতই তোরেসের সাথে দারুণ এক বোঝাপড়া তৈরি করে লিভারপুলের আক্রমণভাগকে করে তুলেছিলেন অপ্রতিরোধ্য।
২৪ গোল করে ১৯৯৫-৯৬ মৌসুমের পর প্রথম অলরেড ফুটবলার হিসেবে প্রিমিয়ার লিগে ২০ এর অধিক গোলের রেকর্ড গড়েন তিনি। আর তোরেসের এই দারুণ ছন্দই বাড়িয়ে দেয় তার আত্মবিশ্বাস। পাশাপাশি হু হু করে বাড়ে তার প্রতি প্রত্যাশার পারদও।
প্রিমিয়ার লিগে ২৪ গোলের সাথে ক্লাবটির হয়ে অভিষেক মৌসুমে মোট ৩৩ গোল করেন ফার্নান্দো তোরেস। আর এতেই ইংল্যান্ডের মাটিতে নতুন এক রেকর্ডও গড়েন। প্রথম বিদেশি ফুটবলার হিসেবে ইংল্যান্ডের কোনো ক্লাবের হয়ে এক মৌসুমে ৩০ এর অধিক গোল করার কীর্তি গড়েন তিনি।
প্রত্যাশার সাথে টেক্কা দিয়ে লিভারপুলে নিজের দ্বিতীয় মৌসুমের শুরুটাও দারুণ ছিল তোরেসের। এর আগে ২০০৮ সালে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে তার পারফর্মেন্সে ভর করে দীর্ঘ ৪৪ বছর পর শিরোপা পুনরুদ্ধার করে স্পেন। ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে ম্যান অব দ্য ফাইনালও ছিলেন ফার্নান্দো তোরেস। এতেই বোঝা যায় কতটা ছন্দে ছিলেন এই তরুণ।
তার এই দারুণ ছন্দ দেখে লিভারপুল সমর্থকরা স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে হটিয়ে দীর্ঘদিন পর লিগ টাইটেল জয়ের স্বপ্নে বিভোর হয়ে উঠে। কিন্তু তোরেসে ভর করে প্রিমিয়ার লিগের অধরা সেই শিরোপা খরা কাটিয়ে উঠতে পারেনি মার্সিসাইডের দলটি। এমনকি ফার্নান্দো তোরেস মার্সিসাইডে পাড়ি জমানোর পর দীর্ঘ সময় ট্রফি কেসে কোনো শিরোপা জিততে পারেনি লিভারপুল। তোরেস লিভারপুলে থাকাকালীন অ্যানফিল্ডে হয়নি কোনো ট্রফি উৎসব।
অভিষেক মৌসুম থেকেই অলরেডদের জার্সিতে স্টিভেন জেরার্ড আর ফার্নান্দো তোরেসের মধ্যে গড়ে উঠেছিল দারুণ এক বোঝাপড়া। প্রতিপক্ষ কোচেদের তাদের নিয়ে আলাদা করে ভাবতে বাধ্য করেছিলেন দু’জনে। মিডফিল্ডের জেরার্ড আর ডি-বক্সের তোরেসের দারুণ বোঝাপড়ায় প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগ বারবারই খেই হারিয়ে ফেলছিলো। তাদের দু’জনের দারুণ পারফর্মেন্সে প্রিমিয়ার লিগে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আর চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়েছিল অলরেডরা।
দারুণ ফর্মে থাকা তোরেস ২০১০-১১ মৌসুমও শুরু করেছিলেন অ্যানফিল্ডেই। তবে নতুন কোচ রয় হজসনের অধীনে অ্যানফিল্ডে নিজের মন বসাতে পারেননি তোরেস। তাই সিদ্ধান্ত নেন মার্সিসাইড ছাড়বেন। আর নতুন গন্তব্য হিসেবে বেছে নেন লন্ডনের ক্লাব চেলসিকে।
ব্লুজদের হয়ে মাঠে নামার আগে অলরেডদের হয়ে সবধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে তোরেস করেছিলেন ৮১ গোল। লিভারপুলে দারুণ ছন্দে থাকা তোরেস অবশ্য ফর্মের ছিটেফোঁটাও স্ট্যামফোর্ড ব্রিজের ক্লাবটির হয়ে দেখাতে পারেননি। এতেই থমকে যায় তার ক্যারিয়ার।
লিভারপুলে দারুণ সময় কাটানো তোরেস অবশ্য বেশ কয়েকবারই ইনজুরি সমস্যায় পড়েছিলেন। তিন মৌসুমে অনেকটা সময়ই ইনজুরির সাথে লড়েছিলেন ফার্নান্দো তোরেস। ইনজুরিতে থাকায় হারিয়ে ফেলেছিলেন নিজের আত্মবিশ্বাসও। তবে জেরার্ডের দারুণ সমর্থনে একটিবারও বোঝা যায়নি ফার্নান্দো তোরেসের আত্মবিশ্বাসের অভাব। নিজের ভালোর জন্যই ভেঙে পড়া সেই আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতেই মার্সিসাইডের ক্লাবটি থেকে বিদায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
২০১০-১১ মৌসুমের শীতকালীন দল-বদলের শেষদিনে রেকর্ড ৫০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে চেলসিতে নাম লেখান। আর রোমান আব্রামোভিচ প্রমাণ করে দেন অর্থের জোরেই ভেড়ানো সম্ভব বড় বড় তারকাদের।
এর আগে আরও দুইবার আব্রামোভিচ তোরেসের দিকে হাত বাড়িয়েছিলেন। সেই দুইবার অবশ্য ব্যর্থদের তালিকায় ছিলেন এই রাশিয়ান ধনকুবের। দীর্ঘ ৮ বছরের প্রচেষ্টা বৃথা যেতে দেননি তিনি। তোরেসকে চেলসিতে ভিড়িয়েই ছেড়েছেন। তবে আব্রামোভিচের জন্য এটি ছিল একটি ‘লস প্রজেক্ট’।
রোমান আব্রামোভিচের মালিকানাধীন ক্লাবে কোনোভাবেই নিজেকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না তোরেস। এমনকি চেলসির জার্সিতে কখনই নিজেকে খুঁজে পাননি এই স্প্যানিয়ার্ড। একাদশে নিয়মিত হতে না পারলেও চেলসির হয়ে জিতেছিলেন অনেকগুলো শিরোপা। যার মধ্যে ছিল ইউরোপিয়ান ক্লাব শ্রেষ্ঠত্বের চ্যাম্পিয়নস লিগের ট্রফি।
বহু আশা নিয়ে চেলসিতে আসলেও সেই সময়টা যে তার জন্য সুখকর ছিল না, সেটা তোরেসে বক্তব্য আর পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে দেয়। চেলসি ক্যারিয়ার নিয়ে তোরেস বলেছিলেন, ‘Swimming in wet clothes’। আর পরিসংখ্যান বলে চার বছরের চেলসি অধ্যায়ে ১৭২ ম্যাচে তার গোল সংখ্যা মাত্র ৪৫!
চেলসিতে এসে মানিয়ে নিতে পারেননি খেলার ধরনে। এছাড়াও মিডফিল্ডে থাকা ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ড আর আক্রমণভাগে থাকা দিদিয়ের দ্রগবার সাথেও হয়নি সঠিক বনিবনা। এতেই তার আত্মবিশ্বাস একদম তলানিতে গিয়ে ঠেকে। ভাঙা আত্মবিশ্বাসকে আর কখনই জোড়া লাগাতে পারেননি তোরেস। চেলসিতে হতাশাজনক একটি অধ্যায় কাটান। নিশ্চিতভাবেই তোরেসের জীবনের সবচেয়ে ভুল সিদ্ধান্তগুলোর একটি চেলসিতে যোগ দেওয়া। আর তোরেস নিজেও হয়তো ক্যারিয়ারের এই সময়টাকে ভুলে যেতেই চাইবেন।
চেলসিতে তার দূর্দশা চললেও জাতীয় দলের হয়ে ভিনসেন্ট দেল বস্কের অধীনে তোরেস হয়ে উঠেছিলেন স্পেনের গোল মেশিন। জাতীয় দলের সেই পারফর্মেন্সে বিবেচনাতেই ২০১২ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের স্পেন দলে সুযোগ পান। ফাইনালে গোল করে টানা দ্বিতীয়বারের মতো স্পেনকে এনে দেন ইউরোপ সেরা মুকুট। সাথে নিজের করে নেন গোল্ডেন বুট। এরপরেও চেলসিতে নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি এই স্প্যানিয়ার্ড।
চেলসির কালো অধ্যায়ের ছাপ তোরেস নিজের আন্তর্জাতিক ফুটবল ক্যারিয়ারে পড়তে দেননি, অন্তত পরিসংখ্যান সেই কথাই বলে। জাতীয় দলের হয়ে তোরেসের গোল সংখ্যা ৩৮! আর এখন পর্যন্ত স্পেনের ইতিহাসের তৃতীয় সেরা গোলদাতাও তিনিই। তবে জাতীয় দলের হয়ে তোরেস ঝলক শেষ ওই ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের পরই। এরপরে জাতীয় দলের হয়ে বলার মতো কিছুই পারেননি এই ফুটবলার। অবশ্য শুধু তোরেস না, পুরো স্পেন দলই হারিয়ে ফেলেছিল তাদের বিখ্যাত টিকিটাকার সেই ছন্দ।
জাতীয় দলে পাওয়া সাফল্যের পর চেলসিতে নিজের সেই ছন্দ ফিরে না পেলে লোনে যোগ দেন ইতালিয়ান ক্লাব এসি মিলানে। সেখানেও নিজের ছায়া থেকে বের হয়ে আসতে পারেননি। চেলসি কিংবা এসি মিলান কোথাও যখন থিতু হতে পারছেন না সে সময় তার দিকে ঘরে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য হাত বাড়ায় অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। ঘরের ছেলেকে ঘরে ফিরিয়ে আনে স্প্যানিশ ক্লাবটি।
দীর্ঘ আট বছর পর ঘরের ছেলে যখন ঘরে ফিরে তখন অফ ফর্মে জর্জরিত হয়ে হারিয়ে যাওয়ার অবস্থায়। তবুও ডিয়েগো সিমিওনের অধীনে সাড়ে তিন বছর খেলেছিলেন। অবশ্য সেই সময় কখনই নিয়মিত একাদশের সদস্য হতে পারেননি। বরঞ্চ বিকল্প হিসেবেই খেলেছেন বারবার। অ্যান্তেনিও গ্রিজম্যান, ডিয়েগো কস্তাদের ভিড়ে একসময়ের বিশ্বসেরার নিয়মিত জায়গা ছিল সাইড বেঞ্চ!
ডিয়েগো সিমিওনের অধীনে যখন আরও বেশি ব্রাত্য হয়ে পড়ছিলেন সেই সময় তোরেস সিদ্ধান্ত নেন ছাড়বেন অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। উদ্দেশ্যহীনভাবে ক্লাব ছাড়া তোরেসের ভবিষ্যত গন্তব্য কি হবে সেটা নিয়ে তখনও কেউ নিশ্চিত করে জানতো না।
তোরেসের ফুটবল শুরুর সাথে যেমন জাপানের নাম জড়িয়ে আছে, শেষটার সাথেও নিশীথ সূর্যের দেশের নাম জড়িয়ে যাক এমনটাই হয়তো চেয়েছিলেন বিধাতা। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ ছেড়ে জাপানিজ ক্লাব সাগান টসুতে যোগ দেন ফার্নান্দো তোরেস।
সেখানে কিছুদিন খেলে মাত্র ৩৫ বছর বয়সেই বিদায় জানান ফুটবল ক্যারিয়ারকে। যার কিনা হওয়ার কথা ছিল বিশ্বসেরা এক স্ট্রাইকার, সেই তোরেস নীরবে বিদায় বলেন ফুটবলকে। এর থেকে বড় আক্ষেপ আর কি হতে পারে! এক রাশ হতাশা আর আক্ষেপের সুরেই হয়তো পেশাদার ক্যারিয়ারকে বিদায় জানিয়েছিলেন। আর হয়তো বলছিলেন ‘কেন যোগ দিলাম চেলসিতে?’
লিভারপুল ছাড়ার পর আর আরও তিনবার ক্লাব বদল করেছিলেন তোরেস। কিন্তু অ্যানফিল্ডে ফেলে আসা সেই ফর্ম আর কখনই দেখাতে পারেননি। লিভারপুল ছেড়ে চেলসিতে যোগ দেওয়ায় অলরেডদের সমর্থকদের কাছে পেয়েছেন অসংখ্য দুয়োধ্বনি, ঘৃণা আর অভিমান। তবে লিভারপুলের জার্সিতে তিন বছরের ক্যারিয়ারে যা করে গেছেন সেই দারুণ পারফর্মেন্স ভোলার সাধ্য আছে কার? সেটাই যে প্রকৃত ফার্নান্দো তোরেস! বিশ্বসেরা হতে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া তোরেস।
স্পোর্টসমেইল২৪/পিপিআর