পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরাপরে পাড়ি জমিয়েছেন সর্বকালের সেরা লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্ন। ওয়ার্ন চলে গেলেও রয়ে গেছে তার কীর্তি। যে বা যারাই তার মুখোমুখি হয়েছিলেন, তারাই বুঝেছেন বাইশগজের ইতিহাসে কি ছিলেন এই অস্ট্রেলিয়ান ঘূর্ণি জাদুকর। এদের মধ্যে অনেকেই ক্রিকেটের মহাকাব্যে জায়গা করে নিয়েছেন কিংবদন্তি হিসেবে। ওয়ার্নের শেষ বিদায়ে তারা খুলে বসেছিলেন স্মৃতির ঝাঁপি।
‘তার প্রতিটি বল ছিল একটি প্রতিযোগিতা’ - রাহুল দ্রাবিড় (ভারত)
ওয়ার্নের সময়ে ভারতের অন্যতম ব্যাটিং স্তম্ভ ছিলেন ‘দ্য ওয়াল’ খ্যাত রাহুল দ্রাবিড়। ওয়ার্নকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে দ্রাবিড় বলেন, ‘ওয়ার্নির বিরুদ্ধে খেলার সময় একটি জিনিস যা সর্বদা আলাদা ছিল তা হলো, সবসময় ব্যাটারকে বুঝে ফেলতো। সবসময় মনে হতো তার একটা পরিকল্পনা আছে। তার সঙ্গে যতটা ব্যাট এবং বলের প্রতিযোগিতায় লড়তে হতো, তার চেয়ে বেশি মানসিক লড়াই করতে হতো।’
দ্রাবিড় আরও বলেন, ‘তার বল অফ স্টাম্পে পিচিং করে ঘুরতো। এটাই ছিল ওয়ার্নির বৈশিষ্ট্য। আমরা এটা মাইক গ্যাটিংয়ের বেলায় দেখেছি। ভিভিএস লক্ষ্মণের বেলায়ও দেখেছি। এমনিকি ক্যারিয়ারের শেষের দিকেও ওয়ার্নি এই কাজটা সঠিকভাবে করতেন। তখন তাকে খেলা সবার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ ছিল।’
‘তার উপস্থিতি ছিল অসাধারন এবং বেশি শক্তিশালী’ - ইয়ান বেল
ইংলিশ ক্রিকেটার ইয়ান বেল হয়েছেন ব্যাটার অথচ হতে চাইতেন লেগ স্পিনার। সাবেক ইংলিশ ব্যাটার বলেন, ‘বড় হয়ে যখন আমার ভাইয়ের সাথে বাগানে ক্রিকেট খেলতাম, আমি প্রায়শই শেন ওয়ার্ন হওয়ার ভান করতাম। ওয়ার্নি ছিলেন আমার নায়কদের একজন। তিনি ছিলেন পরম প্রতিভা।’
বেল বলেন, ‘আমার টেস্ট ক্যারিয়ারে আমি যে সব সেরা বোলারের বিরুদ্ধে খেলেছি, তাদের মধ্যে সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় ওয়ার্নি। পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা, লর্ডস, এমসিজি - যেখানেই হোক না কেন, সত্যিই অসাধারণ ছিল। রাজার সাথে মাঠ ভাগাভাগি করে নেওয়াটা সৌভাগ্যের বিষয়। পুরো ক্রিকেট বিশ্ব তাকে ভীষণভাবে মিস করবে।’
‘তোমাকে মিস করছি’ - শচীন টেন্ডুলকার (ভারত)
ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উত্তেজনা দেখা যেতো, যখন ওয়ার্ন বল করতে আসতেন শচীন টেন্ডুলকারকে। ওয়ার্নকে নিয়ে স্মৃতি হাতড়ে ফিরলেন ‘লিটল মাস্টার’। শচীন বলেন, ‘১৯৯৮ সালে অস্ট্রেলিয়া সফর ছিল শেনের বিরুদ্ধে আমার প্রথম টেস্ট সিরিজ। প্রতিটি ডেলিভারিতেই তিনি ছিলেন প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী। দিনের দ্বিতীয় বা শেষ ওভারের মুখোমুখি হলেও সর্বদা চোখ খোলা রাখতে হয়েছিল।’
মাস্টার ব্লাস্টার বলেন, ‘আমার ক্যারিয়ারে আমি অনেক ভালো স্পিনার খেলেছি, কিন্তু শেন অন্যরকম। আমি অনুভব করেছি যে এটি তার ক্লাস। সে অসাধারণভাবে বল ড্রাফট করতো। বিশ্ব ক্রিকেটে অনেক বোলারই তা করতে পারেননি। চারপাশে দুর্দান্ত কিছু স্পিনার ছিল, তবে শেন নিঃসন্দেহে আলাদা ছিল।’
‘সাদা বলের ক্রিকেটেও ওয়ার্নি ছিলেন রাজা’ - মাহেলা জয়াবর্ধনে (শ্রীলঙ্কা)
টেস্টের লাল বলেই বেশি সফল ওয়ার্ন। তবে লাল বলেও তার কারিশমা ভুলেননি লঙ্কান গ্রেট মাহেলা জয়াবর্ধনে। এই কিংবদন্তি বলেন, ‘চাপ তৈরিতে ওয়ার্নি ছিলেন একজন ওস্তাদ। তিনি চারপাশে ফিল্ডারদের কৌশলে চালাতেন। কেউ বুঝতে পারতো না তার কৌশল। এটা ব্যাটারদের জন্য একটি ধ্রুবক যুদ্ধ ছিল’।
মাহেলা বলেন, ‘এমনকি সাদা বলের ক্রিকেটেও রাজা ছিলেন ওয়ার্নি। তিনি চ্যালেঞ্জটি উপভোগ করতেন কারণ ব্যাটাররা তার কাছে আসতো সে কখনো পিছু হটেনি। তিনি জানতেন দলের প্রয়োজনে তিনি উইকেট পেতে পারেন। তিনি বড় ম্যাচগুলো পছন্দ করতেন। তিনি সত্যিকারের ক্রিকেট ভালোবাসতেন। তিনি খেলায় অসাধারণ অবদান রেখেছিলেন। ওয়ার্নিকে আমাদের সবারই মনে রাখা উচিত।’
‘নেতা হওয়ার জন্য তার অধিনায়ক হওয়ার দরকার ছিল না’ - ইউনিস খান
শেন ওয়ার্নকে স্মরণ করে পাকিস্তানের সাবেক ব্যাটার ইউনিস খান বলেন, ‘শেন ওয়ার্নের নিজেই জানতেন তিনি একজন ম্যাচ উইনার। সে এমনই চরিত্র ছিল যার নেতা হওয়ার জন্য অধিনায়ক হওয়ার দরকার ছিল না। তিনিই প্রথম আইপিএলে রাজস্থান রয়্যালসকে শিরোপা জিতিয়েছেন। আমি সেখানে ছিলাম, আমি তার অধিনায়কত্ব সম্পর্কে খুব কাছ থেকে দেখেছি।’
‘তিনি শুধুমাত্র একটি পরিকল্পনা বা শৈলীতে লেগে থাকেননি। সর্বদা নতুন কিছু তৈরি করতেন। বল দিয়ে তিনি যা শিখতেন, মাঠে তা চেষ্টা করতেন। তার বোলিং সম্পর্কে কথা বলাটা অনেকটা সূর্যের কাছে মোমবাতি ধরার মতো। সবাই জানে তিনি কতটা মহান ছিলেন। সে এতটাই দুর্দান্ত বোলার ছিল যে তাকে খেলানো সহজ ছিল না। আমি রানে থাকলেও তার বিরুদ্ধে স্বাধীনভাবে খেলতে পারতাম না।’
স্পোর্টসমেইল২৪/এএইচবি