বাংলাদেশে জনপ্রিয় ‘পাঁচ’ বিদেশি ক্রিকেটার

আরিফুল হক বিজয় আরিফুল হক বিজয় প্রকাশিত: ০৬:৫৪ পিএম, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২
বাংলাদেশে জনপ্রিয় ‘পাঁচ’ বিদেশি ক্রিকেটার

বাংলাদেশ, বিশ্বের মাঝে চৌষট্টি হাজার বর্গমাইলের ছোট্ট এক ভূ-খন্ড। চারপাশে তার সবুজে বেষ্টিত, মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে অসংখ্য খরস্রোতা নদী। বিশ্বের মাঝে বাংলাদেশের প্রথম পরিচয়ই হলো এই নদী আর প্রকৃতি। জল ও প্রকৃতির এই গল্পের মাঝে হুট করে এসে দোলা দিয়ে গেল ব্যাট-বলের খেলা ক্রিকেট।

ছয় ঋতুতে হা-ডু-ডু খেলে কাটিয়ে দেয়া বাঙ্গালী পরিচিতি হলো নতুন এই খেলার সাথে। এক টুকরো কাঠ কিংবা বাতাবি লেবু রূপ নিলো ভারী ব্যাট আর চামড়ার বলে। উন্মাদনা পৌছে গেল মিরপুর থেকে লর্ডসের প্রান্তরে। হাঁটি হাঁটি করে পথ চলা বাংলাদেশ ক্রিকেট পৌছে গেল বিশ্ব দুয়ারে। মাশরাফি, সাকিব,তামিমরা হয়ে উঠলেন ‘লাল-সবুজের ব্র্যান্ড’।

তবে বাস্তবতা হলো, বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশ এখন সেরা দশের এক দল হলেও নেই কোনো বৈশ্বিক শিরোপা। যদিও জুনিয়ররা সেই আক্ষেপে কিছুটা প্রলেপ দিয়েছে ‘বিশে বিশ্ব জয়’ করে। বঙ্গ ক্রিকেটে যতটা না আনন্দ, তার চেয়ে বেশি বেদনার উপাখ্যান। তবুও এই দেশের মানুষ ক্রিকেটটাকে পাগলের মতো ভালোবাসে। এই প্রেম পদ্মা, মেঘনা, যমুনার মতোই বিশাল এক মহাকাব্য।

এই ছড়ানো ছিটানো নদীগুলোর মতোই বাংলাদেশীদের ভালোবাসা দেশের গন্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের বাইরে এদের মুগ্ধতার তালিকায় আছেন ব্যাট-বল হাতে বিশ্ব মাতিয়ে রাখা অনেক ক্রিকেটার। আজ এমন পাঁচজন ক্রিকেটারের দিকে আলো ফেলবো। যাদেরকে বাংলাদেশী সমর্থকেরা সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। যাদের ব্যাটের জাদুর মোহতে রঙ্গিন পর্দায় তাকিয়ে থাকে অপলক।

৫. কুমার সাঙ্গাকারা (শ্রীলঙ্কা)
সাবেক এই শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটার ব্যাট হাতে মাঠে নামলেই তার ব্যাট কথা বলতো তার ইচ্ছে মতো। কাভার ড্রাইভটা খেলতেন দারুণ। যেনো কোনো শিল্পী নিপুণ কায়দায় আঁচড় কেটে যাচ্ছেন সবুজ গালিচায়। বাংলাদেশকে পেলে তার ব্যাট কথে বলতো আরও বেশি। রানের বন্যা বইয়ে দিতেন স্রেফ। পুরো ক্যারিয়ারের ৬৩টি শতকের ১২টিই বাংলাদেশের সাথে। বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন হাজারের উপরে রান করেছেন সাঙ্গা। এর মধ্যে চট্টগ্রামে খেলা তার সেই ৩১৯ রানে ইনিংসটা আজও জ্বলজ্বলে স্মৃতির পাতায়।

sportsmail24নান্দনিক কাভার ড্রাইভে আজীবন মুগ্ধতা ছড়িয়েহেন সাঙ্গাকারা

ক্যারিয়ারে ৫৯৪ ম্যাচের মধ্যে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৯টি ম্যাচ খেলেছেন এই লঙ্কান কিংবদন্তি। বাংলাদেশ হয়ে উঠেছিল সাঙ্গার অতি আপন। খেলেছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেও (বিপিএল)। চন্ডিকা হাতুরেসিংহে বাংলাদেশের কোচের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করার পর সাঙ্গাকে কোচ হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। তবে কিছু কারণে সেই প্রস্তাবে রাজি হন নি লঙ্কান গ্রেট। খেলা ছেড়ে দিলেও সাঙ্গাকারা এখনো বাংলাদেশে সমান জনপ্রিয়। বাংলাদেশের অনেক তরুণ ক্রিকেটারই তাকে আদর্শ মেনে বড় ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বাইশগজে পা রেখেছে।

৪. শহিদ আফ্রিদি (পাকিস্তান)
সাহেবজাদা মোহাম্মদ শহীদ খান আফ্রিদি, যিনি শহীদ আফ্রিদি নামেই পরিচিত। বাংলাদেশে অন্যতম জনপ্রিয় ক্রিকেটারদের একজন। কিংবদন্তি পাকিস্তানি অলরাউন্ডার টাইগারদের বিরুদ্ধে ৩১টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে একটি শতক এবং দুটি অর্ধশতকের সাহায্যে ৭০৮রান করেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে ছয়বার ম্যাচসেরার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন তিনি। বাংলাদেশে যথেষ্ট প্রভাব রেখে গেছেন পাকিস্তানি অলরাউন্ডার।

sportsmail24চিরচেনা এই উদাযাপন হয়ে গিয়েছিল আফ্রিদির ট্রেডমার্ক

নব্বই এর দশকে যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বড় হচ্ছিল, তখন মানুষ ক্রিকেটের বড় আসরে অন্যান্য দেশকে সমর্থন দিতো। শহীদ আফ্রিদি সেই সময় বাংলাদেশের কোটি দর্শকদের সমর্থন পেয়েছিল। আফ্রিদি বাংলাদেশের মাটিতে মোট ৪১টিম্যাচ খেলে রান করেছেন ৬৭২। রয়েছে দুটি অর্ধশতক। ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পেয়েছেন চারবার। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেও একসময় নিয়মিত নাম ছিল শহিদআফ্রিদি। বাংলাদেশের তরুণ ক্রিকেটারদের আইডলের নাম বলতে বললে অনেকেই শহীদ আফ্রিদির নাম বলবে।

৩. সৌরভ গাঙ্গুলি (ভারত)
সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী বাংলাদেশে জনপ্রিয় বিদেশী ক্রিকেটারদের একজন। সৌরভ কি বাংলাদেশে বিদেশী ব্যক্তি? জবাবে কোটি কোটি বাংলাদেশি যদি বলে, সৌরভ আমাদের লোক কিন্তু সে ভারতের হয়ে খেলেছে! তবে হাসার বিন্দুমাত্র কারণ নেই। সৌরভ বাংলাদেশে ‘দাদা’ নামেই পরিচিত।

সৌরভ গাঙ্গুলী পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেছেন এবং বড় হয়েছেন। কলকাতা ভারতীয় রাজ্য হলেও বাংলাদেশের সবচেয়ে কাছের বিদেশি শহর। যেখানে সকল মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। যা বাংলাদেশের প্রধান ভাষাও। সুতরাং, সৌরভ গাঙ্গুলির সঙ্গে বাংলাদেশিদের একটি দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে।

sportsmail24সমগ্র ভারতের অধিনায়কদের অধিনায়ক হয়ে আছেন সৌরভ

২০০০ সালে যখন বাংলাদেশ তাদের অভিষেক টেস্ট খেলেছিল, তখন সৌরভ ভারতের অধিনায়ক। বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৫টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলেন সৌরভ। দুইটি শতক এবং সাতটি অর্ধশতকের সাহায্যে ৫৯ দশমিক ২৮ গড়ে ৮৩০ রান করেছেন। বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে প্রিয় বিদেশি ক্রিকেটারদের তালিকা দিনে দিনে বদলে যেতে পারে। তবে সৌরভের নামটা সেখানে অমলিন থাকবে।

২. ক্রিস গেইল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
বাংলাদেশীদের সবচেয়ে প্রিয় বিদেশি ক্রিকেটারদের তালিকায় ক্রিস গেইলের নামটি থাকতেই হবে। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের যেকোনো ক্রিকেট খেলুড়ে দেশেই ক্রিস গেইল একটি জনপ্রিয় নাম। মূলত তার দানবীয় ব্যাটিংয়ের জন্যই তার এতো জনপ্রিয়তা। মাঠে তার বিশাল বিশাল ছক্কা দেখে তাকে রক্তে-মাংসে গড়া মানূষ বলে সায় দিতে যে কারো কার্পণ্য করার কথা। তার নাম হয়ে গিয়েছিল ‘ছক্কা মেশিন’।

sportsmail24নিজেকে এভাবেই ক্রিকেট বিশ্বে চিনিয়ে গেছেন ক্রিস গেইল

সেখান থেকে এখন তিনি ‘ইউনিভার্স বস’। বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে মোট ৩৪টি ম্যাচ খেলেছেন গেইল। তাতে দুই শতক আর সাত অর্ধশতকে রান করেছেন ১২২৭। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) নিয়মিত মুখ এই ক্যারিবীয় দানব। টি টোয়েন্টির যুগে অনেক উদীয়মান তরুণের আদর্শ গেইল।

১. শচীন টেন্ডুলকার (ভারত)
একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশের মানুষ ঠিকমতো ক্রিকেট বুঝতো না কিন্তু তার শচীন টেন্ডুলকারকে ভালোবাসতো। বিশ্ব ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় তারকা বলা হয় তাকে। ক্রিকেটের মহাকাব্যে একমাত্র ক্রিকেটার হিসাবে ‘সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি’ করা ক্রিকেটার তিনি। যেটা তিনি করেছিলেন বাংলাদেশের মাটিতে বাংলাদেশেরই বিপক্ষে। বাংলাদেশীদের কাছে আজও ‘শচীন-সৌরভ’ জুটি চির অমলিন হয়ে আছে।

sportsmail24জীবনের সব চাওয়া-পাওয়ার পুর্ণতা হাতে 'লিটল মাস্টার'

বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে মোট ১৯টি ম্যাচ খেলেছিলেন ভারতের ক্রিকেট সর্বময়। তাতে ছয় শতক আর দুই অর্ধশতকে রান করেছেন ১৩১৬। টাইগারদের বিপক্ষে দুইবার ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়েছিলেন ‘লিটল মাস্টার’। প্রিয় ক্রিকেটারদের তালিকা দিন দিন বদলে যাবে। কিন্তু প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে শচীনই হয়ে থাকবেন সেরাদের সেরা। তিনি আজীবন রয়ে যাবেন ‘নাম্বার ওয়ান’।

স্পোর্টসমেইল২৪/এএইচবি

[আমরা এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও। খেলাধুলার সর্বশেষ সংবাদ পড়তে ইনস্টল করুন আমাদের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অ্যাপস ]



শেয়ার করুন :


আরও পড়ুন

বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট : গল্পটা লাল-সবুজের জয়িতাদের

বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট : গল্পটা লাল-সবুজের জয়িতাদের

আশরাফুল : সুবাস ছড়িয়েও ঝরে পড়া ‘আশার ফুল’

আশরাফুল : সুবাস ছড়িয়েও ঝরে পড়া ‘আশার ফুল’

এবি ডি ভিলিয়ার্স : বাইশগজের ‘দুঃখী রাজপুত্র’

এবি ডি ভিলিয়ার্স : বাইশগজের ‘দুঃখী রাজপুত্র’

শেন বন্ড : অকালে হারানো তাসমান সাগরপাড়ের গতিদানব

শেন বন্ড : অকালে হারানো তাসমান সাগরপাড়ের গতিদানব