পাঁচ বছর পর মাঠে গড়াচ্ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর। সবদেশই বিশ্বকাপ নিয়ে নিজেদের প্রস্তুতি শেষ করেছে। ক্রিকেটাররা প্রস্তুত বিশ্বমঞ্চে নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দেওয়ার জন্য। হয়তো ব্যাট-বলে নিজেদের সেরা পারফর্মেন্সগুলোকে নতুন করে লিখবেন ক্রিকেটাররা। উপহার দিবেন অনেক মনে দাগ কেটে যাওয়ার মতো পারফর্মেন্স। আগের আসরগুলোতেও ক্রিকেটাররা এমন কিছু পারফর্ম করেছেন যা কি-না আরও কয়েক যুগ দর্শকদের মনে দাগ কেটে থাকতে বাধ্য।
বিশ্বকাপের মঞ্চ মানেই নতুন কিছু দুর্দান্ত পারফর্মেন্স। আগের আসরগুলোর কিছু দুরন্ত পারফর্মেন্স নিয়েই আজকে স্পোর্টসমেইল২৪-এ আয়োজন।
যুবরাজ সিং (২০০৭)
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরেই নজর দেখিয়েছিলেন ভারতীয় অলরাউন্ডার যুবরাজ সিং। এ আসরেই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে প্রথম সেঞ্চুরি করেন ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি ক্রিস গেইল। তবে তাকে ছাড়িয়ে ব্যাটিং শোয়ের সকল নজর নিজের দিকে টেনে নিয়েছিলেন যুবরাজ।
যুবরাজের ব্যাটে ভর করে প্রথম আসরের শিরোপা নিজেদের করে নিয়েছিল ভারত। সুপার এইটের লড়াইয়ে স্টুয়ার্ট ব্রডের এক ওভারের ছয় ছক্কা হাকিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের দ্রুততম হাফ-সেঞ্চুরির রেকর্ড নিজের করে নিয়েছিলেন তিনি। তার ব্যাটে ভর করে ওইদিন ইংল্যান্ডকে ১৮ রানে হারিয়েছিল ভারত।
এখানেই শেষ নয়, সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আরও বিধ্বংসী হয়ে উঠেছিলেন যুবরাজ। লি-জনসনদের দর্শক বানিয়ে ৩০ বলে ৭০ রানের ইনিংস খেলেন। তার এ ইনিংসে ভর করে ১৮৮ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করায় ভারত। অজিরা এ রান তাড়া করতে না পারায় প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে ভারত।
উমর গুল (২০০৯)
টি-টোয়েন্টির যুগে ক্রিকেটের পুরোটাই চলে এসেছে ব্যাটারদের দখলে। তবে এরই মধ্যেও প্রায়সময়ই বোলাররা নতুন নতুন ঝলক দেখায়। ২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় আসরে ঝলক দেখিয়েছিলেন পেসার উমর গুল। তার বোলিং তোপে শতরানের আগেই প্যাকেট হয়েছিল নিউজিল্যান্ড।
বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে মুখোমুখি হয়েছিল পাকিস্তান এবং নিউজিল্যান্ড। এ ম্যাচে আগে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই পাকিস্তানি বোলারদের বোলিং তোপে পড়েছিল নিউজিল্যান্ড। শুরুর ভুল কাটিয়ে মাঝের ওভারগুলোতে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ছিল কিউইরা। কিন্তু উমর গুলের বোলিং তোপে কিউইরা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।
এদিন ৩ ওভার বল মাত্র ৬ রান খরচা করেন গুল। পাঁচ কিউই ব্যাটসম্যানকে সাজঘরের ফেরান তিনি। উমর গুলের বোলিং তোপে শেষ পর্যন্ত ৯৯ রানে থামে নিউজিল্যান্ডের ইনিংস। ম্যাচে ৬ উইকেটের জয় তুলে নেয় পাকিস্তান।
মাইক হাসি (২০১০)
প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের মাটিতে অনুষ্ঠিত হয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর। এ আসরে দুর্দান্ত পারফর্মেন্স করে টুর্নামেন্ট সেরার পুরষ্কার নিজের করে নিয়েছিলেন স্বাগতিক দলের কেভিন পিটারসেন। তবে এ আসরে টুর্নামেন্ট সেরার লড়াইয়ে অজি ব্যাটসম্যান মাইক হাসিও ছিলেন।
পুরো টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত পারফর্ম করার পরও সেমি ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬০ রানের ওই ইনিংসের জন্যই তাকে মনে রাখা যায়। বড় রানের কোনো ইনিংস না হলেও হাসির ওই কার্যকর ইনিংসই প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়াকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে তোলে।
লর্ডসে হওয়া এ ম্যাচে আগে ব্যাট করে ১৯১ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করায় পাকিস্তান। তবে এ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকলেও শেষ পর্যন্ত ম্যাচ নিজের করে নেয় অস্ট্রেলিয়া। ২৪ বলে ৬০ রানের বিধ্বংসী এ ইনিংসই অস্ট্রেলিয়াকে ফাইনালে তোলে।
অজান্তা মেন্ডিস (২০১২)
আগের আসরগুলোতে ব্যাটসম্যানদের প্রভাব থাকলেও শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত হওয়া এ আসরে আধিপত্য বিস্তার করেছিল বোলাররা। বোলাররা প্রভাব বিস্তার করবে তার ধারণা পাওয়া গিয়েছিলে প্রথম ম্যাচেই। শ্রীলঙ্কা-জিম্বাবুয়ের মধ্যকার উদ্বোধনী ম্যাচেই প্রভাব বিস্তার করেছিলেন রহস্য স্পিনার অজান্তা মেন্ডিস।
ম্যাচে আগে ব্যাট করে ১৮২ রানের পাহাড়সহ স্কোর দাঁড়া করায় শ্রীলঙ্কা। পাহাড়সম এ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মাত্র ১০০ রানে গুটিয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। এতে যতটা না জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা তার থেকে বড় অবদান রেখেছিল শ্রীলঙ্কা।
এ ম্যাচের নির্ধারিত চার ওভার বোলিং করে মাত্র ৮ রান খরচায় ৬ উইকেট শিকার করেন মেন্ডিস। মেন্ডিসের করা চার ওভারের মধ্যে দুই ওভার ছিল মেইডেন। পুরো বিশ্বকাপে বোলারদের দাপট চললেও এরকম একপেশে লড়াই কেউ দেখাতে পারেনি।
বিরাট কোহলি (২০১৪)
প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের মাটিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এ বিশ্বকাপে ছিল নজর কাড়া সব পারফর্মেন্স। পুরো বিশ্বকাপ জুড়ে দারুণ পারফর্মেন্স করে স্বমহিমায় উজ্জ্বল ছিলেন ভারতীয় ব্যাটার বিরাট কোহলি। তবে সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে করা পারফর্মেন্স এখনও দর্শকের মনে দাগ কেটে আছে।
শিরোপা জয়ের আশা নিয়ে বাংলাদেশে আসা ভারতীয় দলের ফাইনালে ওঠার পথে বাধা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। সে বাধা টপকে ফাইনালে ওঠেছিল ভারত। আর এ ম্যাচে ব্যাট হাতে চমক হয়েছিলেন বিরাট কোহলি।
এ ম্যাচে ১৭২ রানে থামে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস। ১৭৩ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে বিরাট কোহলির ৪৪ বলে ৭২ রানের ইনিংসে ভর করে ম্যাচ জিতে নেয় ভারত। তবে ফাইনালে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে শিরোপা হারায় ভারত।
কার্লোস ব্রাথওয়েট (২০১৬)
সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কার্লোস ব্রাথওয়েটের এ ইনিংস দর্শকদের মনে তাজা স্মৃতি হিসেবে থাকবে। ভারতের অনুষ্ঠিত হওয়া এ বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুই দলের সামনেই লক্ষ্য ছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় শিরোপা ঘরের তোলা।
পুরো ম্যাচে ইংল্যান্ড প্রভাব বিস্তার করলেও ইনিংসের শেষ ওভারে ম্যাচ নিজেদের করে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মূলত ব্রাথওয়েটের কল্যাণেই শিরোপা পুনরুদ্ধার করে ক্যারিবিয়ানরা। ১০ বলে ৩৪ রানের ইনিংস খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে শিরোপা এনে দেন তিনি।
ইনিংসের শেষ ওভারের জয়ের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের দরকার ছিল ১৯ রান। বেন স্টোকসের করা শেষ ওভারে চার বলে চার ছক্কা মেরে ম্যাচ নিজেদের করে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
স্পোর্টসমেইল২৪/পিপিআর
[sportsmail24.com এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও। খেলাধুলার ভিডিও-ছবি এবং সর্বশেষ সংবাদ পড়তে ব্রাউজ করুন যেকোন ঠিকানায়। এছাড়া অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলে ইনস্ট্রল করে নিতে আমাদের অ্যাপস ]