টোকিও অলিম্পিকে মেয়েদের ভারোত্তলনে ৫৯ কেজি শ্রেণিতে সোনার পদক জেতেন সিং-চুন উও। ২৩৬ কেজি ওজন তুলে অলিম্পিক রেকর্ড গড়েন তাইওয়ানের এ প্রতিযোগী। পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে পদক নেওয়ার সময় ছিল না জাতীয় পতাকা, বাজলো না জাতীয় সংগীত। কেন এ ঘটনা? এটা কি অলিম্পিক আয়োজকদের ভুল নাকি আছে কোনো বিশেষ কারণ।
পুরো অলিম্পিকজুড়ে তাইওয়ানের অনেক অ্যাথলেট থাকলেও, আনুষ্ঠানিকভাবে তাইওয়ান নামক কোনো দেশের নাম খুঁজে পাওয়া যায় না। তাইওয়ানের পরিবর্তে ডাকা হচ্ছে চাইনিজ তাইপে বলে। কারণটি বেশ পুরোনো তবে রাজনৈতিক। চাইনিজ তাইপে নামে ডাকার বিষয়টি নিয়ে বেশ হতাশ তাইওয়ানের সাধারণ জনগণ।
অলিম্পিকে তাইওয়ান নামটি দেখতে না পাওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক। স্বাধীন এবং সার্বোভৌম একটি দেশ হওয়ার পরও তাইওয়ানকে স্বাধীন দেশ হিসেবে বিবেচনা করা নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বিতর্ক। এর পিছনের কারণ বৃহৎ শক্তির দেশ চীন।
১৯৪৯ সালে চীনের গৃহযুদ্ধের পর দেশটির জাতীয়বাদী নেতারা তাইওয়ানে পাড়ি জমান। সেখানে পাড়ি জমিয়ে স্বাধীন তাইওয়ান রাষ্ট্রের সৃষ্টি করেন। এখান থেকেই মূলত চাইনিজ তাইপে নামের ইতিহাসের শুরু।
অপরদিকে চীনে মাও সেতুংয়ের নেতৃত্বে তৈরি হয় সমাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা। মাও সেতুংয়ের সময় থেকেই চীনের নেতারা সবসময়ই তাইওয়ানকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে আসছেন। এমনকি তাইওয়ানের সাথে সম্পর্ক থাকা দেশের সাথেও কোনো ধরনের সম্পর্ক রাখতেও সব সময় অপারগ চীন। আর মাঝে মধ্যেই তো তাইওয়ানকে দখলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েই বসে তারা।
রাজনৈতিক কারনেই তাইওয়ানকে সব সময়ই বিশ্ব মঞ্চ থেকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টায় থাকে চীন। আর তাইওয়ান নামটি ব্যবহারেও তাদের রয়েছে বেশ আপত্তি। কারণ চীনের মতে তাইওয়ান চীনের একটি দ্বীপ অঞ্চল।
১৯৮১ সালে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) পক্ষ থেকে তাইওয়ানের নাম ঠিক করে দেওয়া হয় ‘চাইনিজ তাইপে’। স্বাধীন দেশ না হওয়া সত্ত্বেও যাতে বিশ্ব মঞ্চে তাদের অংশ গ্রহণে কোনো বাধা না থাকে তাই এ নাম চূড়ান্ত করে আইওসি।
যদিও নিজস্ব সরকার ব্যবস্থা, মূদ্রা, সেনাবাহিনী থাকার পরও তাইওয়ানকে স্বাধীন দেশের মর্যাদা দেওয়া হয় না। তাইওয়ানের জনগণ নিজেদেরকে স্বাধীন বলেই দাবি করে।
এ কারণেই আন্তর্জাতিক ক্রীড়ামঞ্চে ব্যবহার হয় না তাইওয়ানের পতাকা। তার পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় অলিম্পিকের পতাকা। পতাকা উত্তোলনে সময় তাইওয়ানের জাতীয় সঙ্গীত নয়, বাজে পতাকা উত্তোলনে চিরায়ত গানের সুর।
ইসরায়েলের সাথে স্বাধীন ভূখন্ড নিয়ে ঝামেলা থাকলে ফিলিস্তিনের অ্যাথলেটরা নিজেদের দেশের নামেই অলিম্পিকে অংশ নেয়। এছাড়াও একই ভাবে চীনের অংশ হওয়া সত্ত্বেও নিজের নামে অলিম্পিকে অংশ নেয় হংকংও।
১৯৫২ সালে হেলসিংকি অলিম্পিকে চীন ও তাইওয়ানকে আমন্ত্রণ করার পর দুই দেশই ‘চীন’ নামে অংশ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। তবে শেষ পর্যন্ত তাইওয়ানের পরাজয় ঘটে। চার বছর পরের ১৯৫৬ সালের অলিম্পিকে ‘ফরমোসা চীন’ নামে অংশ নেয়। ‘ফরমোসা’ শব্দের অর্থ সুন্দর। পর্তুগিজ নাবিকরা তাইওয়ানকে এ নামেই ডাকতো।
তাইওয়ানের এ নামের বিরোধিতা করে ১৯৫৬ অলিম্পিক বর্জন করে চীন। পাশাপাশি ত্যাগ করে আইওসির সদস্য পদ। তাইওয়ান কর্তৃপক্ষের সব সময় চীন নামেই অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করার তীব্র ইচ্ছা পোষণ করে। এর মধ্যেও ১৯৬০ অলিম্পিকে তাইওয়ান নামে অংশগ্রহণ করে তারা। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৪ এবং ১৯৬৮ অলিম্পিকে তাইওয়ান নামেই অলিম্পিক মঞ্চে দেখা যায় তাদেরকে।
তবে ৭০- এর দশকে বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চে চীনের দাপট বাড়লে আর তাইওয়ান নামে অলিম্পিকে আসতে পারেননি তাইওয়ানজিরা। ১৯৭২ অলিম্পিকে গনতান্ত্রিক চীন (আরওসি) নামে অংশগ্রহণ করে তারা। কিছুটা হলেও স্বপ্ন পূরণের পথে ছিল তাইওয়ান।
তবে বিশ্ব মঞ্চে চীনের প্রভাব বেড়ে যাওয়ায় ১৯৭৬ অলিম্পিকে তাইওয়ান নামে অংশগ্রহণের নির্দেশ দেয় আইওসি। এ কারণে ১৯৭৬ মন্ট্রিল অলিম্পিক বর্জন করে তাইওয়ান। মন্ট্রিল অলিম্পিক বর্জন করায় তিন বছরের নিষিদ্ধ হয় তাইওয়ান। শেষ পর্যন্ত ১৯৮১ সালে চাইনিজ তাইপে নামে অলিম্পিকে অংশ নিতে সম্মত হয় তাইওয়ান। এরপর থেকেই খেলাধুলার বিশ্বমঞ্চে তাইওয়ানজিদের অংশগ্রহণ চাইনিজ তাইপে নামে, আর পতাকা হিসেবে ব্যবহৃত হয় অলিম্পিক পতাকা।
স্পোর্টসমেইল২৪/পিপিআর
[sportsmail24.com এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও। খেলাধুলার ভিডিও-ছবি এবং সর্বশেষ সংবাদ পড়তে ব্রাউজ করুন যেকোন ঠিকানায়। এছাড়া অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলে ইনস্ট্রল করে নিতে আমাদের অ্যাপস ]