এক বা দেড় যুগ নয়, ২০ বছর কেটে যাচ্ছে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট খেলার বয়স। এরপরও মনে হয়, বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটের রহস্যময়তার সাথে পরিচয়পর্বের যেন এখনও শেষ হয়নি; এ যেন শেষ হওয়ারও নয়।
বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের ভালো-মন্দের গল্পটা যেন অক্টোপাসের ‘চরিত্রের’ প্রতিচ্ছবি। অক্টোপাসের রঙ বদলানোর মতো ক্ষণে ক্ষণে বদলে যায় বাংলাদেশের টেস্টের গল্প। এই ভালো তো, এই খারাপ!
টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশকে নিয়ে গল্পের প্রতিটি পাতায় পরাজয়ের গল্প। বাংলাদেশের টেস্ট খেলা নিয়ে সমালোনায় মেতে ওঠে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমগুলোও। প্রশ্ন তুলে বাংলাদেশের টেস্ট খেলার যোগ্যতা বা অধিকার নিয়েও। তবুও বাংলাদেশের টেস্ট খেলার গল্প যেন পাল্টায়নি!
টেস্ট ক্রিকেট স্বভাবগতভাবেই একটু বেশিই নিষ্ঠুর। ছোট ফরম্যাটের ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি খেলায় অনেক সময় ফাঁকি দিয়ে পার পাওয়া গেলেও টেস্ট ক্রিকেটে সে সবের একদমই সুযোগ নেই। টেস্ট ক্রিকেট মানে আক্ষরিক অর্থেই ‘টেস্ট’। শুধু ক্রিকেটীয় দক্ষতারই নয়, শারীরিক-মানসিক শক্তিরও এখানে খেলা হয়। আর সেখানেই মূলত বাংলাদেশ অনেকটা পিছিয়ে।
টেস্ট ক্রিকেটে উন্নতির জন্য আবার কেবল ক্রিকেটীয় দক্ষতার, শারীরিক ও মানসিক শক্তি নয়, সেটির সাথে একটা দেশের ক্রিকেটীয় সংস্কৃতিটাও গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের মূল সমস্যাটা ঠিক এখানেই। এই দেশের ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি বান্ধব ক্রিকেট সংস্কৃতি তরুণ ক্রিকেটারদের মনে টেস্ট ক্রিকেটে ভালো করার স্বপ্ন বুনে দেয় না।
আমরা এখনও টেস্ট ক্রিকেটের প্রেমেই পড়তে পারিনি। আমাদের দেশের তরুণরা টেস্ট ক্রিকেটার হতে না চাওয়ার পিছনে অবশ্য আরও একটা কারণ আছে। আমরা বছরে হাতেগোনা কয়েকটা টেস্ট খেলি? তাতে করে শুধুমাত্র টেস্ট খেলে আমাদের উপার্জনের পথটা ছোট হয়ে যায়। ৪ ওভার বল করে যদি লাখ লাখ টাকা আয় করতে পারেন তাহলে কেনইবা পাঁচদিনের টেস্ট খেলবেন! এমন মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসা আর ক্রিকেটীয় সংস্কৃতির পরিবর্তনটাও জরুরি।
বাংলাদেশের ২০ বছরের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে চোখে পড়ার মতো সাফল্য কেবল ঘরের মাঠে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকে হারানো। গত ২০ বছরে ১১৯ টেস্ট খেলা বাংলাদেশের জয়ের হারটা খুবই নগণ্য। ১১৯ ম্যাচের মাঝে জয় কেবল ১৪টি জয় আর হার ৮৯টিতে। নেই কোন টেস্ট সিরিজ জয়ের রেকর্ড।
ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয় যদি বাংলাদেশের কপালে জয়টীকা হয়, সেটির পাশেই কলঙ্কের দাগ এই গত বছরের সেপ্টেম্বরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট হেরে বসা। পরাজয়েরও তো ধরন থাকে, সেটি যেন অনেক কিছুকেই ছাপিয়ে গেছে।
বৃষ্টির কল্যাণে ড্র এক রকম নিশ্চিত হয়ে যাওয়া টেস্টে বাংলাদেশ যেভাবে হেরে গেছে, তা একই সাথে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে অনেক কিছু নিয়েও। দক্ষতা, সামর্থ্য, মানসিকতার সাথে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের টেস্ট খেলার আগ্রহও চলে গেছে আতশ কাচের নিচে।
চট্টগ্রামে সেই টেস্টে লজ্জাজনক পরাজয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে পরাজয়ের সূত্র ধরে চলে আসা বাংলাদেশের ক্রিকেটের নানা রকম সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন করায় অধিনায়ক সাকিব আল হাসান মুচকি হেসে বলেছিলেন, ‘হারলেই শুধু এসব নিয়ে কথা হয়।’
এ কথা বলে সাকিব সমস্যাগুলোকে অস্বীকার করেননি। বোঝাতে চেয়েছেন, হারার পর সমস্যাগুলো আলোতে এলেও ক’দিন পরই তা আবার হারিয়ে যায় অন্ধকারে। কথাটা মিথ্যা নয়। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সমস্যার কারণ খুঁজতে গেলে এমন অনেক কিছু আসবে, যা গত ২০ বছর ধরেই আলোচিত হচ্ছে। কিন্তু ওই আলোচনা পর্যন্তই, সমাধান আর হয়নি।
সেখানে সবার আগে আসবে ঘরোয়া ক্রিকেটের নাম। আগের তুলনায় কিছুটা হলেও উন্নতি তো হয়েছেই বটে, তবে এখনেও সেটি টেস্টের জন্য ক্রিকেটারদের প্রস্তুত করতে পারেনি, প্রতিদ্বন্দ্বীতার এমন পর্যায়ে পৌঁছাতেও ব্যর্থ।
উইকেট নিয়ে আলোচনাও টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সমান বয়সী। বেশির ভাগ এমন উইকেটে খেলা হয়, যেখানে পেস বোলারদের জন্য কিছুই থাকে না। শুরুতে কয়েক ওভার বোলিং করার পর পেসাররা তাই পরিণত হন শুধুই ফিল্ডারে। সেই পেসার যখন টেস্ট ক্রিকেটে সুযোগ পাবেন, দিনে ১৫/১৬ ওভার, কখনো এর চেয়েও বেশি বোলিং কীভাবে করবেন? তার তো এই অভ্যাসই নেই।
বাংলাদেশ আবারও বছরান্তর টেস্ট জিতবে সবাই আনন্দে ভাসবে। আবারও প্রশংসার জোয়ারে ভাসাবে বাংলাদেশকে। সেই জোয়ারে ভেসে ভুলে যাবে উন্নয়নের ছকমালা। এভাবেই চলছে, এভাবেই হয়তো চলবে...
[sportsmail24.com এর ওয়েবসাইট এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও ব্রাউজ করে পড়তে পারবেন। এছাড়া অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনে স্পোর্টসমেইল২৪.কমের অ্যাপস থেকেও খেলাধুলার সকল নিউজ পড়তে পারবেন। ইনস্ট্রল করুন স্পোর্টসমেইল২৪.কমের অ্যাপস ]