টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড গড়লো অস্ট্রেলিয়া। ট্রান্স-তাসমান ত্রিদেশীয় টি-টুয়েন্টি সিরিজের পঞ্চম ম্যাচে আজ নিউজিল্যান্ডের ছুঁড়ে দেয়া ২৪৪ রানের টার্গেট স্পর্শ করে ৫ উইকেটে ম্যাচ জিতে নয়া বিশ্ব রেকর্ডের জন্ম দেয় অসিরা। ২০১৫ সালে জোহানেসবার্গে দক্ষিণ আফ্রিকার দেয়া ২৩২ রানের টাগের্টে স্পর্শ করে ম্যাচ জয়ের বিশ্ব রেকর্ড এতোদিন দখলে রেখেছিলো দু’বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
নিজেদের মাঠে প্রথম তিন ম্যাচ জিতে আগেই ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল নিশ্চিত করে রেখেছিলো অস্ট্রেলিয়া। তাই লিগ পর্বে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অসিদের ম্যাচটি ছিলো গুরুত্বহীন। তবে ফাইনাল নিশ্চিতের জন্য নিউজিল্যান্ডের কাছে এ ম্যাচটি গুরুত্বপূর্ণ বহন করছিলো। তাই এমন ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্বান্ত নেয় কিউইরা। ব্যাট হাতে ইনিংসের শুরু থেকেই অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের বিপক্ষে চড়াও ছিলেন নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনার মার্টিন গাপটিল ও কলিন মুনরো।
প্রথম ১০ ওভারেই ১১৪ রান তুলে নেয় নিউজিল্যান্ড। দু’ওপেনারই স্বাদ নেন হাফ-সেঞ্চুরির। অবশেষে ১১তম ওভারের চতুর্থ বলে ফিরে যান মুনরো। ওই ওভারে অস্ট্রেলিয়ার পেসার এন্ড্রু টাই’র প্রথম তিন বলেই ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়েছিলেন মুনরো। ৬টি করে ছক্কা-চারে মাত্র ৩৩ বলে ৭৬ রান করেন মুনরো।
মুনরো টি-২০ ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ফিরলেও ছোট ফরম্যাটে ৪৯ বলে দ্বিতীয় সেঞ্চুরির স্বাদ নেন গাপটিল। ২০১২ সালে ইস্ট লন্ডনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অপরাজিত ১০১ রানের ইনিংসটি ছিলো গাপটিলের প্রথম সেঞ্চুরি। দ্বিতীয়বারের মত তিন অংকে পা দিয়ে ১০৫ রানেই থেমে যান তিনি। ৫৪ বলের ইনিংসে ৬টি চার ও ৯টি ছক্কা মারেন গাপটিল। এই ইনিংস খেলার পথে ৫৮ রানে পৌছে টি-২০ ইতিহাসের সর্বোচ্চ রানের মালিকও হয়েছেন তিনি। সাবেক সতীর্থ ও অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালামকে টপকে আন্তর্জাতিক টি-২০ ক্রিকেটে সবেচেয়ে বেশি রানের মালিক এখন গাপটিল।
গাপটিল-মুনরোর পর রস টেইলরের অপরাজিত ১৭, মার্ক চাপম্যানের ১৬ ও উইকেটরক্ষক টিম সেইফার্টের ১২ রানের কল্যাণে ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ২৪৩ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করায় নিউজিল্যান্ড। ১ মাস ১৩ দিনের ব্যবধানে নিজেদের টি-২০ ক্রিকেটে আবারো সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ পেল নিউজিল্যান্ড। গেল মাসের ৩ জানুয়ারি মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫ উইকেটে ২৪৩ রান-ই করেছিলো কিউইরা। অবশ্য এই স্কোর টি-২০ ক্রিকেটে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহে নবমস্থানে রয়েছে। নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন টাই ও কেন রিচার্ডসন।
জয়ের জন্য ২৪৪ রানের বিশাল টার্গেটের পেছনে ছুটতে গিয়ে রুদ্ধমূর্তি ধারণ করেন অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার ও ডি’আর্চি শর্ট। মাত্র ৫১ বলে ১২১ রানের জুটি গড়েন তারা। ম্যাচ জয়ের পথে হাটতে থাকে অসিরা। ২৪ বলে ৫৯ রান করা ওয়ার্নারকে ফিরিয়ে নিউজিল্যান্ডকে প্রথম সাফল্য এনে দেন নিউজিল্যান্ডের লেগ-স্পিনার ইশ সোধি। নিজের ঝড়ো ইনিংসে ৪টি চার ও ৫টি ছক্কা মারেন ওয়ার্নার।
অধিনায়ক ফিরে যাবার পরও দলের রান তোলায় ভাটা পড়েনি। কারন একপ্রান্ত আগলে রানের চাকা ঘুড়াচ্ছিলেন শর্ট। তবে তিন নম্বরে ক্রিজে গিয়ে শর্টকে বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি ক্রিস লিন। ১৩ বলে ১৮ রান করেন তিনি। দ্বিতীয় উইকেটে বড় জুটি গড়তে না পারলেও, তৃতীয় উইকেটে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে নিয়ে ২৫ বলে ৫৬ রানের জুটি গড়েন শর্ট।
তবে দলীয় ১৯৯ রানে ম্যাক্সওয়েল ও ২১৭ রানে শর্ট ফিরে যাবার পর ম্যাচ নিয়ে চিন্তায় পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু অসিদের চিন্তা দূর করে দলকে জয়ের স্বাদ দেন অ্যারন ফিঞ্চ। মাত্র ১৪ বল মোকাবেলা করে ৩টি করে চার-ছক্কায় অপরাজিত ৩৬ রান করেন ফিঞ্চ। এতে ৭ বল বাকী রেখে রান তাড়া করে ম্যাচ জয়ের বিশ্বরেকর্ড গড়তে পারে অস্ট্রেলিয়া।
টি-২০ ক্যারিয়ারের চতুর্থ ম্যাচে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি পাওয়া ইনিংসে ৭৬ রান করেন শর্ট। ৮টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৪৪ বলে নিজের ঝকঝকে ইনিংসটি সাজান তিনি। বিশ্বরেকর্ড গড়া ম্যাচের সেরাও হয়েছেন শর্ট। ৩টি চার ২টি ছক্কায় ১৪ বলে ৩১ রান করেন ম্যাক্সওয়েল।
হ্যামিল্টনে আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লড়বে নিউজিল্যান্ড। ঐ ম্যাচে জিতলেই ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গী হবে কিউইরা। হারলেও রান রেটে এগিয়ে থাকলে ফাইনাল খেলার সুযোগ থাকবে নিউজিল্যান্ডের। অপরদিকে ফাইনালে খেলতে হলে শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে হারানোর পাশাপাশি রান রেটেও এগিয়ে থাকতে হবে ইংল্যান্ডকে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
নিউজিল্যান্ড : ২৪৩/৬, ২০ ওভার (গাপটিল ১০৫, মুনরো ৭৬, রিচাডর্সন ২/৪০)।
অস্ট্রেলিয়া : ২৪৫/৫, ১৮.৫ ওভার (শর্ট ৭৬, ওয়ার্নাও ৫৯, সোধি ১/৩৫)।
ফল : অস্ট্রেলিয়া ৫ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : ডি’আর্চি শর্ট (অস্ট্রেলিয়া)।