জয় পেতে যেন ভুলেই গেছে বাংলাদেশ। টেস্ট সিরিজে প্রথম ম্যাচ ড্র করলেও দ্বিতীয় টেস্টে বড় ব্যবধানে হেরে যায় টাইগাররা। এবার টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান করেও শ্রীরঙ্কার বিপক্ষে জিততে পারলো না মাহমুদুল্লাহরা।
বাংলাদেশের ছুড়ে দেয়া ১৯৪ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৪ উইকেট হারিয়ে ৬ উইকেটের জয় তুলে নেয় সফররত শ্রীলঙ্কা। এ জয়ে দুই ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল হাথুতুর দল শ্রীলঙ্কা।
দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে মিরপুর শেরে-বাংলা স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যটিং করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট উইকেট হারিয়ে ১৯৩ রান করে টাইগাররা। যা বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে সর্বোচ্চ দলীয় রান।
অভিষেক ম্যাচে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি জাকির। ১টি চারে ৯ বলে ১০ রান করে ফিরেন তিনি। এ সময় দলের রান ৪৯ রান। তবে জাকিরের রান না পাওয়াটা খুব বেশি ক্ষতি করেনি বাংলাদেশকে। কারণ অন্যপ্রান্তে ব্যাট হাতে মারমুখী ছিলেন সৌম্য সরকার।
শ্রীলঙ্কার বোলারদের বিপক্ষে দক্ষতার সাথেই রান তুলেছেন তিনি। জাকির যখন ফিরেন তখন সৌম্যর রান ১৫ বলে ৩২ রান। তার ব্যাটিং নৈপুন্যেই পাওয়া প্লে’র ৬ ওভারে ৭১ রান পায় বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় উইকেটে সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে দলকে বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেন সৌম্য। সেই সাথে নিজের ক্যারিয়ারের ২৭তম ইনিংসে প্রথমবারের মত অর্ধশতকের দেখা পান সৌম্য। অবশ্য এরপর ৫১ রানে থেমে যান তিনি। তার ৩২ বলের ইনিংসে ৬টি চার ও ২টি ছক্কা ছিল। মুশফিক সৌম্য জুটি ৩৮ বলে ৫১ রান যোগ করেন।
সৌম্যকে বিদায়ের পরের ডেলিভারিতেও উইকেট তুলে নেন শ্রীলঙ্কার জীবন মেন্ডিস। অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা আফিফ ফিরেন শূন্য হাতে। দলীয় ১০০ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু সেটি আমলে নেননি বাংলাদেশের দুই নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম ও অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ।
চতুর্থ উইকেটে শ্রীলংকার বোলারদের বিপক্ষে আক্রমণাত্মক মেজাজ দেখান মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ। তাই দলীয় স্কোর দেড়শ’ পেরিয়ে ২শ’ পথেই এগিয়ে যাচ্ছিল। তবে সেই পথে বাধাঁর সম্মুখীন হয় বাংলাদেশ। ২টি করে চার-ছক্কায় ৩১ বলে ৪৩ রান করে মাহমুদুল্লাহ’র বিদায় বাংলাদেশকে সমস্যায় ফেলে। দায়িত্ব পান মুশফিকুর ও সাব্বির।
এক প্রান্ত আগলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেয়া মুশফিককে শেষ পর্যন্ত সঙ্গ দিতে পারেননি সাব্বির। মাত্র ১ রান করে ফিরেন তিনি। ফলে ২শ’র স্বাদ নেয়ার কাজটি কঠিনই হয়ে যায় বাংলাদেশের জন্য। মুশিফকুরের অনবদ্য ৬৬ রানের কল্যাণে নিজেদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ।
২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৯৩ রান। এ ম্যাচের আগে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ ছিল ৫ উইকেটে ১৯০ রান। ২০১২ সালে বেলফাস্টে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ঐ স্কোর গড়েছিল বাংলাদেশ।
জয়ের জন্য ১৯৪ রানের বড় টার্গেট স্পর্শ করতে শুরুটা চমৎকারই ছিল শ্রীলঙ্কার। উদ্বোধনী জুটিতে ২৯ বলে ৫৩ রান যোগ করেন শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনার কুশল মেন্ডিস ও দানুস্কা গুনাথিলাকা। ৩০ রানে থাকা গুনাথিলাকাকে শিকার করে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা নাজমুল।
এরপর ৩৭ রানের জুটিতে দলকে ম্যাচে রেখেছিলেন মেন্ডিস ও উপুল থারাঙ্গা। এরমধ্যে নবম ম্যাচে ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন মেন্ডিস। ৮টি চার ও ২টি ছক্কায় ২৭ বলে ৫৩ রান করে বাংলাদেশের আফিফের শিকার হন মেন্ডিস। তার বিদায়ের ৩ বল পর থারাঙ্গাকে নিজের দ্বিতীয় শিকার বানিয়ে দারুনভাবে বাংলাদেশকে খেলায় ফেরান নাজমুল। ৪ রান করে ফিরেন থারাঙ্গা।
তবে চতুর্থ উইকেটে নিরোশান ডিকবেলার সাথে ৩৭ ও থিসারা পেরেরার সাথে মাত্র ৩০ বলে অবিচ্ছিন্ন ৬৫ রান যোগ করে শ্রীলঙ্কার দুর্দান্ত এক জয়ের স্বাদ দেন দাসুন শানাকা। ৩টি করে চার ও ছক্কায় ২৪ বলে অপরাজিত ৪২ রান করেন শানাকা। ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় ১৮ বলে ৩৯ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন পেরেরা। বাংলাদেশের পক্ষে নাজমুল ২টি এবং রুবেল-আফিফ ১টি করে উইকেট নেন।
আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি সিলেটে অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ।