টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজেও স্বাগতিক বাংলাদেশের কাছে হোয়াইটওয়াশ হলো সফররত জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দল। সিরিজের শেষ ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে ২৫ বল হাতে রেখে ৯ উইকেটের জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ।
চলতি বাংলাদেশ সফরে জয়হীনই থাকলো সফরকারী জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দল। টেস্ট-ওয়ানডের মতো টি-টোয়েন্টি সিরিজেও বাংলাদেশের কাছে বিধ্বস্ত হলো জিম্বাবুয়ে।
মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বুধবার (১১ মার্চ) টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদইল্লাহ রিয়াদ। ফলে ব্যাট হাতে মাঠে নামে জিম্বাবুয়ে।
এদিকে প্রথম ম্যাচের দল থেকে তিনটি পরিবর্তন এনে সেরা একাদশ সাজায় বাংলাদেশ। বিশ্রাম দেওয়া হয় তামিম ইকবাল, আমিনুল ইসলাম বিপ্লব ও শফিউল ইসলামকে। তাদের পরিবর্তে দলে সুযোগ পান মোহাম্মদ নাঈম, হাসান মাহমুদ ও আল-আমিন হোসেন। এর মধ্যে প্রথমবারের মত আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামনে পেসার হাসান।
ব্যাট হাতে প্রথম দুই ওভারে দু’টি চার মেরেছিলেন জিম্বাবুয়ের ওপেনার তিনাসি কামুনহুকামবে। তবে তৃতীয় ওভারে থামতে হয় তাকে। পেসার আল-আমিনের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ১০ রান করা কামুনহুকামবে। এরপর বড় জুটি গড়ার চেষ্টা করেন আরেক ওপেনার ব্রেন্ডন টেইলর ও ক্রেইগ আরভিন।
অভিষেক ম্যাচে খেলতে নামা হাসানের ষষ্ঠ বলে ৩ রানে জীবন পান টেইলর। জীবন পেয়ে আরভিনকে নিয়ে বড় জুটির চেষ্টা করেন পুরো সিরিজে সুপার ফ্লপ টেইলর। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ছয় ইনিংসে তার সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান ছিল ১৭।তবে আজ পাওয়ার প্লের পর রান তোলার গতি বাড়ান টেইলর-আরভিন। ফলে ১০ ওভার শেষে জিম্বাবুয়ের রান গিয়ে দাঁড়ায় ৬২তে। দশম ওভারের শেষ বলে জুটিতে হাফ-সেঞ্চুরিও পূর্ণ করেন টেইলর-আরভিন।
১২তম ওভারের প্রথম বলে টেইলর-আরভিনের জুটি ভাঙেন আফিফ হোসেন। প্রথমবারের মত আক্রমণে এসেই উইকেট শিকার করেন। ৩টি চারে ৩৩ বলে ২৯ রান করা আরভিনকে শিকার করেন আফিফ। দ্বিতীয় উইকেটে ৫২ বলে ৫৭ রানের জুটি গড়েন তারা।
আরভিনের পর উইকেটে গিয়ে বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হন অধিনায়ক শন উইলিয়ামস। স্পিনার মেহেদি হাসানের প্রথম শিকার হয়ে ব্যক্তিগত ৩ রানে আউট হন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক। ১৪ দশমিক ২ ওভারে উইলিয়ামস ফিরলে ব্যাট হাতে নামেন সিকান্দার রাজা। ওভারের চতুর্থ বলে জীবন পান তিনি। মিড-অনে রাজার সহজ ক্যাচ ছাড়েন সৌম্য।
জীবন পেয়েও নিজের ইনিংসটি বড় করতে পারেননি রাজা। ২টি চারে ব্যক্তিগত ১২ রান করে মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের বলে আউট হন তিনি। দলীয় ৯৬ রানে আউট হন রাজা। এরপর এক প্রান্ত আগলে রানের চাকা ঘুড়িয়েছেন টেইলর।
দলকে সম্মানজনক স্কোরে পৌঁছে দিতে সর্বাত্মক চেষ্টা করেন টেইলর। ৪২তম বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ হাফ-সেঞ্চুরি তুলেন তিনি। রাজার পর পরের দিকের তিন ব্যাটসম্যান দ্রুত ফিরলেও দলকে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১১৯ রানের মামুলি সংগ্রহ এনে দেন টেইলর। ৪৮ বলে ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় অপরাজিত ৫৯ রান করেন টেইলর।
বাংলাদেশের মোস্তাফিজ-আল আমিন ২টি করে এবং সাইফুদ্দিন-মেহেদি-আফিফ ১টি করে উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ১২০ রানের সহজ টার্গেটে বাংলাদেশের ইনিংস শুরু করেন দুই ওপেনার লিটন দাস ও মোহাম্মদ নাঈম। প্রথম তিন ওভার দেখেশুনেই খেলেন তারা। তাই কোন উইকেট না হারিয়ে ১৯ রান পায় বাংলাদেশ। পাওয়া প্লের শেষ ৩ ওভারে ২৫ রান তুলে তারা। তাই ৬ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় বিনা উইকেটে ৪৪ রান।
রানের গতি ধরে রাখেন লিটন ও নাঈম। ফলে ১০ ওভার শেষে বিনা উইকেটে ৭৩ রান পায় বাংলাদেশ। তবে ১১তম ওভারে থেমে যান লিটন-নাঈমের একত্রে পথচলা। ওয়ানডে মেজাজে খেলা নাঈম ৩৪ বলে ৩৪ রান করে আউট হন। ৫টি চার হাকানো ইনিংসের পথে জিম্বাবুয়ের পেসার ক্রিস এমপফুর শিকার হন তিনি। ৬৪ বলে ৭৭ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন লিটন-নাঈম।
নাঈমের বিদায়ের পর মারমুখী হয়ে উঠেন ইনফর্ম লিটন। ৩৫তম বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। লিটনের হাফ-সেঞ্চুরির পর ব্যাট হাতে নিজের ব্যাটিং শৈলি দেখান আগের ম্যাচের হিরো সৌম্য সরকার। ২টি ছক্কাও মারেন তিনি। ফলে দ্বিতীয় উইকেটে লিটন-সৌম্যর ৩১ বলে অবিচ্ছিন্ন ৪৩ রানের জুটিতে ২৫ বাকি রেখেই জয়ের স্বাদ নেয় বাংলাদেশ।
ম্যাচ ও সিরিজ সেরা নির্বাচিত হওয়া লিটন ৪৫ বলে ৮টি চারে ৬০ রানে অপরাজিত থাকেন। পাশাপাশি সৌম্য ১৬ বলে ২টি ছক্কায় ২০ রানে অপরাজিত থেকে জিম্বাবুয়েকে পুরো সফরেই জয়হীন থাকতে বাধ্য করেন।