স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের কাছে ওয়ানডে সিরিজ হারলো সফরকারী ভারতীয় ক্রিকেট দল। পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ নিশ্চিত করলো কিউইরা।
শনিবার সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ভারতকে ২২ রানে হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড। প্রথম ওয়ানডেতে ৪ উইকেটে ম্যাচ জিতেছিল কিউইরা। ফলে এক ম্যাচ হাতে রেখেই তিন ম্যাচের সিরিজ জয় নিশ্চিত করে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল নিউজিল্যান্ড। পাশাপাশি ছয় বছর পর ভারতের বিপক্ষে দ্বিপাক্ষীক ওয়ানডে সিরিজ জিতলো কিউইরা।
অকল্যান্ডে টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্বান্ত নেন ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি। ব্যাট হাতে দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনার মার্টিন গাপটিল ও হেনরি নিকোলস। ১০১ বলে ৯৩ রানের জুটি গড়েন তারা। এর মধ্যে ৫টি চারে ৫৯ বলে ব্যক্তিগত ৪১ রানের মাথায় ভারতীয় স্পিনার যুজবেন্দ্রা চাহালের লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন নিকোলস।
দ্বিতীয় উইকেটে টম ব্লান্ডেলকে নিয়ে ৫৮ বলে ৪৯ রান যোগ করেন গাপটিল। আর এ উইকেটেই ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩৬তম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন গাপটিল। ব্লান্ডেল ২২ রানে ফিরলেও হাফ সেঞ্চুরির পর নিজের ইনিংসটি বড় করেছে গাপটিল। ১১ ইনিংস পর হাফ সেঞ্চুরি দেখা পাওয়া গাপটিল রান আউট হন। ৭৯ বলে ৮টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৭৯ রান করেন তিনি। ফলে ১৫৭ রানে ৩ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড।
এরপর দলকে সামনের দিকে টেনে নিয়ে আগের ম্যাচের হিরো রস টেইলর ও অধিনায়ক টম লাথাম। ৩৪তম ওভারের প্রথম বলে লাথামকে লেগ বিফোর করে এ জুটি ভাঙেন ভারতের বাঁ-হাতি স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজা। তখন নিউজিল্যান্ডের স্কোর ৪ উইকেটে ১৭১। আর এখান থেকেই ধস নামে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন-আপে।
১৯৭ রানে অষ্টম উইকেটের পতন ঘটে। লাথাম ৭, জেমস নিশাম ৩, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম ৫, মার্ক চাপম্যান ১ ও টিম সাউদি ৩ রান করে ফিরেন। শেষ দুই উইকেটে হাতে থাকায় দ্রুত গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে নিউজিল্যান্ড। তবে নবম উইকেটে শেষ ৫১ বলে অবিচ্ছিন্ন ৭৬ রানের জুটি গড়ে নিউজিল্যান্ডকে লড়াই করার পুঁজি এনে দেন টেইলর ও অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা কাইল জেমিসন।
প্রথম ওয়ানডেতে অপরাজিত ১০৯ রান করা টেইলর এবার ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৭৪ বলে অপরাজিত ৭৩ রান করেন। পান ওয়ানডেতে ৫১তম হাফ-সেঞ্চুরি। ১টি চার ও ২টি ছক্কায় ২৪ বলে অপরাজিত ২৫ রান করেন জেমিসন। ভারতের চাহাল ৩টি ও ঠাকুর ২টি উইকেট নেন।
জবাবে মারমুখী মেজাজে ইনিংস শুরু করেন ভারতের ওপেনার পৃথ্বী শ। হামিশ বেনেটকে প্রথম দু’ডেলিভারিতেই দু’টি চার মারেন তিনি। চতুর্থ বলে আরও ১টি চার মেরে ওই ওভার থেকে ১২ রান তুলে নেন পৃথ্বী। দ্বিতীয় ওভারে নিউজিল্যান্ডের টিম সাউদিকে আরও ১টি চার মারেন এ ডান-হাতি ব্যাটসম্যান। তবে তৃতীয় ওভারে প্যাভিলিয়নে ফিরেন আরেক ওপেনার ৩ রান করা মায়াঙ্ক আগারওয়াল।
সতীর্থকে হারালেও দ্রুত রান তোলার কাজে মনোযোগী ছিলেন পৃথ্বী। তবে অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা জেমিসনের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড হন পৃথ্বী। ৬টি চারে ১৯ বলে ২৪ রান করেন তিনি। দলীয় ৩৪ রানে দুই ওপেনারকে হারিয়ে চাপে পড়ে ভারত। এ অবস্থায় বড় জুটিই ছিল ভারতের প্রধান লক্ষ্য।
নিয়মিত বিরতি দিয়ে শতরানের আগেই ভারতের আরও ৩ উইকেট তুলে নেন নিউজিল্যান্ডের পেসাররা। দলীয় ৯৬ রানে মধ্যে প্যাভিলিয়নে ফিরেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি, লোকেশ রাহুল ও কেদার যাদব। ১৫ রান করা কোহলিকে বোল্ড করেন সাউদি। কেদারকে ৯ রানে থামান সাউদি। আর রাহুলকে ৪ রানে আটকে দেন ডি গ্র্যান্ডহোম।
সতীর্থরা ব্যর্থ হলেও ভারতের রানের চাকা সচল রেখেছেন প্রথম ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান শ্রেয়াস আইয়ার। ৫৬তম বলে সপ্তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ৫২ রানে পেসার বেনেট শিকার হন আইয়ার। দলীয় ১২৯ রানে ষষ্ঠ উইকেট পতনের পর ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে ভারত।
তবে ভারতকে সহজেই হার মানতে দেননি দুই টেল-এন্ডার জাদেজা ও নবদীপ সাইনি। উইকেটের সাথে সেট হয়ে রানের চাকা ঘুড়াতে থাকেন দু’জনে। নিউজিল্যান্ডের বোলারদের বিপক্ষে আধিপত্য বিস্তার করে খেলে ৪২তম ওভারে ভারতের দলীয় স্কোর দুইশ রানে নিয়ে যান জাদেজা-সাইনি। এতে জয়ের জন্য লড়াইয়ে ফিরে ভারত। ৪৪তম নিউজিল্যান্ডের গ্র্যান্ডহোমকে ৩টি চার মেরে ভারতের জয়ের আশা জাগিয়ে তুলেন সাইনি। এমন অবস্থায় জয়ের জন্য শেষ ৬ ওভারে ৫২ রানের প্রয়োজন পড়ে ভারতের।
৪৫তম ওভারের দ্বিতীয় ছক্কা মেরে ব্যবধান কমান সাইনি। তবে পরের বলেই সাইনিকে বোল্ড করেন জেমিসন। ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৯ বলে ৪৫ রান করেন সাইনি। অষ্টম উইকেটে জাদেজা-সাইনির কাছ থেকে ৮০ বলে ৭৬ রান পায় ভারত।
সাইনিকে হারিয়ে ভারতের শেষ ভরসা ছিলেন জাদেজা। চাহালকে নিয়ে নবম উইকেটে ২০ বলে ২২ রান যোগ করেন জাদেজা। দশম ব্যাটসম্যান হিসেবে রান তোলার কাজটা ভালোই করছিলেন চাহাল। কিন্তু ব্যক্তিগত ১০ রানে রান আউট হন তিনি। আর ৪৯তম ওভারের তৃতীয় বলে জাদেজাকে শিকার করে ভারতকে ২৫১ রানে গুটিয়ে দেন নিউজিল্যান্ডের পেসার জেমস নিশাম।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৩তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ৫৫ রানে আউট হন জাদেজা। ৭৩ বলের ইনিংসে ২টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে ২টি করে উইকেট নেন বেনেট-সাউদি-জেমিসন-গ্র্যান্ডহোম। ম্যাচ সেরা হয়েছেন জেমিসন।