পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো সফরকারী ভারত। সিরিজের পঞ্চম ও শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে ৭ রানে হারিয়েছে ভারত। এ জয়ে নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করার পাশাপাশি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ইতিহাসে বিশ্বরেকর্ডও গড়লো ভারত।
ভারতের আগে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে বিশ্বের কোন দল প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করতে পারেনি। অবশ্য খুব বেশি পাঁচ ম্যাচের সিরিজও হয়নি। এর আগে সিরিজের আগে সংক্ষিপ্ত ভার্সনে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ হয়েছে মাত্র চারটি।
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে সিরিজের পঞ্চম ও শেষ ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেন ভারতের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। নিয়মিত দলপতি বিরাট কোহলিকে বিশ্রামে রেখে একাদশ সাজায় ভারত। তবে লোকেশ রাহুলের সাথে ইনিংস শুরু করে ২ রানের বেশি করতে পারেননি স্যামসন।
তিন নম্বরে ব্যাট হাতে নেমে রাহুলের সাথে ইনিংস মেরামতের দায়িত্ব নেন রোহিত। দু’জনের ব্যাটিং নৈপুণ্যে ১১ ওভারে ৯৪ রান পেয়ে যায় ভারত। এ অবস্থায় বড় সংগ্রহের প্রত্যাশায় ছিল ভারত। তবে ১২তম ওভারের তৃতীয় বলে ভাঙে রাহুল-রোহিত জুটি। ৩৩ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৫ রান করে রাহুল বিদায় নিলে ৬০ বলে ৮৮ রানের জুটি ভাঙে।
রাহুলের বিদায়ে রান তোলার গতি কমে আসে। চার নম্বরে নামা শ্রেয়াস আইয়ারকে নিয়ে দেখেশুনে খেলতে থাকেন রোহিত। এর মধ্যে ৩৫ বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ২১তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন রোহিত। কাফ ইনজুরিতে পড়ে হাফ-সেঞ্চুরির পর ৬০ রানের মাথায় আহত অবসর নেন রোহিত। ৪১ বলে ৩টি করে চার-ছক্কা মারেন তিনি।
অধিনায়কের বিদায়ে ক্রিজে যোগ দেন শিবম দুবে। কিন্তু এবার ব্যর্থ হন এই অলরাউন্ডার। ৫ রান করেন তিনি। তবে শেষদিকে মনিষ পান্ডিয়ার ৪ বলে ১টি করে চার-ছক্কায় ১১ রান ও আইয়ারের ৩১ বলে অপরাজিত ৩৩ রানের সুবাদে লড়াকু সংগ্রহ পায় ভারত। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৩ উইকেটে ১৬৩ রান করে টিম ইন্ডিয়া। নিউজিল্যান্ডের পেসার স্কট কুগিলিজেন ২৫ রানে ২ উইকেট নেন।
হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লক্ষ্যে ১৬৪ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে শুরুতেই বিপদে পড়ে নিউজিল্যান্ড। ১৭ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। দুই ওপেনার মার্টিন গাপটিল ২, কলিন মুনরো ১৫ ও টম ব্রুস শূন্য রানে প্যাভিলিয়নে ফিরেন। এ অবস্থায় দলকে খেলায় ফেরানোর দায়িত্ব পান উইকেটরক্ষক টিম সেইফার্ট ও রস টেইলর।
দ্রুত রান তোলার চেষ্টা না করে ভারতীয় বোলারদের সমীহ করে খেলে উইকেটে সেট হন সেইফার্ট ও টেইলর। ৯ ওভার শেষে ৬৪ রান সংগ্রহ করে নিউজিল্যান্ড। ফলে ম্যাচ জিততে শেষ ১১ ওভারে জিততে ১০০ রান দরকার পড়ে কিউইদের।
দশম ওভারে ভারতের মিডিয়াম পেসার শিবম দুবের উপর চড়াও হয়ে ৩৪ রান আদায়য় করে নেন সেইফার্ট ও টেইলর। সেইফার্ট দু’টি ছক্কা ও ১টি চার এবং টেইলর ২টি ছক্কা মারেন। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ১ ওভারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান এটি।
৩৪ রানে জয়ের টার্গেটের সমীকরণ কমিয়ে আনেন সেইফার্ট ও টেইলর। ৬০ বলে ৬৬ রান দরকার পড়ে কিউইদের। তাতেই কিছুটা সতর্ক হয়ে পড়েন সেইফার্ট ও টেইলর। তবে ১৩তম ওভারে সেইফার্ট-টেইলর জুটি ভেঙে ভারতকে খেলায় ফেরান ভারতের পেসার নবদীপ সাইনি। ২৯ বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ফিরেন সেইফার্ট। ৫টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৩০ বলে ৫০ রান করেন সেইফার্ট। ৪র্থ উইকেটে ৫৭ বলে ৯৯ রান যোগ করেন সেইফার্ট ও টেইলর।
দলীয় ১১৬ রানে সেইফার্টের আউটের পর ভারতীয় বোলারদের তোপের মুখে পড়ে নিউজিল্যান্ডের পরের দিকের ব্যাটসম্যানরা। পরের চার ব্যাটসম্যানের কেউই দু’অংকের কোটা পেরোতে পারেননি। তাতেই ম্যাচে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ভারত। শেষ ১৮ বলে ৩১ রানের প্রয়োজন পড়ে নিউজিল্যান্ডের।
১৮তম ওভারের প্রথম বলে সেট ব্যাটসম্যান টেইলরকে শিকার করে ভারতের জয়ের পথ সহজ করে তুলেন সাইনি। ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৭ বলে ৫৩ রান করেন টেইলর। নিজের শততম ম্যাচে সপ্তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে দলকে হোয়াইটওয়াশের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেননি টেইলর। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৫৬ রান করতে সক্ষম নিউজিল্যান্ড। ভারতের বুমরাহ ১২ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন। সিরিজ সেরা হয়েছেন ভারতের রাহুল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত : ১৬৩/৩, ২০ ওভার (রোহিত ৬০ আহত অবসর, রাহুল ৪৫, কুগিলিজেন ২/২৫)
নিউজিল্যান্ড : ১৫৬/৯, ২০ ওভার (টেইলর ৫৩, সেইফার্ট ৫০, বুমরাহ ৩/১২)।
ফল : ভারত ৭ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : জসপ্রিত বুমরাহ (ভারত)।
সিরিজ সেরা : লোকেশ রাহুল (ভারত)।