বোলারদের দুর্দান্ত ও অসাধারণ নৈপুন্যে সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসে স্বর্ণ জিতলো বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। উত্তেজনায় ঠাসা ফাইনাল ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে মাত্র ২ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এ জয়ে আসরে ক্রিকেট ইভেন্টে দেশকে প্রথম স্বর্ণ পদক এনে দিলেন সালমা খাতুন-জাহানারা আলম-নিগার সুলতানারা।
ফেভারিটের তকমা নিয়ে পোখারাতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে স্বর্ণ জয়ের লক্ষ্যে ফাইনাল খেলতে নামে বাংলাদেশ। লিগ পর্বের তিন ম্যাচে দুর্দান্ত পারফরমেন্স করে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যান ও বোলাররা। তাই ফাইনাল জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আত্মবিশ্বাসী ছিল বাংলাদেশ।
শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে টস জিতে প্রথমে বোলিং বেছে নেয় শ্রীলঙ্কা। ব্যাট হাতে প্রথম ৩ ওভারে অবিচ্ছিন্নই থাকেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার মুরশিদা খাতুন ও আয়শা রহমান। তবে চতুর্থ ওভারে দলীয় ১৬ রানে বিচ্ছিন্ন হন তারা।
৩টি চারে ১৫ বলে ১৪ রান করে আউট হন মুরশিদা। সর্তকতার সাথে খেলতে থাকা আয়শা ১৪ বল খেলে উইকেটে সেট হয়েও ২ রানের বেশি করতে পারেননি। মুরশিদার বিদায়ে মারমুখী মেজাজে রানের চাকা সচল রাখা সানজিদা ইসলামও সপ্তম ওভারে বিদায় নেন। ৩টি চারে ১২ বলে ১৫ রান করেন তিনি।
দলীয় ৩৬ রানেই আয়শা-সানজিদার আউটের পর মিনি ধস নামে বাংলাদেশের মিডল-অর্ডারে। ফারজানা হক-রিতু মনি খালি হাতে ও অধিনায়ক সালমা খাতুন ৩ রান করে ফিরেন। তাই ৪২ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে মহাবিপদেই পড়ে বাংলাদেশ।
এ অবস্থায় দলকে সম্মানজনক স্কোর এনে দেয়ার চেষ্টা করেন উইকেটরক্ষক নিগার সুলতানা ও ফাহিমা খাতুন। ভালো একটি জুটি গড়ার চেষ্টা করেন তারা। সাবধনতার সাথে খেলে ৩০ রানের জুটি গড়েন সুলতানা ও ফাহিমা। মূলত এ জুটিতেই সম্মানজনক স্কোর পায় বাংলাদেশ।
২০ ওভারে ৮ উইকেটে ৯১ রান করে বাংলাদেশ। ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৮ বলে অপরাজিত ২৯ রান করেন সুলতানা। ২১ বলে ১৫ রান করেন ফাহিমা। শ্রীলঙ্কার উমেশ থিমাসিনি ৮ রানে ৪ উইকেট নেন।
জয়ের জন্য শ্রীলঙ্কাকে মাত্র ৯২ রানের টার্গেট দিয়েও ম্যাচ জয়ের স্বপ্ন দেখছিল বাংলাদেশ। তবে সবকিছুই নির্ভর করছিল বোলারদের পারফরমেন্সের ওপর। অল্প পুঁজি নিয়ে কিভাবে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করেন জাহানারা-সালমা-নাহিদারা, সেটির অপেক্ষায় ছিল দল। বল হাতে নিজেদের ইনিংস শুরু করে দ্বিতীয় ওভারেই সাফল্য পেয়ে যায় বাংলাদেশ।
শ্রীলঙ্কার ওপেনার জানাদি আনালিকে ১ রানের বেশি করতে দেননি বাংলাদেশের স্পিনার সালমা খাতুন। পঞ্চম ওভারে আরেক ওপেনারকে বিদায় দেন স্পিনার নাহিদা আক্তার। ৭ রান করেন থিমাসিনি। তাই ১১ রানে দুই ওপেনারকে হারায় বাংলাদেশ। এ অবস্থায় চাপ বাড়াতে আরও দুই উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। তাই ৩০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ নিয়ে চিন্তায় পড়ে শ্রীলঙ্কা।
শ্রীলঙ্কার চাপ বাড়াতে আটঁসাট বোলিং করতে থাকে বাংলাদেশের বোলাররা। ফলে চাপ বাড়তে থাকে লঙ্কান শিবিরে। ১৩তম ওভারের প্রথম বলে অধিনায়ক হারসিতা মাদাভিকে তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে চালকের আসনে বসিয়ে দেন পেসার জাহানারা। এতে শেষ ৪১ বলে বাকি ৫ উইকেটে ৩৯ রান দরকার পড়ে শ্রীলঙ্কার।
লোয়ার-অর্ডার ব্যাটসম্যানদের নিয়ে দলের জয়ের আশা ধরে রাখেন লিহিনি আপসারা। তাই শেষ ওভারে ম্যাচ জয়ের সমীকরণ ৭-এ নিয়ে আসেন আপসারা। হাতে উইকেট ছিল ৩টি।
শেষ ওভারে বল হাতে নিয়ে প্রথম ৩ বলে ২ রান দেন বাংলাদেশের জাহানারা। চতুর্থ বলে সেট ব্যাটসম্যান আপসারা রান আউটের ফাঁদে পড়েন। পঞ্চম বলে ১ রান পায় শ্রীলঙ্কা। তাই শেষ বলে জিততে ৪ রান প্রয়োজন পড়ে শ্রীলঙ্কার। তবে শেষ বলেও রান আউটে বিদায় নেন মালসা রানাতুঙ্গা।
২ রানে ম্যাচ জিতে স্বর্ণ জয়ের স্বাদ নেয় বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। আপসারা ২টি চারে ২৮ বলে ২৫ রান করেন। বাংলাদেশের নাহিদা ২টি, জাহানারা-সালমা-খাদিজা ১টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন বাংলাদেশের নাহিদা আক্তার।