ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচ টি-২০ সিরিজে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করেছেন বাংলাদেশ দলের উদীয়মান ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ নাঈম শেখ। তিন ম্যাচে একটি হাফ সেঞ্চুরিসহ (৮১) ১৪৩ রান নিয়ে সিরিজের সর্বোচ্চ সংগ্রহাক হয়েছেন তিনি।
এ সিরিজ দিয়েই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অভিষেক হয়েছে ২০ বছর বয়সী এ টাইগার ক্রিকেটারের। অভিষেকেই সিরিজের সর্বোচ্চ রান করার বিষয়টি নিজেও ভাবতে পারেননি নাঈম। বিশেষ করে যে সিরিজে রোহিত শর্মা, কেএল রাহুল, শিখর ধাওয়ানসহ বাংলাদেশ দলের সতীর্থ মুশফিকুর রহিমের মত তারকারা রয়েছেন।
দেশের ভবিষ্যৎ ক্রিকেটের যে অপার সম্ভাবনা মেধাবী এ ক্রিকেটারের মধ্যে লুকিয়ে আছে সেটি বাংলাদেশিদেরও সেভাবে জানা ছিল না। তবে দেশের মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজ চলার সময় দলের বাইরে থেকেও বলেছিলেন, সুযোগ পেলে কিছু একটা করতে চান।
সিরিজের প্রথম ম্যাচে ২৮ বলে ২৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন নাঈম শেখ। দ্বিতীয় ম্যাচে ৩৩ বলে ৩৬ রান, আর সিরিজ নির্ধারনী তৃতীয় ম্যাচে ৪৮ বলে ৮১ রান করে বাংলাদেশকে সিরিজ জয়ের স্বপ্নও দেখান তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত তার পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ান হ্যাটট্রিকম্যান ভারতের দীপক চাহার। যিনি ৭ বলে ৬ উইকেট নিয়ে আন্তর্জাতিক টি-২০ ক্রিকেটে নতুন রেকর্ড গড়েছেন।
ধারাবাহিক ব্যাটিং দিয়ে নাঈমের পারফর্মেন্সের ধারাবাহিক উন্নতির এ গ্রাফই বলে দিচ্ছে এতদিন এ বিষয়টিরই ঘাটতি ছিল বাংলাদেশের ব্যাটিং বিভাগে। আর এটিই বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টকে তৃপ্ত করছে। শীর্ষ কয়েকজন খেলোয়াড়ের অনুপস্থিতির কারণে এ সিরিজে বাংলাদেশ বেশ কয়েকজন তরুণ খেলোয়াড়কে নিয়মিত খেলার সুযোগ দিয়েছিল। এদের মধ্যেই একজন হিসেবে সুযোগ পেয়েছিলেন নাঈম।
হাতে অনেক বেশি শট না থাকলেও সেই দুর্বলতা কাটিয়ে নাঈম দেখিয়েছেন, আলোর পথে কীভাবে এগিয়ে যেতে হয়... @BCBtigers https://t.co/sMDx3OJV6c
— Sportsmail24.com (@sportsmail24) November 11, 2019
সুযোগ পেয়ে নিজেদের দক্ষতা দেখিয়েছেন লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লব ও অল রাউন্ডার আফিফ হোসেনও। তবে নাঈমের মধ্যে ছিল ধারাবাহিকতা। যেটি বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য খুব বেশি প্রয়োজন।
নাইমের ব্যাটিং সবাইকে মুগ্ধ করেছে। ম্যাচ চলাকালে ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় সুনিল গাভাস্কার ও আতাহার আলী খানদের মত সাবেক তারকাদের মুখ থেকেও নাঈমের ব্যাটিংয়ের প্রশংসা ঝড়েছে। তারা বলেন,‘ বাহ! কি দারুণ শট।’ সিরিজের শেষ ম্যাচে স্বাগতিক ভারতীয় দাপুটে বোলিংয়ের সামনেই ৪৮ বলের মোকাবেলায় খেলেছেন ৮১ রানের অসাধারণ এক ইনিংস।
বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মামুদউল্লাহ রিয়াদ নাঈমের ইনিংস প্রসঙ্গে বলেন, ‘তার ইনিংসটি ছিল মনোমুগ্ধকর। কিন্তু তার ওই অসাধারণ ইনিংসের পরও ম্যাচ জয় করতে না পারাটা খুবই হতাশার। এমন একটি ইনিংসকে কাজে লাগাতে না পারার ব্যর্থতার দায় আমাদের।’
বয়স ভিত্তিক ম্যাচে খেলানোর সুযোগ দিয়ে ম্যানেজমেন্ট যত্নসহকারে যেসব ক্রিকেটার তৈরি করছে তাদেরই একজন নাঈম শেখ। তবে অন্যদের পথে না হেঁটে নাঈমের প্রতিদান দেওয়াদের একজন হতে চলেছেন।
৮১ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেছেন বাংলাদেশ ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম শেখ... @BCBtigers https://t.co/JzU7BDHOP4
— Sportsmail24.com (@sportsmail24) November 11, 2019
জাতীয় দলের নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন বলেন, ‘নাঈম শেখের রান করার ধরণটি বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য ইতিবাচক। গত দুই বছর ধরে তাকে গড়ে তোলা হচ্ছে। সে হাই পারফর্মেন্সে স্কোয়াডেও ছিল। মেধাবী ক্রিকেটারদের নিয়ে যেটি গড়ে তোলা হয়েছে। তবে সবাই পারফর্মার হতে পারেনি। নাঈম নিজেকে ভালো পারফর্মার হিসেবে গড়ে তুলতে পারছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রথম দুই ম্যাচে সে বড় স্কোর গড়তে পারেনি। কিন্তু শেষ ম্যাচে সে বড় স্কোর করেছে। যার মাধ্যমে সে প্রমাণ করেছে বড় ইনিংস খেলার যোগ্য। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিয়মিত রান সংগ্রহ করতে পারা কঠিন। তবে খুব বেশি ঘাম না ঝরিয়েই সে সেটি করতে সক্ষম হয়েছে।’
বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক বাশার আরও বলেন, ‘কঠোর পরিশ্রমই নাঈমকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভালো করতে সহায়তা করেছে। সে যখন হাই পারফর্মেন্স ইউনিটে ছিল, তখন তার কৌশল খুব একটা ভালো ছিল না। কিন্তু সে ওই বাঁধাকে টপকাতে সক্ষম হয়েছে কেবল মাত্র কঠোর পরিশ্রম দিয়ে। যে কারণে আমরা তাকে আস্থায় রাখতে পারছি।’
এদিকে জুড়ার প্রস্তাব গোপন করে এক বছরের জন্য সব ধরনের ক্রিকেট খেলা থেকে নিষিদ্ধ হয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার টাইগার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ফলে আসন্ন টি-২০ বিশ্বকাপে সাকিবকে পাচ্ছে না বাংলাদেশ। এছাড়া বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের কে নেতৃত্ব দেবে তাও এখনো বোর্ডের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়নি।
সাকিব নিষিদ্ধ হওয়ার আগে বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধর্মঘট পালন করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ধর্মঘট ও সাকিবের নিষিদ্ধ নিয়ে হঠাৎই নানা সমস্যায় পড়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট। নতুন করে এখন ভাবতে হচ্ছে টি-২০ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে। এর মধ্যে ভারতের কাছে অল্পের জন্য সিরিজ না জিতলেও নাঈম শেখের এমন পারফর্মেন্স সত্যিই নতুন আলো দেখাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে।