সাবেক অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথের ব্যাটিং নৈপুণ্যে সিরিজের দ্বিতীয় টি-২০ ম্যাচে পাকিস্তানকে ৭ উইকেটে হারালো স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। তিন নম্বরে ব্যাট হাতে নেমে ৮০ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন স্মিথ। এ জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল অসিরা। সিরিজের প্রথম ম্যাচ বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়েছিল।
মঙ্গলবার ক্যানবেরাতে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামে পাকিস্তান। ৫ ওভারে ২৯ রান উঠতেই পাকিস্তানের ২ ব্যাটসম্যান প্যাভিলিয়নে ফিরেন। ওপেনার ফখর জামান ২ ও তিন নম্বরে নামা হারিস সোহেল ৬ রান করে আউট হন। এ নিয়ে টানা পাঁচ ইনিংসে দু’অংকের কোটা স্পর্শ করতে ব্যর্থ হলেন ফখর।
শুরুর ধাক্কা সামাল দেওয়া চেষ্টা করেন অধিনায়ক বাবর আজম। ওপেনার হিসেবে খেলতে নেমে এক প্রান্ত আগলে রানের চাকা ঘুড়িয়েছেন তিনি। চার নম্বরে নামা উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ রিজওয়ানের সঙ্গও পেয়েছেন বাবর। ফলে শুরুর ধাক্কা সামলে ওঠে পাকিস্তান। তবে ১০ম ওভারের পঞ্চম বলে অস্ট্রেলিয়ার স্পিনার অ্যাস্টন আগারের বলে ১৬ বলে ১৪ রান করা রিজওয়ান ফিরলে তৃতীয় উইকেট হারায় পাকিস্তান। জুটিতে ২৯ বলে ৩৩ রান করেন বাবর-রিজওয়ান।
পাঁচ নম্বরে ব্যাট হাতে নামা আসিফ আলিও সুবিধা করতে পারেননি। ৪ রান করে আগারের দ্বিতীয় শিকার হন তিনি। ফলে ৭০ রানে ৪ উইকেট হারায় পাকিস্তান। এরপর আবারও শক্তপোক্ত জুটি গড়ার চেষ্টা করেন বাবর। এবার তার সঙ্গী হন ইফতেখার আহমেদ।
দু’জনের জুটিতে শতরানের কোটাও পেরিয়ে যায় পাকিস্তান। আর বাবর নেন টি-২০ ক্যারিয়ারে ১২তম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ। কাটাকাটায় হাফ-সেঞ্চুরি তুলে রান আউট হওয়ার আগে ৬টি চারে ৩৮ বলে নিজের ইনিংস গড়েন তিনি। পরিত্যক্ত হওয়া প্রথম টি-২০তে অপরাজিত ৫৯ রান করেছিলেন বাবর।
১৬তম ওভারে দলীয় ১০৬ রানে বাবর ফিরে গেলেও ইফতেখারের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে লড়াই করার পুঁজি পেয়ে যায় পাকিস্তান। ইফতেখারের ব্যাটিং নৈপুণ্যে শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৫০ রানের সংগ্রহ পায় পাকিস্তান। মাত্র ৩৪ বলে পাঁচটি বাউন্ডারি ও তিন ওভার বাউন্ডারিতে ৬২ রানে অপরাজিত থাকেন ইফতেখার। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বল হাতে ২৩ রানে ২ উইকেট নেন আগার।
জয়ের জন্য ১৫১ রানের জবাবে উড়ন্ত সূচনার চেষ্টা করেন অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। ৩ ওভারে ৩০ রান তুলে ফেলেন তারা। ৪টি চারে মারমুখী মেজাজে শুরু করে ১১ বল মোকাবেলায় ২০ রানে আটকে যান ওয়ার্নার। এরপর প্যাভিলিয়নে ফিরেন ফিঞ্চও। ১৪ বলে ৩টি চারে ১৭ রান করেন তিনি।
দলীয় ৪৮ রানের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারায় অস্ট্রেলিয়া। এ অবস্থায় বড় জুটির স্বপ্ন দেখে অসিরা। অস্ট্রেলিয়ার স্বপ্ন পূরণ করেন স্মিথ ও বেন ম্যাকডরমট। তৃতীয় উইকেটে জুটি বেঁধে পাকিস্তান বোলারদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে দ্রুত রানের চাকা ঘুড়ানোর চেষ্টা করেছেন স্মিথ।
অন্যপ্রান্তে স্ট্রাইক পরিবর্তন করে খেলছিলেন ম্যাকডরমেট। ফলে ১২তম ওভারেই শতরানে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া। জয়ের জন্য তখন ৪৮ বলে ৫০ রান দরকার পড়ে অসিদের।
১৩তম ওভারের শেষ বলে বিদায় নেন ২১ বলে ২১ রান করা ম্যাকডরমট। আর তৃতীয় উইকেটে ৪৪ বলে ৫৮ রান যোগ করেন স্মিথ-ম্যাকডরমেট। এরপর ক্রিজে স্মিথের সঙ্গী হন অ্যাস্টন টার্নার। তাকে নিয়ে ৩৫ ম্যাচের টি-২০ ক্যারিয়ারে চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন স্মিথ। বাউন্ডারি মেরে ৩৬তম বলে হাফ-সেঞ্চুরিতে পা রাখেন তিনি।
অর্ধশতকের পর আরও বেশি মারমুখী হয়ে ওঠেন স্মিথ। ১৫তম ওভারে পাকিস্তানের মোহাম্মদ আমিরকে বাউন্ডারি মেরে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছিলেন তিনি। ঐ ওভারের শেষ চার বলে আরও তিনটি বাউন্ডারি মেরে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের পথ সহজ করে দেন স্মিথ। শেষ পর্যন্ত ৯ বল বাকি রেখে জয় নিশ্চিত করে স্মিথ-টার্নার।
১১টি চার ও ১টি ছক্কায় ৫১ বলে অপরাজিত ৮০ রান করেন স্মিথ। ১৫ বলে ৮ রানে অপরাজিত থাকেন টার্নার। পাকিস্তানের ইরফান-ওয়াসিম-আমির ১টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার স্মিথ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান : ১৫০/৬, ২০ ওভার (ইফতেখার ৬২*, বাবর ৫০, আগার ২/২৩)
অস্ট্রেলিয়া : ১৫১/৩, ১৮.৩ ওভার (স্মিথ ৮০*, ম্যাকডরমেট ২১, ইরফান ১/২৭)
ফল : অস্ট্রেলিয়া ৭ উইকেটে জয়ী।