সফররত আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে হার, টি-২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচেও লজ্জাজনক পরাজয়। অবশেষে আফগানিস্তানের বিপক্ষে স্বস্তির জয় পেল বাংলাদেশ।
ত্রিদেশীয় সিরিজের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে রশিদ খানের নেতৃত্বাধীন আফগানিস্তানকে ৪ উইকেটে হারিয়ে এ স্বস্তির জয় তুলে নেয় সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ম্যাচসেরা নির্বাচিত হওয়া সাকিব আল হাসান ৪৫ বলে অপরাজিত ৭০ রান করেছেন।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। ফলে ব্যাট হাতে মাঠে নেমে উড়ন্ত সূচনা করেন আফগানিস্তানের দুই ওপেনার রহমনউল্লাহ গুরবাজ ও হযরতউল্লাহ জাজাই।
৯ দশমিক ৩ ওভার ব্যাট করে ৭৫ রান যোগ করেন তারা। ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩৫ বলে ৪৭ রান করা জাজাইকে তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন সাত নম্বরে বোলিং আক্রমণে আসা ডান-হাতি অফ-স্পিনার আফিফ হোসেন। মোস্তাফিজুর রহমানের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন জাজাই।
নিজের প্রথম ও ইনিংসের দশম ওভারের তৃতীয় বলে জাজাইকে থামিয়েছেন আফিফ। ওই ওভারের পঞ্চম বলে আবারও উইকেট শিকার করে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় সাফল্য এনে দেন আফিফ। তিন নম্বরে নামা সাবেক অধিনায়ক আসগর আফগান ২ বলে শূন্য রান করে নাজমুল হোসেন শান্তকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন।
দলীয় ৭৫ রানে জাজাই-আসগর ফিরে যাওয়ার পরই নিয়মিত বিরতি দিয়ে উইকেট হারাতে থাকে আফগানিস্তান। বাংলাদেশের বোলাররা চেপে ধরেন আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানদের। ৭৫ থেকে ১১৪ রানে পৌঁছাতেই ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলে আফগানরা।
তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন উইকেটে সেট হয়ে যাওয়া আরেক ওপেনার গুরবাজ। ২টি করে চার-ছক্কায় ২৭ বলে ২৯ রান করে তিনি শিকার হন মোস্তাফিজের। এরপর আরেক সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ নবী লেগ বিফোর ফাঁদে পড়েন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
দলীয় ১০৯ রানে আফগানিস্তানের শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান হিসেবে নাজিবুল্লাহ জাদরানকে বিদায় দিয়ে প্রতিপক্ষকে বড় স্কোর করার পথ আটকে দেন বাংলাদেশের মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। আফিফকে ছক্কা হাঁকানো জাদরান ১৬ বলে ১৪ রান করেন।
পরের ওভারে নিজের প্রথম উইকেট নিয়ে আফগানিস্তানের টেল-এন্ডারে আঘাত হানেন শফিউল। ৩ রান করে আউট হন আট নম্বরে নামা করিম জানাত।
বাংলাদেশের সফল বোলার ছিলেন আফিফ। ৩ ওভারে ৯ রানে ২ উইকেট নেন। এছাড়া সাইফউদ্দিন-শফিউল-সাকিব-মোস্তাফিজুর ১টি করে উইকেট নেন।
১৩৯ রানের ছোট লক্ষ্যমাত্রায় প্রথম ২০ বলের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারায় বাংলাদেশ। ৪ রান করে আফগানিস্তানের স্পিনার মুজিব উর রহমানের শিকার হন লিটন। ৫ রান করা নাজমুল হাসান শান্তকে শিকার করেন ডান-হাতি পেসার নবীন উল হক।
১২ রানে দুই ওপেনারকে হারিয়ে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
এ অবস্থায় দলের হাল ধরেন অধিনায়ক সাকিব ও মুশফিক। দ্রুত রান তোলায় মন দেন সাকিব। তাকে স্ট্রাইক দেওয়ার চেষ্টায় ছিলেন মুশফিক। তাই ১০ ওভারে ৬২ রান পেয়ে যায় বাংলাদেশ। ফলে শেষ ১০ ওভারে ৮ উইকেট হাতে নিয়ে জয়ের জন্য ৭৭ রান প্রয়োজন পড়ে বাংলাদেশের।
১১তম ওভারের শুরুটা ছক্কা দিয়ে করেছিলেন মুশফিক। কিন্তু ওই ওভারের চতুর্থ বলে ফিরেন মুশফিক। ২৫ বলে ২৬ রান করে থামেন তিনি। সাকিবের সাথে ৪৪ বলে ৫৮ রান যোগ করেন মুশফিক। দলীয় ৭০ রানে মুশফিকের বিদায়ের পর ক্রিজে গিয়ে সুবিধা করতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আফগানিস্তানের অধিনায়ক ও লেগ স্পিনার রশিদের প্রথম ওভারের চতুর্থ বলে লেগ বিফোর ফাঁদে পড়ে ৮ বলে ৬ রানে ফেরেন তিনি।
উইকেটে গিয়ে টিকতে পারেননি সাব্বির রহমানও। ১ রান করে নাভিনের দ্বিতীয় শিকার হন সাব্বির। সাব্বিরের বিদায়ের ওভারে টি-২০ ক্যারিয়ারে ১৯তম হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন সাকিব। সাকিবের হাফসেঞ্চুরির পরই বাংলাদেশ শিবিরে আঘাত হানেন রশিদ। তরুণ আফিফ হোসেনকে ২ রানের বেশি করতে দেননি রশিদ। এমন অবস্থায় ১০৪ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ নিয়ে চিন্তায় পড়ে যায় বাংলাদেশ।
তবে আশার আলো হয়ে জ্বলছিলেন সাকিব। আট নম্বরে নামা মোসাদ্দেককে নিয়ে শেষ ৩ ওভারে জয়ের সমীকরণ ২৭ রানে দাঁড় করান সাকিব। রশিদের ১৮তম ওভার থেকে ১৮ রান নিয়ে ম্যাচ জয়ের পথ সহজ করে ফেলেন সাকিব-মোসাদ্দেক। সাকিব ১টি করে ছক্কা-চারে ১৩ ও মোসাদ্দেক ১টি চারে ৫ রান নেন। জয়ের জন্য শেষ ১২ বলে ৯ রান দরকার পড়ে বাংলাদেশের।
১৯তম ওভারে দলে প্রয়োজন মিটিয়ে ফাইনালে আগে বাংলাদেশকে দুর্দান্ত জয়ের স্বাদ দেন সাকিব-মোসাদ্দেক। সাকিব ৮টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪৫ বলে অপরাজিত ৭০ ও মোসাদ্দেক ১টি চারে ১২ বলে অপরাজিত ১৯ রান করেন। আফগানিস্তানের নবীন-রশিদ ২টি করে উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
আফগানিস্তান : ১৩৮/৭, ২০ ওভার (জাজাই ৪৭, গুরবাজ ২৯, শফিকুল্লাহ ২৩*, আফিফ ২/৯)
বাংলাদেশ : ১৩৯/৬, ১৯ ওভার (সাকিব ৭০*, মুশফিকুর ২৬, মোসাদ্দেক ১৯*, নাভিন ২/২০)।
ফল : বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)।