ত্রিদেশীয় টি-২০ সিরিজের পঞ্চম ও নিজের আর্ন্তজাতিক ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচকে ব্যাটিং নৈপুণ্য দিয়ে স্মরণীয় করে রাখলেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। ব্যাট হাতে ৪টি চার ও ৫টি ছক্কায় ৪২ বলে ৭১ রানের ইনিংস খেলেছেন মাসাকাদজা।
অধিনায়কের এমন ব্যাটিং নৈপুন্যে শক্তিশালী আফগানিস্তানকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে জিম্বাবুয়ে। যার মাধ্যমে টুর্নামেন্টে নিজেদের শেষ ম্যাচে প্রথম জয়ের স্বাদ পেল জিম্বাবুয়ে। আফগানদের বিপক্ষে দলকে প্রথম ও নিজের শেষ ম্যাচে জয় পেতে মহাগুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারায় খুশি ৩৬ বছর বয়সী হ্যামিল্টন মাসাকাদজা।
ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে মাসাকাদজা বলেন, ‘এভাবে ক্যারিয়ার শেষ করতে পেরে দারুণ লাগছে। ড্রেসিং রুমে এমন জয়ের ব্যাপারে কথা বলেছিলাম। আফগানিস্তানের জয় রথ থামাতে পেরে দারুণ অনুভূতি। ছেলেরা নিজের লড়াকু মনোভাব দেখিয়েছে। প্রথম ম্যাচ আমরা জিততে পারলে টুর্নামেন্টের চিত্র অন্যরকম হতো।’
নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে তিনি বলেন, ‘ক্যারিয়ারে অনেক উথান-পতন হয়েছে। দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি টি-২০ ম্যাচ খেলতে পেরেছি এবং গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ারের হাত থেকে অভিষেক ম্যাচের ক্যাপ নিতে পেরেছি। শ্রীলঙ্কার মাটিতে ও বিদেশের মাটিতে প্রথমবারের মত টেস্ট ম্যাচ জিততে পারি আমরা। এমন ক্যারিয়ারে খেলোয়াড়, কোচ, সাপোর্ট স্টাফ ও পরিবারের অবদান ছিল। তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।’
২০০১ সালের জুলাইয়ে টেস্ট ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখেন মাসাকাদজা। হারারেতে ওই ম্যাচে জিম্বাবুয়ের প্রতিপক্ষ ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্টেই চমক দেখান মাসাকাদজা। প্রথম ইনিংসে ৯ রানে থামলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ১১৯ রান করেন তিনি। তার ব্যাটিং নৈপুণ্যে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটি ড্র করে জিম্বাবুয়ে।
গত বছরের নভেম্বরে ঢাকায় বাংলাদেশের বিপক্ষে শেষ টেস্ট খেলেন মাসাকাদজা। ওই টেস্টের দুই ইনিংসে বড় স্কোর করতে পারেননি তিনি। ১৪ ও ২৫ রানের ইনিংস খেলেন মাসাকাদজা। ৩৮ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে ৫টি সেঞ্চুরি ও ৮টি হাফ-সেঞ্চুরিতে ৭৬ ইনিংসে ২২২৩ রান করেন তিনি। দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রানে চতুর্থস্থানে রয়েছেন এ ডান-হাতি ব্যাটসম্যান।
টেস্ট অভিষেকের বছরেই ওয়ানডে জার্সি পড়েন মাসাকাদজা। বুলাওয়েতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওই ম্যাচে ১১ রান করে আউট হন তিনি। চলতি বছরের জুলাইয়ে বেলফাস্টে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচটি মাসাকাদজার শেষ ওয়ানডে। শেষ ইনিংসে ২৩ রান করেন তিনি। জিম্বাবুয়ের হয়ে ২০৯টি ওয়ানডেতে ৫টি সেঞ্চুরি ও ৩৪টি হাফ-সেঞ্চুরিতে ২০৮ ইনিংসে ৫৬৫৮ রান করেন তিনি। দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রানে এই ফরম্যাটে চতুর্থস্থানে রয়েছেন মাসাকাদজা।
টেস্ট ও ওয়ানডে খেলার পাঁচ বছর পর টি-২০ অভিষেক ঘটে মাসাকাদজার। ২০০৬ সালের নভেম্বরে খুলনায় বাংলাদেশের বিপক্ষে ক্যারিয়ারে প্রথম টি-২০ ম্যাচ খেলতে নামেন তিনি। ওই ম্যাচে ২৪ বলে ৩৫ রান করেন মাসাকাদজা। এরপর ব্যাট হাতে ছোট ফরম্যাটে মারমুখী মেজাজে দলের প্রয়োজন মিটিয়েছেন তিনি। দেশের হয়ে টি-২০তে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার মালিকও মাসাকাদজা।
৬৬ ম্যাচের ক্যারিয়ারে ১১টি হাফ-সেঞ্চুরিতে ১৬৬২ রান তার। দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রানও মাসাকাদজার। ব্যাটিং গড় ২৬ এর কাছাকাছি ও স্ট্রাইক রেট ১১৭ দশমিক ৯৬।
বল হাতে মাঝে মাঝে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন মাসাকাদজা। টেস্টে ১৬টি, ওয়ানডেতে ৩৯টি ও টি-২০তে ২টি উইকেট রয়েছে এ ডান-হাতি মিডিয়াম পেসারের। তিন ফরম্যাটে যথাক্রমে ২৯টি, ৭১টি ও ২৫টি ক্যাচও নিয়েছেন মাসাকাদজা।
অধিনায়ক হয়েও দেশকে নেতৃত্ব দেয়ার কীর্তি রয়েছে মাসাকাদজার। ৩ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে ১টি জয় ও ২টি হারের স্বাদ দিয়েছেন তিনি। তবে ওয়ানডে ভাগ্য খারাপ তার। দলকে ২৫ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে কোন জয়ের স্বাদ দিতে পারেননি মাসাকাদজা। ২৪টি হার ও ১টি ম্যাচ পরিত্যক্ত ছিল তার অধীনে।
অবশেষে আজকের (শুক্রবার) ম্যাচে নেতৃত্ব দিতে নেমে জিম্বাবুয়ের হয়ে রেকর্ড গড়েছেন মাসাকাদজা। টি-২০তে জিম্বাবুয়েকে সর্বোচ্চ ১৯ ম্যাচে নেতৃত্ব দেয়ার রেকর্ড গড়েছেন তিনি। ফলে পেছনে পড়ে গেলেন এলটন চিগাম্বুরা। তিনি ১৮ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার অধীনে ২টি জয় ও ১৬টি ম্যাচ হারে জিম্বাবুয়ে। আর মাসাকাদজার অধীনে সর্বোচ্চ জয়ও পেয়েছে জিম্বাবুয়ে। ৫টি জয়, ১৩টি হার ও ১টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয় মাসাকাদজার নেতৃত্বে।
ব্যাটিং-বোলিং-নেতৃত্বগুণে জিম্বাবুয়েকে অনেক সাফল্যে অবদান রাখতে পারার তৃপ্তি নিয়ে ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন মাসাকাদজা।