জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই ত্রিদেশীয় টি-২০ সিরিজের ফাইনালে উঠলো বাংলাদেশ। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টুর্নামেন্টের চতুর্থ ও লিগের ফিরতি পর্বের প্রথম ম্যাচে বুধবার জিম্বাবুয়েকে ৩৯ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এ জয়ে ৩ খেলায় ২ জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে ওঠে ফাইনাল নিশ্চিত করে টাইগাররা। বাংলাদেশের এ জয়ে ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে গেল আফগানিস্তানেরও। কারণ ২ খেলায় ২ জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে আফগানরা। অন্যদিকে ৩ খেলায় সবক’টিতে হেরে লিগ পর্ব থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করা নিশ্চিত করলো জিম্বাবুয়ে।
জিতলেই ফাইনাল নিশ্চিত -এমন সমীকরণে খেলতে নেমে টস ভাগ্যে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। প্রথমে ওভারে ২ রানের বেশি নিতে পারেননি বাংলাদেশের দুই ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত ও লিটন দাস। বাঁ-হাতি স্পিনার আইনস্লে এনডিলোভুর প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে লিটনের বিপক্ষে লেগ বিফোরের আবেদন করেছিলেন জিম্বাবুয়ে। আম্পায়ার আউট দেননি। তাই রিভিউ নেয় জিম্বাবুয়ে। কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি। তাই শুরুতেই রিভিউ হারায় জিম্বাবুয়ে।
এরপরই ব্যাট হাতে মারমুখী মেজাজ দেখান লিটন। দ্বিতীয় ওভারে দু’টি চার, তৃতীয় ওভারে দু’টি ছক্কা ও ১টি চার হাঁকান তিনি। লিটনের পর নিজের প্রথম বাউন্ডারি মারেন শান্তও। কিন্তু নিজের ইনিংসটি বড় করতে পারেননি শান্ত। দলীয় ৪৯ রানে পঞ্চম ওভারের পঞ্চম বলে আউট হন অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা শান্ত।
৯ বলে ১১ রান করা শান্তকে ফিরিয়ে জিম্বাবুয়েকে প্রথম সাফল্য এনে দেন কাইল জার্ভিস। শান্তর বিদায়ের পরের ওভারে সাজঘরে ফেরেন আরেক ওপেনার লিটন। ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ২২ বলে ৩৮ রান করা লিটন লিটন শিকার হন ক্রিস এমপোফুর। মারমুখী ব্যাটিং করে পাওয়ার প্লেতে দলকে ৫৫ রানে পৌঁছে দেন লিটন।
দুই ওপেনারের বিদায়ে দলের হাল ধরার দায়িত্ব পড়ে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। কিন্তু জুটিতে বেশি দূর যেতে পারেননি তারা। মাত্র ১০ রান দলকে দিতে পারেন তারা। ৯ বলে ১০ রান করে বাংলাদেশের তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে উইকেট পতনের তালিকায় নাম লেখান সাকিব।
৬৫ রানে তৃতীয় উইকেট পতনের পর বাংলাদেশকে বড় জুটির স্বাদ দেন মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ। দেখেশুনে খেলতে থাকেন তারা। উইকেট আগলে রাখার প্রচেষ্টায় সফল হন এ জুটি। তাতে ১২তম ওভারেই শতরানে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। এরপরই রানের গতি বাড়াতে থাকেন মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ। ১৬ ওভারে ৩ উইকেটে ১৪২ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। ফলে শেষ ৪ ওভারে দলকে কোথায় নিয়ে যেতে পারেন মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ, সেটিই দেখার বিষয় ছিল।
কিন্তু ১৭তম ওভারের তৃতীয় বলে সাজঘরে ফিরেন মুশফিক। ভেঙে যায় ৫৫ বলে ৭৮ রান যোগ করা মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ জুটি। ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৬ বলে ৩২ রান করে ফিরেন মুশফিক।
মুশফিকের ফিরে যাওয়ার পর টি-২০ ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন মাহমুদউল্লাহ। ২৪ ইনিংস পর হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ পান তিনি। মাহমুদউল্লাহর হাফ-সেঞ্চুরির পরপরই থামতে হয় প্রথম ম্যাচের হিরো আফিফ হোসেনকে। ৮ বলে ৭ রান করেন তিনি।
আফিফের থেমে গেলেও বাংলাদেশকে বড় স্কোর এনে দেয়ার চেষ্টায় ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। দ্রুত রান তুলছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ ওভারের তৃতীয় বলে আউট হয়ে যান মাহমুদউল্লাহ। ৪১ বল মোকাবেলা করে ১টি চার ও ৫টি ছক্কায় নিজের ৬২ রানের ইনিংসটি সাজান তিনি।
মাহমুদউল্লাহকে শিকারের পরের বলে মোসাদ্দেককে বিদায় দিয়ে হ্যাটট্টিকের সুযোগ তৈরি করেন জার্ভিস। কিন্তু সেটি হতে দেননি বাঁ-হাতি বোলিং অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। পঞ্চম বলে ২ ও ইনিংসের শেষ বলে চার মেরে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৭৫ রানে বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন সাইফউদ্দিন। ২ বলে ৬ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। জিম্বাবুয়ের কাইল জার্ভিস ৪ ওভারে ৩২ রানে ৩ উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ১৭৬ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে বাংলাদেশ বোলারদের তোপের মুখে পড়ে জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরা। প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে জিম্বাবুয়ের ওপেনার ব্রেন্ডন টেইলরকে শূন্য রানে বিদায় দেন সাইফউদ্দিন। পরের ওভারে তিন নম্বরে নামা রেগিস চাকাভাকে শূন্য হাতে বিদায় দেন সাকিব।
২ রানের মধ্যে শূন্য রানে দুই ব্যাটসম্যান ফিরে গেলেও চার নম্বরে নামা সিন উইলিয়ামস শূন্যের কোটা পেরিয়ে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন। ২ রান করা উইলিয়ামসকে থামান বাংলাদেশের পেসার শফিউল ইসলাম। ফলে ৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে নিজেদের ইনিংসের শুরুতেই মহাবিপদে পড়ে জিম্বাবুয়ে।
শুরুতে চাপে পড়ে যাওয়া জিম্বাবুয়েকে পরবর্তীতে লড়াইয়ে ফেরানোর চেষ্টা করেন ওপেনার-অধিনায়ক হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ও টিনোটেন্ডা মুতোমবদজি। বড় জুটি গড়ার চেষ্টায় ছিলেন তারা। তাই দ্রুত রান তুলে বাংলাদেশ বোলারদের চাপে ফেলার পরিকল্পনা করেন এ জুটি। ২০ বলে ২৭ রান করার পর বিচ্ছিন্ন হন তারা। ১টি ছক্কায় ৯ বলে ১১ রান করা মুতোমবদজিকে থামিয়ে অভিষেক ম্যাচে উইকেট তুলে নেন লেগ-স্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লব।
ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচের প্রথম ওভারে উইকেট পেয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন আমিনুল। এরপর নিজের দ্বিতীয় ওভারেও উইকেটের স্বাদ পান তিনি। এবার তিনি শিকার করেন উইকেটে সেট হওয়া মাসাকাদজাকে। ৩টি চারে ২৫ বলে ২৫ রান করা মাসাকাদজাকে লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলেন বিপ্লব।
মাসাকাদজার বিদায়ের আগের ওভারে মারকুটে ব্যাটসম্যান রায়ার্ন বার্লকে ১ রানেই থামিয়ে দেন শফিউল। এমন অবস্থায় ৪৪ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে জিম্বাবুয়ে। এ অবস্থাতেও দলকে খেলায় ফেরানোর চেষ্টা করেন রিচমন্ড মুতুম্বামি। অন্যপ্রান্ত দিয়ে মুতুম্বামিকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন নেভিল মাদজিভা। তবে বেশিক্ষণ উইকেটে টিকে থাকতে পারেননি মাদজিভা। রান আউটের ফাঁদে পড়েন তিনি। ফলে নামের পাশে ৯ রান রেখে দলীয় ৬৬ রানে সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন মাদজিভা।
১৩ ওভারের মধ্যে ওপরের সারির সাত ব্যাটসম্যান ফিরে গেলেও হাল ছাড়েননি মুতুম্বামি। জার্ভিসকে নিয়ে চার-ছক্কার ফুলঝুড়ি ফুটিয়ে ৩০ বলে টি-২০ ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন মুতুম্বামি। দলের স্কোরও ছাড়িয়ে যায় শতরানে। কিন্তু হাফ-সেঞ্চুরি পর নিজের ইনিংসটি বড় করতে পারেননি মুতুম্বামি। অবশ্য ততক্ষণে ম্যাচ হাতছাড়া হয়ে যায় জিম্বাবুয়ের। শেষ ১২ বলে দরকার হয় ৫৬ রান।
১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে বাংলাদেশের শফিউলের বলে সাইফউদ্দিনকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরেন মুতুম্বামি। ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৩২ বলে ৫৪ রান করেন মুতুম্বামি। মুতুম্বামির পর জিম্বাবুয়ের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৭ রান করেন জার্ভিস। তাকে বিদায় দিয়ে নিজের ৩৩তম টি-২০ ম্যাচে ৫০তম উইকেট শিকারের স্বাদ নেন মোস্তাফিজ।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে টি-২০ ক্রিকেটে ৫০ উইকেট শিকারের মাইলফলক স্পর্শ করেন মোস্তাফিজ। জিম্বাবুয়ের ইনিংসের শেষ বলেও উইকেট শিকার করেছেন ফিজ। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ১৩৬ রানে অলআউট হয় জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশের শফিউল ৩৬ রানে ৩টি ও মোস্তাফিজ ৩৮ রানে ২ উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ১৭৫/৭, ২০ ওভার (মাহমুদউল্লাহ ৬২, লিটন ৩৮, জার্ভিস ৩/৩২)
জিম্বাবুয়ে : ১৩৬/১০, ২০ ওভার (মুতুম্বামি ৫৪, জার্ভিস ২৭, শফিউল ৩/৩৬)
ফল : বাংলাদেশ ৩৯ রানে জয়ী।