একটু পেছনে তাকালেই মনে পড়ে যেতে পারে ২০১৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঢাকায় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশের শোচনীয় অবস্থার কথা। সেই ম্যাচে বাংলাদেশ মাত্র ৯৮ রান করেই অলআউট হয়ে যায়। এবার সুযোগ এসেছে একই ভেন্যুতে ক্যারিবিয়দের হারিয়ে সেই ক্ষত শুকাবার।
টাইগারদের সিরিজ জয়টা হয়তো সময়ই বলে দেবে, কিন্তু সমীকরণ বলছে শনিবারের শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হবে সমানে সমানে লড়াই। কারণ এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ক্যারিবিয়দের সাথে টাইগারদের ১১ বার দেখা হয়। তার মধ্যে পাঁচটি বাংলাদেশ ও পাঁচটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ জয় পায়। আর একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়।
সম্প্রতি টি-টোয়েন্টিতে পরাশক্তি হওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভালো সময় যাচ্ছে না। এবছর ভারতে সাথে টি-টোয়েন্টি সিরিজে তিনটিতে হারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এর আগে নিজেদের মাটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলে ২-১ তেও সিরিজ হারে ক্যারিবিয়রা। বাংলাদেশের আগে করাচিতে সিরিজ খেলতে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই সিরিজেও হোয়াটওয়াশ হয় ক্যারিবিয়রা। ফলে সমীকরণ বলছে চলছি বছর বাজে সময় কাটাচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
তাই হয়তো বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-২০ সিরিজ জিতে অন্তত বছরটা শেষ করতে চাইবে ক্যারিবিয়রা। কিন্তু বাংলাদেশ কি ছেড়ে কথা বলবে?
তবে চলতি বছরের টি-টোয়েন্টি সমীকরণ যে বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলছে, তাও নয়। এবছর বাংলাদেশ আফগানিস্তানের মতো নবীন দলের কাছে টি-টোয়েন্টিতে ওয়াট ওয়াশ হয়। দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা ও ভারতে কাছে চলতি বছর টাইগাররা টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারে। শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এবছর একটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের রেকর্ড আছে বাংলাদেশের ঝুঁড়িতে। কিন্তু তাও কেন টাইগার অধিনায়ক মনে করছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের সম্ভাবনা আছে বাংলাদেশের?
সাকিব বলেছেন, ‘আমাদের সম্ভাবনা অবশ্যই আছে। কারণ ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়ে এই (মিশপুর) কন্ডিশনে আমাদের পরিচয় বেশি। আমাদের প্রতিটা খেলোয়াড়রা এই মাঠে অনেক ম্যাচ খেলেছে। তাই স্বাভাবিক ভাবেই এই কন্ডিশনটা আমাদের বেশ পরিচিত।’
হয়তো হোম কন্ডিশন বলেই এগিয়ে টাইগাররা। এছাড়াও রয়েছে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ কে কড়া জবার দিয়ে জয় তুলে নেওয়ার সুখের স্মৃতি। ফলে সব মিলিয়ে হয়তো বাংলাদেশ যে এগিয়ে আছে তা একটু হলেও আচঁ করতে পারছে সবাই।
শুধু কি তাই, ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য বড় আতঙ্ক হলো ‘টাইগার ম্পিনাররা’। যদিও তা সরসারি স্বীকার করছেন না ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্পিন পরামর্শক মুশতাক আহমেদ। তিনি বলছেন, ‘(ব্যাটসম্যানদের স্পিনে দুর্বলতা নিয়ে) আমি হতাশ নই। জানি তারা এখনো শিখছে। স্পিনারদের বিপক্ষে কীভাবে ভালো খেলতে হয়, সেটা শেখার মধ্যে আছে তারা। ছক্কা কিংবা ব্লক করতে হবে, এমন নয়। ভালো স্পিনের বিপক্ষে আপনাকে এক-দুই রান নেওয়াও শিখতে হবে। কিছু শট খেলতে জানতে হবে। এশিয়ান পিচে সুইপ একটা ভালো শট। যখন সুইপ খেলবেন, আপনার একটা অপশন বেড়ে গেল। এই ছেলেরা এখনো শেখার মধ্যে আছে। নেটে অনুশীলন করছে। তারা কঠোর পরিশ্রম করছে, আশা করি তারা দ্রুত শিখে যাবে।’
কিন্তু বাংলাদেশের স্পিন কোচ যোশি মনে করছেন স্পিন শক্তি দিয়েই শেষ ম্যাচে জয় তুলে নিবে টাইগাররা। ‘অনেক স্পিনার বেরিয়ে আসছে এটা দেখাটা দারুণ ব্যাপার। বিশেষ করে বাংলাদেশ সব সময়ই ভালো স্পিনার তৈরি করে, তাই না? নাঈম হাসানের কথাই ধরুন, অসাধারণ এক প্রতিভা, যাকে আমরা টেস্টে দেখেছি। আশা করি আরও স্পিনার উঠে আসবে। কেন আসবে না বলুন? যদি আশির দশকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলটার দিকে তাকান, তারা সব ফাস্ট বোলার নিয়ে খেলেছে। কোনো স্পিনার তাদের ছিল না। এখন আমাদের সময় স্পিনারদের নিয়ে খেলা। দিন শেষে আমাদের তো ম্যাচ জিততে হবে।’
শনিবার বিকেল ৫টায় শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজের টি-টোয়েন্টি সিরিজের অঘোষিত ফাইনাল। তবে এখন সময়ের অপেক্ষা। সময়ই বলে দিবে ২০১৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৯৮ রানে বাংলাদেশের অলআউটের সেই ক্ষত শুকাতে পারবে কি না?