টেস্টের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করলো স্বাগতিক ভারত। তিন ম্যাচের শেষ ম্যাচে সফররত বাংলাদেশকে ১৩৩ রানের ব্যবধানে হারিয়ে দিয়েছে ভারত। এ জয়ে ৩-০ ব্যবধানে শেষ হলো টি-টোয়েন্টি সিরিজ।
শনিবার (১২ অক্টোবর) হায়দরাবাদে টস জিতে প্রথম ব্যাট করতে নামে ভারত। ওপেনার সঞ্জু স্যামসনের সেঞ্চুরিতে ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ২৯৭ রান করেছে স্বাগতিক ভারত। টেস্ট প্লেয়িং কোন দেশের টি-টোয়েন্টিতে এটিই সর্বোচ্চ দলীয় রান। স্যামসন ৪৭ বলে ১১১ রান করেন।
জাববে ব্যাট করতে নেমে তাওহিদ হৃদয়ের অপরাজিত ফিফটির ইনিংসে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৬৪ রান করে বাংলাদেশ। ফলে ১৩৩ রানের বিশাল ব্যবধানে জয় তুলে নেয় ভারত।
এ ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছেন বাংলাদেশের মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। শেষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অবশ্য জ্বলে ওঠেনি সাইলেন কিলার হিসেবে খ্যাত বাংলাদেশের এ অভিজ্ঞ ক্রিকেটার।
প্রথমে ব্যাট করতে নামা ভারতকে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দেন দুই ওপেনার অভিষেক শর্মা ও স্যামসন। পেসার তাসকিন আহমেদের করা দ্বিতীয় ওভারের শেষ চার বলে চারটি বাউন্ডারি মারেন স্যামসন। তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে পেসার তানজিম হাসান সাকিবের বলে ৪ রান করে আউট হন অভিষেক।
দলীয় ২৩ রানে অভিষেকের বিদায়ের পর স্যামসনকে নিয়ে পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশ বোলারদের উপর তান্ডব চালান অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব। ষষ্ঠ ওভারে তানজিমের বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৯ রান নেন সূর্য। এতে পাওয়ার প্লেতে ১ উইকেটে ৮২ রান পায় ভারত। টি-টোয়েন্টিতে পাওয়ার প্লেতে এটিই সর্বোচ্চ রান টিম ইন্ডিয়ার। আগেরটি ছিল ২ উইকেটে ৮২ রান।
মাত্র ২২ বল খেলে সপ্তম ওভারেই টি-টোয়েন্টিতে তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরি করেন স্যামসন। অষ্টম ওভারে ১শতে পা রাখে ভারত। বাংলাদেশ স্পিনার রিশাদ হোসেনের করা দশম ওভারের শেষ পাঁচ বলে ৫টি ছক্কায় ৩০ রান নেন স্যামসন। ১০ ওভার শেষে ভারতের রান দাঁড়ায় ১ উইকেটে ১৫২। ইনিংসের অর্ধেক ওভার শেষে টি-টোয়েন্টিতে এটিই সর্বোচ্চ রান ভারতের।
১৩তম ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারি মেরে ৩৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টিতে প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান স্যামসন। এজন্য ৪০ বল খেলেছেন তিনি। ভারতের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরির পর মুস্তাফিজের বলে বিদায় নেন ১১টি চার ও ৮টি ছক্কায় ৪৭ বলে ১১১ রান করা এই ডান-হাতি ব্যাটার।
দ্বিতীয় উইকেটে ৭০ বলে ১৭৩ রানের জুটি গড়েছেন স্যামসন ও সূর্য। দ্বিতীয় উইকেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে কোন দলের এটিই সর্বোচ্চ রানের জুটি। স্যামসন ফেরার পরই টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলতে নামা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের শিকার হন সূর্য। ৮টি চার ও ৫টি ছক্কায় ৩৫ বলে ৭৫ রান করেন টিম ইন্ডিয়া অধিনায়ক।
১৪তম ওভারে ২শ স্পর্শ করে টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় দল হিসেবে দ্রুত দলীয় রান ডাবল-সেঞ্চুরিতে নেওয়ার নজির গড়ে ভারত। ২০৬ রানে সূর্য আউটের পর চতুর্থ উইকেটে ২৬ বলে ৭০ রান যোগ করেন রিয়ান পরাগ ও হার্ডিক পান্ডিয়া। এতে ৩শ রানের সংগ্রহের সম্ভাবনা জাগে ভারতের।
তবে শেষ দিকে তাসকিন ও তানজিম ৩ উইকেট নিলে বিশ্বের প্রথম টেস্ট প্লেয়িং দল হিসেবে ৩শ রানের মাইলফলক স্পর্শ করা থেকে বঞ্চিত হয় ভারত। ৩শর জন্য শেষ ওভারে ১৮ রানের দরকারে ২ উইকেট শিকার করে ১৫ রান দেন তানজিম।
শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ২৯৭ রান করে টিম ইন্ডিয়া। টি-টোয়েন্টিতে এটিই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় রান। তবে টেস্ট প্লেয়িং কোন দলের এটিই সর্বোচ্চ রান। নন টেস্ট প্লেয়িং দেশ হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে ৩ উইকেটে সর্বোচ্চ ৩১৪ রান করেছে নেপাল।
বল হাতে বাংলাদেশের তানজিম ৬৬ রানে ৩ উইকেট নেন। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের পক্ষে ইনিংসে সবচেয়ে বেশি রান দেওয়ার লজ্জার রেকর্ড গড়লেন তানজিম। এছাড়াও তাসকিন-মুস্তাফিজ ও মাহমুদউল্লাহ ১টি করে উইকেট নেন।
২৯৮ রানের পাহাড় সমান টার্গেটে খেলতে নেমে ভারতের পেসার মায়াঙ্ক যাদবের প্রথম বলেই সাজঘরে ফিরেন বাংলাদেশ ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন।
দ্বিতীয় উইকেটে মারমুখী ব্যাটিংয়ে ১৯ বলে ৩৫ রান যোগ করেন আরেক ওপেনার তানজিদ হাসান ও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। দু’জনের কেউই ২০ ঘরে পা রাখতে পারেননি। তানজিদ ১৫ ও শান্ত ১৪ রানে আউট হন।
৫৯ রানে তৃতীয় উইকেট পতনের পর বড় জুটি গড়ার চেষ্টা করেন লিটন দাস ও তাওহিদ হৃদয়। জুটিতে হাফ-সেঞ্চুরি হওয়ার পর বিচ্ছিন্ন হন তারা। ৮টি চারে ২৫ বলে ৪২ রান করা লিটনকে শিকার করেন ভারতের স্পিনার রবি বিষ্ণোই।
দলীয় ১১২ রানে লিটন আউটের পর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে মাহমুদউল্লাহ ৮, মাহেদী ৩ ও রিশাদ শূন্যতে আউট হন। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৬৪ রান পর্যন্ত যেতে পারে বাংলাদেশ।
টি-টোয়েন্টিতে তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরির ইনিংস খেলে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৩ রান করেন হৃদয়। তার ৪২ বলের অনবদ্য ইনিংসে ৫টি চার ও ৩টি ছক্কা ছিল। ভারতের বিষ্ণোই ৩টি ও মায়াঙ্ক ২ উইকেট নেন।