টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো সেমি-ফাইনালে পা রেখে আফগানিস্তানের স্বপ্ন ছিল ফাইনালে ওঠার। রশিদ-নবিদের সেই স্বপ্ন গুড়িয়ে প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠলো প্রোটিয়ারা। আসরের প্রথম সেমি-ফাইনালে আফগানিস্তানকে ৯ উইকেটে হারিয়ে দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বাংলাদেশ সময় ভোরে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং তোপে পতে ১১.৫ ওভারে মাত্র ৫৬ রানে গুটিয়ে যায় আফগানিস্তান। জবাবে ৮.৫ ওভারে এক উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার এটিই প্রথমবারের মতো ফাইনালে ওঠা। এছাড়া ১৯৯৮ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ের পর আইসিসির ইভেন্টে প্রথমবার ফাইনালে উঠলো প্রোটিয়ারা।
ত্রিনিদাদের ব্রায়ান লারা স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারেই চলতি বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ২৮১ রানের মালিক ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজকে হারায় আফগানিস্তান। দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার মার্কো জানসেনের শিকার হয়ে খালি হাদে ফিরেন গুরবাজ।
শুরুর ধাক্কা সামলে উঠার চেষ্টায় আরেক ওপেনার ইব্রাহিম জাদরানের সাথে ১২ রানের জুটির পর বিচ্ছিন্ন হন তিন নম্বরে নামা গুলবাদিন নাইব। ২টি চারে ৯ রান করা নাইবকে বোল্ড করেন জানসেন।
তৃতীয় ওভারে জোড়া আঘাতে আফগানিস্তানকে চাপে ফেল দেন দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার কাগিসো রাবাদা। ইব্রাহিমকে ২ ও মোহাম্মদ নবিকে শূণ্য হাতে বিদায় দেন রাবাদা।
পরের ওভারে আবারও দক্ষিণ আফ্রিকাকে উইকেট শিকারে মাতান জানসেন। নাঙ্গিয়াল খারোতিকে ২ রানে আউট করেন জানসেন।
রাবাদা ও জানসেনের সাথে উইকেট শিকারে নাম লেখান এনরিট নর্টি। সপ্তম ওভারে প্রথম আক্রমনে এসে আজমতুল্লাহ ওমরজাইকে ১০ রানে শিকার করেন নর্টি।
এতে ২৮ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় পড়ে যায় আফগানরা। বিপর্যয়ের হাত থেকে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন করিম জানাত ও অধিনায়ক রশিদ খান। দু’জনের ১৮ বলে ২২ রানের জুটিতে দশম ওভারের দ্বিতীয় বলে দলীয় ৫০ রান স্পর্শ করে আফগানিস্তান।
একই ওভারের তৃতীয় বলে জানাতকে ৮ রানে লেগ বিফোর আউট করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন স্পিনার তাবরাইজ শামসি। পঞ্চম বলে নূর আহমেদকে খালি হাতে বিদায় দেন শামসি। পরের ওভারে রশিদকে ৮ রানে শিকার করেন নর্টি।
৬ বলের ব্যবধানে শূণ্য রানে ৩ উইকেট হারিয়ে অলআউটের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় আফগানিস্তান। শেষ উইকেটে ফজলহক ফারুকির সাথে ৬ রানের জুটির পর শামসির বলে নাভিন উল হক ২ রানে লেগ বিফোর আউট হলে ১১.৫ ওভারে ৫৬ রানে গুটিয়ে যায় আফগানিস্তান।
টি-টোয়েন্টিতে এটিই সর্বনিম্ন দলীয় রান আফগানদের। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে সেমিফাইনালে সর্বনিম্ন রানে গুটিয়ে যাওয়ার লজ্জার রেকর্ড গড়লো আফগানিস্তান। দলের পক্ষে শুধুমাত্র ওমরজাই দুই অংক স্পর্শ করতে সক্ষম হন। এছাড়া অতিরিক্ত থেকে ১৩ রান আসে
বল হাতে দক্ষিণ আফ্রিকার জানসেন ৩ ওভারে ১৬ রানে এবং শামসি ১.৫ ওভারে ৬ রানে ৩টি করে উইকেট নেন। এছাড়া রাবাদা ও নর্টি ২টি করে উইকেট শিকার করেন। এবারের আসরে ১৩ উইকেট নিয়েছেন নর্টি। যা কোন বিশ্বকাপের এক আসরে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সর্বোচ্চ শিকার।
৫৭ রানের সহজ টার্গেটে খেলতে নেমে দ্বিতীয় ওভারে ধাক্কা খায় দক্ষিণ আফ্রিকা। টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী আফগানিস্তানের বাঁ-হাতি পেসার ফারুকির বলে বোল্ড হন ৫ রান করা ওপেনার কুইন্টন ডি কক। এই উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপের এক আসরে সর্বোচ্চ ১৭ শিকারের রেকর্ড গড়েছেন ফারুকি। এর আগে ২০২১ সালের আসরে ১৬ উইকেট নিয়েছিলেন শ্রীলংকার হাসারাঙ্গা ডি সিলভা।
দলীয় ৫ রানে ডি কক ফেরার পর তৃতীয় ওভারে নাভিনের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিন নম্বরে নামা দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক আইডেন মার্করাম। কিন্তু বল মার্করামের ব্যাটে লেগেছে কিনা, সেটি নিশ্চিত না হতে পারায় রিভিউ নেয়নি আফগানিস্তান। পরে রিপ্লেতে দেখা গেছে মার্করামের ব্যাট ছুঁয়ে বল জমা পড়ে গুরবাজের গ্লাভসে।
এরপর দ্বিতীয় উইকেটে ৪৩ বলে ৫৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে ৬৭ বল বাকী রেখে দক্ষিণ আফ্রিকার ফাইনাল নিশ্চিত করেন আরেক ওপেনার রেজা হেনড্রিক্স ও মার্করাম। বল বিবেচনায় টি-টোয়েন্টিতে এটিই সবচেয়ে বড় জয় দক্ষিণ আফ্রিকার।
৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৫ বলে হেনড্রিক্স অপরাজিত ২৯ এবং ৪টি বাউন্ডারিতে ২১ বলে অনবদ্য ২৩ রান করেন মার্করাম। দারুন বোলিংয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন জানসেন।