অস্ট্রেলিয়ার পর ভারতের কাছে হেরে যাওয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্ব কাপের সুপার এইট থেকেই বিদায়ের শঙ্কায় পড়লো বাংলাাদেশ। সুপার এইটে গ্রুপ-১এ নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতের কাছে ৫০ রানে হেরেছে টাইগাররা।
রোববার (২৩ জুন) সকালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে আফগানিস্তান হারলেই বিশ্ব কাপের সুপার এইট থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়ে যাবে বাংলাদেশের। আর যদি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আফগানিস্তান জয় পায়, তাহলে বিশ্ব কাপে টিকে থাকবে বাংলাদেশ। তখন শেষ ম্যাচে অনেক সমীকরণের সামনে পড়বে টাইগাররা। টানা দুই জয়ে সেমিফাইনালে এক পা দিয়ে রাখলো ভারত।
এ ম্যাচে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৯৬ রান করে ভারত। জবাবে ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৪৬ রান করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ।
শনিবার (২২ জুন) অ্যান্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্বান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ব্যাট হাতে নেমে ৩ ওভারে ২৯ রান তুলে ভারতকে ভালো শুরু এনে দেন দুই ওপেনার অধিনায়ক রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি।
চতুর্থ ওভারে দ্বিতীয়বারের মত বোলিংয়ে এসে ভারতের উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গেন সাকিব। ছক্কা মারতে গিয়ে মিড অফে জাকের আলিকে ক্যাচ দেন ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ১১ বলে ২৩ রান করা রোহিত। এতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম বোলার হিসেবে ৫০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন সাকিব।
দলীয় ৩৯ রানে রোহিত ফেরার ভারতের রানের চাকা ঘুড়িয়েছেন কোহলি ও ঋসভ পান্থ। ৮ ওভারে দলের রান ৭১এ নেন দু’জনে। নবম ওভারে বাংলাদেশকে ডাবল উইকেটে মাতান পেসার তানজিম হাসান। প্রথম বলে কোহলিকে বোল্ড করেন তিনি। ১টি চার ও ৩টি ছক্কায় ২৮ বলে ৩৭ রান করেন অফ ফর্মে থাকা কোহলি।কোহলির বিদায়ে ক্রিজে এসেই প্রথম বলে ছক্কা মারেন সূর্যকুমার যাদব। তবে পরের বলে আউটসাইড-এজে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন সূর্য।
৭৭ রানে ৩ উইকেট পতনের পর বাংলাদেশের বোলারদের উপর চড়াও হন পান্থ। মুস্তাফিজের এক ওভারে ১৪ ও রিশাদকে ১টি করে চার-ছক্কা মারেন তিনি। কিন্তু ১২তম ওভারে রিশাদের বলে রিভার্স সুইপ করে শর্ট থার্ডে ক্যাচ দেন পান্থ। আউট হওয়ার আগে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ২৪ বলে ৩৬ রান করেন তিনি।
দলীয় ১০৪ রানে পান্থ ফেরার পর ভারতকে বড় সংগ্রহের পথ তৈরি করে দেন শিবম দুবে ও হার্ডিক পান্ডিয়া। পঞ্চম উইকেটে ৩৪ বলে ৫৩ রানের জুটি গড়েন তারা। ৩টি ছক্কায় ২৪ বলে ৩৪ রান করা দুবে আউট হলেও ইনিংসের শেষ পর্যন্ত খেলে ভারতকে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৯৬ রানের সংগ্রহ এনে দেন পান্ডিয়া।
ইনিংসের শেষ বলে চার মেরে টি-টোয়েন্টিতে ক্যারিয়ারে চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন পান্ডিয়া। ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় ২৭ বলে ৫০ রানে অপরাজিত থাকেন পান্ডিয়া। বাংলাদেশের তানজিম ৩২ রানে ও রিশাদ ৪৩ রানে ২টি করে উইকেট নেন। ৩৭ রানে ১ উইকেট নিয়েছেন সাকিব।
১৯৭ রানের টার্গেটে সাবধানে শুরু করে ৪ ওভারে ২৭ রান তুলে বাংলাদেশ। পঞ্চম ওভারের দ্বিতীয় বলে পুল করে ছক্কা মারেন লিটন দাস। পরের ডেলিভারিতে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে আউট হন ১টি করে চার-ছক্কায় ১০ বলে ১৩ রান করা লিটন। দলীয় ৩৫ রানে ভাঙ্গে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি। আগের চার ম্যাচে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটিতে রান উঠেছিলো- ১,৯,৩,০ ও ০।
লিটনকে হারিয়ে পাওয়ার প্লেতে ৪২ রান পায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় উইকেটে ওপেনার তানজিদ হাসানকে নিয়ে ৩১ বলে ৩১ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক শান্ত। দশম ওভারে তানজিদকে লেগ বিফোর আউটে জুটি ভাঙেন ভারতের স্পিনার কুলদীপ যাদব। একবার জীবন পেয়ে ৩১ বলে ৪টি চারে ২৯ রান করেন তানজিদ।
নিজের পরের ওভারে আবারও বাংলাদেশ শিবিরে আঘাত হানেন কুলদীপ। ৪ রান করে লেগ বিফোর আউট হন তাওহিদ হৃদয়। হৃদয়ের বিদায়ের পর ক্রিজে এসে ১টি করে চার-ছক্কায় ভালো কিছুর ইঙ্গিত দেন সাকিব। কিন্তু কুলদীপের বলে আবারও উড়িয়ে মারতে গিয়ে কভারে রোহিতকে ক্যাচ দিয়ে ১১ রানে থামেন সাকিব।
সাকিবের পর দলের রান ১শ পার করে দিয়ে বুমরাহর প্রথম শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরেন শান্ত। ১টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৩২ বলে ৪০ রান করেন তিনি। নিজের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ৪৩ ইনিংসে এই প্রথম এক ইনিংসে ৩টি ছক্কা মারলেন শান্ত।
শান্তর পর ১ রানে আউট হন জাকের আলি। এতে ১১০ রানে ৬ উইকেট পতনে হারের মুখে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ। ৪ উইকেট হাতে নিয়ে শেষ ২৩ বলে ৮৭ রান দরকার পড়ে বাংলাদেশের। ঐসময় আস্কিং রেট ২২ ছুঁয়ে ফেলে।
শেষদিকে রিশাদের ব্যাটিং ঝড়ের পরও হার এড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৪৬ রান করে হারের লজ্জা পায় টাইগাররা। ১টি চার ও ৩টি ছক্কায় ১০ বলে ২৪ রান করেন রিশাদ। ভারতের কুলদীপ ৩ উইকেট নেন। ব্যাট হাতে ২৭ বলে অপরাজিত ৫০ রান ও ১ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন ভারতের হার্ডিক পান্ডিয়া।