দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাতে শেষ ৩ ওভারে ৬ উইকেট হাতে নিয়ে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ২০ রান। তবে শেষটা ভালো করতে পারলো না টাইগার ব্যাটাররা। ৩ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৫ রানের বেশি তুলতে পারেনি। বিশ্বকাপ মঞ্চে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে জয়ের সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করলো টাইগাররা।
দক্ষিণ আফ্রিকার ছুঁড়ে দেওয়া ১১৪ রানের জবাবে ২০ ওভার শেষে ৭ উইকেটে ১০৯ রান করতে পারে বাংলাদেশ। ফলে জয়ের দ্বারপ্রান্তে গিয়েও মাত্র ৪ রানের ব্যবধানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে নবম দেখাতেও জয় বঞ্চিত থাকলো টাইগাররা।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে হারের স্বাদ নেওয়ায় ২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে আছে টাইগাররা। নিজেদের প্রথম তিন ম্যাচ জিতে ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে সুপার এইট নিশ্চিত করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
সোমবার (১০ জুন) বাংলাদেশ সময় দিনগত রাতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টস হেরে প্রথমে ফিল্ডিংয়ে নামে বাংলাদেশ।
ইনিংসের প্রথম ওভার করতে আসা বাংলাদেশের তানজিম হাসানের দ্বিতীয় বলে ছক্কা ও তৃতীয় বলে চার মারেন দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনার কুইন্টন ডি কক। তবে ওভারের শেষ বলে আরেক ওপেনার রেজা হেনড্রিক্সকে খালি হাতে বিদায় দেন তানজিম।
নিজের দ্বিতীয় ওভারেও উইকেট শিকারের আনন্দে মাতেন তানজিম। ১১ বলে ১৮ রান করা ডি কককে বোল্ড করেন তানজিম। ইনিংসে চতুর্থ ওভারে উইকেট শিকারের তালিকায় নাম তোলেন তাসকিন । দারুন এক ডেলিভারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক আইডেন মার্করামকে (৪) বোল্ড করেন তাসকিন।
নিজের প্রথম দুই ওভারে উইকেট নেওয়া তানজিম তার ঝলক অব্যাহত রাখেন। তৃতীয় ওভারে সাকিব আল হাসানের ক্যাচে মিডল অর্ডার ব্যাটার ট্রিস্টান স্টাবসকে খালি হাতে সাজঘরে ফেরত পাঠান তানজিম। পঞ্চম ওভারে দলীয় ২৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। এই নিয়ে চতুর্থবার বিশ^কাপে পাওয়ার প্লেতে প্রতিপক্ষের ৪ উইকেট শিকার করলো বাংলাদেশ।
এ অবস্থায় জুটি গড়ার চেষ্টা করেন হেনরিচ ক্লাসেন ও ডেভিড মিলার। উইকেট ধরে খেলে ১০ ওভার শেষে দলের রান ৫৭তে নেন তারা। ততক্ষণে উইকেটে সেট হয়ে যান ক্লাসেন ও মিলার। ১১তম ওভারে প্রথমবারের মত বোলিং আক্রমণে আসেন স্পিনার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
দলীয় ১০৬ রানের মধ্যে ক্লাসেন ও মিলার ফেরার পর ইনিংসের বাকি ১০ বলে ৭ রানের বেশি যোগ করতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১১৩ রানের সংগ্রহ পায় প্রোটিয়ারা।
৪ ওভার করে বল করে তানজিম ১৮ রানে ৩টি ও তাসকিন ১৯ রানে ২ উইকেট নেন। ৮ ম্যাচের টি-টোয়েন্টিতে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেন তানজিম। আগের ম্যাচের হিরো রিশাদ ৩২ রানে নেন ১ উইকেট। এ ছাড়া মোস্তাফিজুর রহমান কোন উইকেট না পেলেও ৪ ওভার বোলিং করে মাত্র ১৮ রান দিয়েছেন।
১১৪ রানের টার্গেটে দ্বিতীয় ওভারের প্রথম দুই বলে বাউন্ডারি আদায় করে নেন ওপেনার তানজিদ হাসান। পেসার কাগিসো রাবাদার করা ঐ ওভারের শেষ বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ৯ বলে ৯ রান করা তানজিদ।
দ্বিতীয় উইকেটে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন আরেক ওপেনার ও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত এবং তিন নম্বরে নামা লিটন দাস। দু’জনের ২৫ বলে ২০ রানের জুটিতে পাওয়ার প্লেতে ১ উইকেটে ২৯ রান পায় বাংলাদেশ।
তবে সপ্তম ওভারের প্রথম বোলিং আক্রমনে এসে প্রথম ডেলিভারিতেই লিটনকে বিদায় করেন স্পিনার কেশব মহারাজ। কভারে মিলারকে ক্যাচ দেওয়ার আগে ৯ রান করেন লিটন। লিটন ফেরার পর ব্যাটিংয়ে নেমে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি সাকিব। পেসার এনরিচ নর্টির বলে পুল করতে গিয়ে ৩ রানে মিড উইকেটে মার্করামকে ক্যাচ দেন তিনি।
সাকিবের মত নর্টির শর্ট বলে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরেন শান্তও। ১টি ছক্কায় ২৩ বলে ১৪ রান করেন টাইগার অধিনায়ক। এতে দশম ওভারে ৫০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। দলকে চাপমুক্ত করতে হাল ধরেন তাওহিদ হৃদয় ও মাহমুদউল্লাহ। ১২তম ওভারের পঞ্চম বলে ব্যক্তিগত ৬ রানে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে জীবন পান মাহমুদউল্লাহ।
জীবন পেয়ে হৃদয়কে সাথে নিয়ে বাংলাদেশকে লড়াইয়ে ফেরান মাহমুদউল্লাহ। দেখেশুনে খেলে ৪৫ বলে ৪৪ রানের জুটি গড়েন দু’জনে। ১৮তম ওভারে রাবাদার বলে আম্পায়ারস কলে লেগ বিফোর আউট হন ২টি করে চার-ছক্কায় ৩৪ বলে ৩৭ রান করা হৃদয়।
হৃদয় যখন ফিরেন তখন জিততে ১৭ বলে ২০ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের। ১৮তম ওভারে ২ ও ১৯তম ওভারে ৭ রান আসে। এতে শেষ ওভারে জয়ের জন্য ১১ রানের সমীকরণ পায় বাংলাদেশ।
মহারাজের করা শেষ ওভারের প্রথম দুই বলে চার রান আসে। তৃতীয় বলে ব্যক্তিগত ৮ রানে আউট হন জাকের। চতুর্থ বলে ১ রান এলে পরের ডেলিভারিতে বাউন্ডারি সীমানায় লাফ দিয়ে মাহমুদউল্লাহর ক্যাচ নেন মার্করাম। শেষ হয় মাহমুদউল্লাহর ২৭ বলে ২০ রানের ইনিংস, শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের স্বপ্ন।
শেষ বলে ৬ রানের প্রয়োজনে তাসকিন ১ রানের বেশি নিতে না পারলে হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় বাংলাদেশকে। ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১০৯ রান করে টাইগাররা। দক্ষিণ আফ্রিকার মহারাজ ৩টি, রাবাদা-নর্টি ২টি করে উইকেট নেন।
৪৪ বলে ৪৬ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরা হয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ক্লাসেন।