বিশ্বকাপের আগে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে হারের লজ্জা পেল বাংলাদেশ। অন্যদিকে, বাংলাদেশকে লজ্জার হারে ডুবিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ইতিহাস গড়লো যুক্তরাষ্ট্র। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যেকোন ফরম্যাটে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম বারের মতো খেলতে নেমেই জয়ের ইতিহাস গড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বকাপ প্রস্তুতির সিরিজ হার দিয়ে শুরু করে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়লো বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার (২১ মে) বাংলাদেশ সময় রাতে টসের হেরে প্রথমে ব্যাট করে তাওহিদ হৃদয়ের হাফ-সেঞ্চুরিতে ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৫৩ রান করে বাংলাদেশ। ৪৭ বলে ৫৮ রান করেন হৃদয়।
বোলিংয়ে ৯৪ রানে যুক্তরাষ্ট্রের ৫ উইকেট শিকার করে জয়ের স্বপ্ন দেখছিল বাংলাদেশ। তবে ষষ্ঠ উইকেটে ২৮ বলে অবিচ্ছিন্ন ৬২ রান যোগ করে যুক্তরাষ্ট্রকে অবিস্মরণীয় জয়ের স্বাদ দেন নিউজিল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার কোরি অ্যান্ডারসন ও ভারতীয় বংশোদ্ভুত হারমিত সিং।
ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশকে ২৭ বলে ৩৪ রানের সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার লিটন দাস ও সৌম্য সরকার। তবে পঞ্চম ও ষষ্ঠ ওভারে দুই ওপেনারের বিদায়ের পর পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেটে ৩৭ রানের বেশি তুলতে পারেনি টাইগাররা।
১টি করে চার-ছক্কায় ১৫ বলে ১৪ রান করে যুক্তরাষ্ট্রের পেসার জসদীপ সিংয়ের শিকার হন দ্বিতীয় ওভারে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে জীবন পাওয়া লিটন। অফ-স্পিনার স্টিভেন টেইলরের বলে আউট হন ৩টি বাউন্ডারিতে ১৩ বলে ২০ রান করা সৌম্য।
তিন নম্বরে নেমে সুবিধা করতে পারেননি অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। টেইলের দ্বিতীয় শিকার হওয়ার আগে ১১ বলে ৩ রান করেন তিনি। শান্তর বিদায়ের কিছুক্ষণ পর ব্যক্তিগত ৬ রানে রান আউটের ফাঁদে পড়েন সাকিব আল হাসান। এতে ১২তম ওভারে ৬৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ।
এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন হৃদয় ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ১৩তম ওভারে হৃদয়ের দুই ছক্কায় ১৬ রান পায় বাংলাদেশ। ১৫তম ওভারে ১শ রান স্পর্শ করে টাইগাররা। ১৭তম ওভারে মাহমুদউল্লাহর ১টি করে চার-ছক্কায় ১৫ রান জমা পড়ে বাংলাদেশের ঝুলিতে।
১৮তম ওভারে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরির পূর্ণ করেন ৪০ বল খেলা হৃদয়। ১৯তম ওভারের চতুর্থ বলে সৌরভ নেত্রাভালকার শিকার হন ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ২২ বলে ৩১ রান করা মাহমুদউল্লাহ। পঞ্চম উইকেটে হৃদয়-মাহমুদউল্লাহ ৪৭ বলে ৬৭ রানের জুটি গড়েন।
ইনিংসের শেষ ৮ বলে ১৮ রান যোগ করে বাংলাদেশকে লড়াকু পুঁজি এনে দেন হৃদয় ও জাকের আলি। ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৫৩ রান করে বাংলাদেশ। ইনিংসের শেষ বলে পেসার আলি খানের বলে আউট হওয়ার আগে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৭ বলে ৫৮ রান করেন হৃদয়। ২টি চারে ৫ বলে অপরাজিত ৯ রান করেন জাকের। যুক্তরাষ্ট্রের টেলর ২ উইকেট নেন।
১৫৪ রানের জবাবে ৩ ওভারে ২৭ রানের সূচনা পায় যুক্তরাষ্ট্র। চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে ব্যক্তিগত ১২ রানে রান আউট হন যুক্তরাষ্ট্রের অধিনায়ক মোনাঙ্ক প্যাটেল। দ্বিতীয় উইকেটে ৩২ বলে ৩৮ রানের জুটি গড়ে যুক্তরাষ্ট্রকে লড়াইয়ে রাখেন টেলর ও অ্যান্ড্রিস গাউস। ৪টি চারে ১৮ বলে ২৩ রান করা গাউসকে শিকার করে বাংলাদেশকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন স্পিনার রিশাদ।
এরপর ১২তম ওভারে জোড়া উইকেট তুলে নেন মুস্তাফিজ। ১টি করে চার-ছক্কায় টেলর ২৯ বলে ২৮ রান এবং জোন্স ৪ রানে ফিজের শিকার হন। যুক্তরাষ্ট্রের রান ১শ হবার আগে পঞ্চম উইকেট শিকার করেন শরিফুল। ১০ রানে নিতীশকে বিদায় দেন শরিফুল।
৯৪ রানে ৫ উইকেট পতনের সময় যুক্তরাষ্ট্রের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৩১ বলে ৬০ রান। মুস্তাফিজের করা ১৭তম ওভারে হারমিতের দুই ছক্কায় ১৭ রান পায় যুক্তরাষ্ট্র। এতে শেষ ৩ ওভারে ৩৮ রান দরকার পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের।
শরিফুলের করা ১৮তম ওভারে ১৪ এবং মোস্তাফিজের করা ১৯তম ওভারে ১৫ রান নেন হারমিত ও অ্যান্ডারসন। ফলে শেষ ওভারে জয়ের জন্য ৯ রানের সমীকরণ পায় যুক্তরাষ্ট্র। মাহমুদউল্লাহর করা শেষ ওভারের প্রথম বলে অ্যান্ডারসন ছক্কা ও তৃতীয় বলে চার মেরে যুক্তরাষ্ট্রকে ঐতিহাসিক জয় এনে দেন হারমিত।
ষষ্ঠ উইকেটে হারমিত ও অ্যান্ডারসনের ২৮ বলে অবিচ্ছিন্ন ৬২ রানের জুটিতেই জয়ের স্বাদ পায় যুক্তরাষ্ট্র। ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হওয়া হারমিত ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় ১৩ বলে অপরাজিত ৩৩ এবং ২টি ছক্কায় ২৫ বলে অনবদ্য ৩৪ রান করেন অ্যান্ডারসন। বাংলাদেশের মুস্তাফিজ ৪ ওভারে ৪১ রানে ২ উইকেট নেন।