হ্যাঁ, হলো; ওয়ানডে ম্যাচ জয়ের পর এবার টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও টাইগারদের হাতে ধরা দিলো স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের স্বাদ। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় তুলে নিলো বাংলাদেশ। এ জয়ে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবারেরর মতো টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জেতার ইতিহাস রচনা করলো টাইগাররা। এর আগে চলমান সফরেই ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচ জয় পেয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বাধীণ বাংলাদেশ।
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) নেপিয়ারে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং বেছে নেয় বাংলাদেশ। নিজেদের মাঠে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই চপে পড়ে নিউজিল্যান্ড। তবে জেমস নিশাম ৪৮ রানের ইনিংসে ভর করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৩৪ রানের সংগ্রহ গড়েছিল নিউজিল্যান্ড।
দেশের মাটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে নিউজিল্যান্ডের এটিই সর্বনিম্ন রান। বাংলাদেশের পক্ষে বল হাতে শরিফুল ইসলাম ৩টি এবং মাহেদী হাসান ও মোস্তাফিজুর রহমান ২টি করে উইকেট শিকার করেছেন।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৮ বল বাকি থাকতেই ৫ উইকেটে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের এটি প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জয়।
অফ স্পিনার মাহেদি হাসানের হাতে বল তুলে দেন টাইগার অধিনায়ক। প্রথম ওভারেই বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেন প্রায় ১৬ মাস পর টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা মাহেদি। রানের খাতা খোলার আগেই নিউজিল্যান্ডের ওপেনার টিম সেইফার্ট শিকার হন মাহেদির। দ্বিতীয় ওভারে নিউজিল্যান্ড শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন বাংলাদেশের পেসার শরিফুল ইসলাম। ওভারের দ্বিতীয় বলে স্লিপে সৌম্য সরকারকে ক্যাচ দিয়ে ১ রান করে ফিরেন ওপেনার ফিন অ্যালেন।
অ্যালেনের বিদায়ের উইকেটে এসে মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই লেগ বিফোর আউট হন গ্লেন ফিলিপস। নন-স্ট্রাইকের আম্পায়ার আউট না দিলে রিভিউ নিয়ে সাফল্য পায় বাংলাদেশ। সেইফার্টের মত খালি হাতে ফিরেন ফিলিপসও। পর পর দুই বলে অ্যালেন ও ফিলিপসকে শিকার করে হ্যাটট্টিকের সম্ভাবনা তৈরি করেন শরিফুল। তবে বাংলাদেশি বোলারকে হ্যাটট্টিকের স্বাদ নিতে দেননি মার্ক চাপম্যান।
দ্বিতীয় ওভারে ১ রানে ৩ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। টি-টোয়েন্টিতে এত কম রানে ৩ উইকেট হারানোর প্রথম ঘটনা কিউইদের। শুরুর ধাক্কা সামলে উঠতে বাংলাদেশ বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন চাপম্যান ও ড্যারিল মিচেল। জুটিতে ১৯ বলে ১৯ রান যোগ হওয়ার পর বাংলাদেশকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন মাহেদি। ২টি চারে ১৪ রান করা মিচেলকে বোল্ড করেন মাহেদি। এতে পাওয়ার প্লেতে ৩৬ রানে ৪ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড।
১৬তম ওভারে রিশাদের বলে ১টি করে চার-ছক্কায় ১১ রান তুলে দলের স্কোর ১শতে নেন নিশাম। পরের ওভারে মোস্তাফিজুর রহমানের দ্বিতীয় ডেলিভারিতে ছক্কা মারার পরের বলে সাজঘরে ফিরেন নিশাম। ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় ২৯ বলে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৮ রান করেন নিশাম। দলীয় ১১০ রানে নিশাম ফেরার পর শেষ দিকে এডাম মিলনের ২টি ছক্কায় ১২ বলে অপরাজিত ১৬ ও টিম সাউদির ৮ রানের উপর ভর করে লড়াকু সংগ্রহ পায় নিউজিল্যান্ড। ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৩৪ রান করে কিউইরা। দেশের মাটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে এটিই সর্বনিম্ন রান নিউজিল্যান্ডের।
বাংলাদেশের শরিফুল ৪ ওভারে ২৬ রানে ৩টি, ৪ ওভার করে বল করে মাহেদি ১৪ রানে ও মুস্তাফিজ ১৫ রানে ২টি করে উইকেট নেন। ১টি করে উইকেট শিকার করেন তানজিম-রিশাদ।
১৩৫ রানের টার্গেট দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। প্রথম ওভারে ছক্কা মেরে রানের খোলা ওপেনার রনি তালুকদারকে (১০) শিকার করেন পেসার এডাম মিলনে। উইকেটে এসেই নিউজিল্যান্ডর বোলারদের উপর চড়াও হয়ে ৪টি চার আদায় করে নেন অধিনায়ক শান্ত। তবে পঞ্চম ওভারে নিশামের বলে স্যান্টনারকে ক্যাচ দিয়ে ১৪ বলে ১৯ রান নিয়ে সাজঘরে ফিরেন শান্ত। পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেটে ৪২ রান পায় বাংলাদেশ।
স্পিনার ইশ সোধির করা সপ্তম ওভারে চার নম্বরে নামা সৌম্যর ১টি করে চার-ছক্কায় ১৪ রান পায় বাংলাদেশ। দারুণ শুরু করে বড় ইনিংস ইনিংস খেলতে পারেননি সৌম্য। নবম ওভারে পেসার বেন সিয়ার্সের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৫ বলে ২২ রান করেন সৌম্য।
চতুর্থ উইকেটেও তাওহিদ হৃদয়ের সাথে ২৯ রান তুলে বাংলাদেশকে লড়াইয়ে রাখেন লিটন। বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুলে ১৮ বলে ১৯ রান করে স্যান্টনারের শিকার হন হৃদয়। এরপর দ্রুত ফিরেন নতুন ব্যাটার আফিফ হোসেন। ৬ বলে ১ রান করে আফিফ আউট হলে ৯৭ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ওই অবস্থায় ৫ উইকেট হাতে নিয়ে ৩৩ বলে ৩৮ রান দরকার পড়ে টাইগারদের।
১৫তম ওভারের শেষ বলে লেগ বিফোর আউট হলেও রিভিউ নিয়ে বাঁচেন ২২ রানে থাকা লিটন। এরপর শেষ ৩ ওভারে ২৪ রানের দরকার পড়ে বাংলাদেশের। সিয়ার্সের করা ১৮তম ওভারে লিটনের ১টি করে চার-ছক্কায় ১৪ রান ওঠে। শেষ ২ ওভারে জিততে ১০ রানের সমীকরণ পায় টাইগাররা।
মিলনের করা ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ছক্কা মারেন মাহেদি। পরের বলে ২ ও তৃতীয় ডেলিভারিতে ৪ মেরে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জয় নিশ্চিত করেন মাহেদি। জুটিতে ২৫ বলে অবিচ্ছিন্ন ৪০ রান তুলেন লিটন-মাহেদি। এক প্রান্তে আগলে দলের জয়ে অবদান রাখা লিটন ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৬ বলে ৪২ রানে অপরাজিত থাকেন। ১টি করে চার-ছক্কায় ১৬ বলে অপরাজিত ১৯ রান এবং ১৪ রানে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন মাহেদি।